দ্রুত নির্বাচন আদায়ে বিএনপির দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিগত ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করে আসা বিএনপি এবার দ্রুত সময়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আদায় করতে চায়। এ লক্ষ্যে দলটির নেতাকর্মীরা দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছে। এরইমধ্যে দলটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। এদিকে, গতকাল রোববার বিকালে আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠক শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কোনো প্রস্তাব সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হলে বিএনপি তাতে বাধা দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ভোটের সময় নিয়ে ইসিকে তারা কোনো প্রস্তাব দেননি। আগামীকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক। সেখানেই ভোটের সময়সীমা নিয়ে কথা বলবে বিএনপি।

নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে ক্ষমতা খর্ব হয়েছে- ইসির এমন দাবি নিয়ে বৈঠকে কিছু বলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তাদের বিষয়। তবে সংস্কার কমিশনের কোনো প্রস্তাব সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় হলে বাধা দেবে বিএনপি।

সূত্রমতে, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে আজ সোমবার এই বৈঠক হবে। এতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে দলটি। সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুর, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।

এর আগে, দেশের চলমান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করে দলটি। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় দলটি। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে গত বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলক ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে। ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। অথচ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে, যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

এর পরদিন গত শুক্রবার দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে অংশ নেয়া সবাই গুলশান কার্যালয়ে বসেন ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। সেই বৈঠকে দেশের চলমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী নির্বাচনের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। দায়িত্ব পালনে তারা নিরপেক্ষ থাকবেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যাবেন না বলে জানান তিনি। তবে নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ চান না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সিইসি।

গতকাল রোববার তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন কোনো রাজনীতিতে ঢুকতে চায় না জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে দাঁড়াতে চাই না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকতে চাই। বিএনপি নেতারা বলছেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিগত ১৭ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করা হয়। তবে এখনও স্বস্তি মিলছে না, দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসেনি। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরে আসেনি। সেখানেও নানা বাধা-বিপত্তি আর প্রতিবন্ধকতা। একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি করে নির্বাচনকে দূরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।