শীতে জবুথবু সারাদেশ
* তিন জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ * জানুয়ারিতে ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রার পূর্বাভাস * ভোগান্তিতে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

পৌষ মাস এখনো আসেনি। এরপরেও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে শীত। ঢাকায় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকলেও উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশেই ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠাণ্ডনামা করছে। সারাদেশে শীত বাড়তে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। দেশের পঞ্চগড়, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এ ছাড়া জানুয়ারিতে তাপমাত্রা কমে ৩ ডিগ্রিতে নামার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। মৌসুমের প্রথম এই মৃদু শৈত্য প্রবাহ আগামী ৭২ ঘণ্টা চলমান থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদের সই করা সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ সব তথ্য জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দু-এক দিনের মধ্যেই বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। এ ছাড়া ঘন কুয়াশা থাকবে আরো অন্তত এক সপ্তাহ। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, আগামী ১৬ তারিখ থেকে কুয়াশা আরো বাড়বে, থাকবে অন্তত এক সপ্তাহ। দু-একদিনের মধ্যেই বয়ে যেতে পারে শৈত্যপ্রবাহ। এ কয়দিন দুপুরের আগে সূর্যের দেখা পাওয়া যাবে না। এদিকে দেশের উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর এবং রাজশাহীসহ অন্যান্য জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা দেখা দিয়েছে আগে থেকেই। সেই সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোও কাঁপছে প্রবল শীতে। রংপুর জেলার আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার শীত বেশি পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ ভাগ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বয়ে যেতে পারে বেশ কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ। এদিকে নওগাঁয় শীতের তীব্রতা বাড়ার প্রভাব কৃষির ওপর পড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে আলু, সরিষা, বোরো বীজতলাসহ বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে চলতি মৌসুমের রোপা আমন কাটা আর মাড়াইয়ের কাজ। এ অবস্থায় ফসল রক্ষায় আলু, সরিষা, পেঁয়াজসহ রবিশস্য রক্ষায় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।’ এ ছাড়া ইরি-বোরো বীজতলা ঘন কুয়াশার জন্য পলিথিনে মুড়িয়ে বীজতলা পানি দিয়ে ডুবিয়ে রাখার পরামর্শ দেন এই কৃষি কমকর্তা। সারাদেশে শীত বাড়তে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। সকাল সকাল ঘর থেকে বের হওয়া ও কাজ পাওয়া কষ্টকর হয়ে গেছে অনেকের জন্য। স্থানীয় এক অটোরিকশা বলেন, এই শীতে অটোরিকশা নিয়ে বেড়ে হতে হচ্ছে সংসার চালানোর জন্য। কোনোরকমে অটোরিকশা নিয়ে বের হলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।’ অন্যদিকে গোপালগঞ্জের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায়ও গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে এই জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এটি। সীমান্তবর্তী এই জেলায় এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে করে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত। ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কনকনে ঠান্ডায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। ঠান্ডায় গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্ররা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে সমগ্র জেলা। গতকাল সকাল ৭টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকাল ছিল ১৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চার দিন ধরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় দেখা মেলেনি সূর্যের। অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা।
