১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা
দণ্ড কমলো ও খালাস পেলেন যারা
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বিচারিক আদালত ১৪ আসামির প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। এরপর বিধি অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। আর কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে গতকাল বুধবার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এতে সাবেক সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরসহ কয়েকজনকে খালাস ও কয়েকজনকে দণ্ড কমানো হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। আসামি পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী মোহাম্মদ আহসান ও মোহাম্মদ শিশির মনির। এছাড়া পলাতক আসামির পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হাসনা বেগম। রায় ঘোষণার পর লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এ মামলায় ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। তাদের ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে আজকে রায় হয়েছে। চারজন মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে খালাস পেয়েছেন। পলাতক নুরুল আমিনও খালাস পেয়েছেন। এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করায় মতিউর রহমান নিজামী ও আব্দুর রহিমের আপিল অ্যাবেটেড (বাদ) হয়ে গেছে। বাকি ছয়জনকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। ভারত চলে যাওয়া পরেশ বড়ুয়াকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন।
লুৎফুজ্জামান বাবরের বিষয়ে শিশির মনির বলেন, দ্বিতীয় তদন্তের ভিত্তিকে তাকে প্রধান আসামি করা হয়। তাকে আজকে খালাস দিয়েছেন এ কথা বলেন- তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভিকটিম। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি। জামায়াতের সাবেক আমিরের বিষয়ে শিশির মনির বলেন, আমরা মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে ছিলাম। তিনি মৃত্যুবরণ করায় মামলাটা অ্যাবেট হয়ে গেছে। কিন্তু যে জরিমানা ছিল সেটা থেকে অন মেরিটে খালাস করে দিয়েছেন। ফলে এ মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। শিশির মনির জানান, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (মৃত্যুবরণ করায় অ্যাবেট করে খালাস দেয়া হয়), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর (খালাস) এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ (যাবজ্জীবন-বর্তমানে ভারতে), এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (খালাস), এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম (মৃত্যুবরণ করায় অ্যাবেট হয়ে যায় এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা), ডিজিএফআই’র সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার সাহাবুদ্দিন আহমেদ (১০ বছর), এনএসআই’র সাবেক উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন (১০ বছর), এনএসআই’র সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান (১০ বছর), রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিন উদ্দিন তালুকদার (খালাস), সিইউএফএল’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক (খালাস), সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমিন (খালাস), চোরাচালানি হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান (১০ বছর), অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দীন মোহাম্মদ (১০ বছর) ও ট্রলার মালিক হাজী আবদুস সোবহান (১০ বছর)। এর আগে হাইকোর্টে গত ৬ নভেম্বর এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক সংক্রান্ত দু’টি মামলার মধ্যে চোরাচালান মামলায় (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমানের আদালত। অস্ত্র আইনে দায়ের করা অন্য মামলাটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন একই আসামিরা। এছাড়া অস্ত্র আটক মামলার অপর ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারক। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। পরে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন।
