একদিনে গ্রেপ্তার ১৩০৮ ‘ডেভিল’

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও সন্ত্রাস দমনে ‘ডেভিল হান্ট’ নামের বিশেষ অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল এ অভিযানে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ সদরদপ্তর।

জানা গেছে, গত শনিবার রাত থেকে রোববার রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অপারেশন পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দেশজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমন ও জনগণের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অব্যাহত রাখতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টে ১৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২৭৪ জনকে অন্যদিকে সারা দেশের রেঞ্জ পুলিশ গ্রেপ্তার করে ১ হাজার ৩৪ জনকে।

অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সাবেক কমিশনার মোল?্যা নজরুল ইসলামসহ পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও আবুল হাসনাত, নীলফামারীর ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গত শনিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষপর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বিশেষ অভিযান ‘ডেভিল হান্টে’র সিদ্ধান্তের পর দেশের ভেতরে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে গেছে। আত্মগোপন বা আন্ডারগ্রাউন্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর বাড়তি নজর রাখা হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে চলছে আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যৌথ বৈঠকের পুলিশ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএএফআই) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) নিজেদের বাহিনীর মধ্যে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছে।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতারা বিদেশে পালিয়ে গেলেও তাদের ক্যাডার বাহিনী দেশের ভেতরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা কয়েকদিন নীরব থাকলেও গুপ্ত মিছিল, গোপনে লিফলেট বিলি ও রাতের অন্ধকারে জুলাই বিপ্লবের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার মধ্য দিয়ে নিজেদের দুর্বৃত্তায়নের জানান দিতে শুরু করে। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা করে আত্মগোপনে থাকা দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। ওই হামলার ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। ডেভিল হান্ট ঘোষণার শুরুতেই গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ককে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।

গতকাল রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযান শুরু হয়েছে। আর যতক্ষণ না ‘ডেভিল’ শেষ হচ্ছে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ততক্ষণ চলবে।

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং পাল্টা হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনার পর সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের বিশেষ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড সদস্যদের সমন্বয়ে এ অভিযান চলছে। এ অভিযান কাদের বিরুদ্ধে, সেই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ডেভিল মানে কী? শয়তানই তো টার্গেট এটায়। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী এবং সন্ত্রাসী, তারাই এটার টার্গেট।

অপারেশনে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ওইটা আপনাদের মিডিয়ায় চলে আসছে।

গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুরে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যাদের আনা হয়নি, তাদেরও খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসা হবে এবং তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, এই ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে গতকাল রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। এসময়ে তিনি বলেন, যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে সেখানে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখেনি। আমরা অতটা অমানবিক হতে পারিনি। আমরা অনুভব করি কিছু লোক ভয়ের কারণে করেছে। কিছু যারা ডাইভার্ট ছিল তারা পালিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হচ্ছে।

সিনিয়র সচিব বলেন, ‘যৌথভাবে সকলে মিলে অপারেশন ডেভিল হান্ট করা হচ্ছে। একটি ফোকাসডওয়েতে কিছু কাজ করবে। যেসব জায়গা থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটাকে আমরা নিউট্রালাইজ করবো। সেজন্য আইনানুগ পন্থায় যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার, সেগুলো নেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। সেজন্য সব বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে, ব্রিফিং করা হয়েছে এবং কাজও চলমান রয়েছে। আমরা আজও করেছি এবং এটা চলতে থাকবে। আগে যে আকারে আইন প্রয়োগ করা হতো আমরা তো সেই পথে হাঁটতে পারব না। আমাদের আইনের স্পিরিট নিয়ে কাজটা করতে হবে।’

সরকার চায় পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক জানিয়ে নাসিমুল গনি বলেন, পুলিশের কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি, তাদের অ্যাকটিভলি কাউনসিলিং করছি। আমাদের সিস্টেমের মধ্যে যেন একটা ভালো প্র্যাকটিস রেখে যেতে পারি। আর যেন দেশে আয়নাঘর তৈরি না হয়। এরকম পরিস্থিতি যাতে আর তৈরি না হয়। আমাদের সিস্টেমে যারা কাজ করবেন তারা যেন সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন। আগামী ১১ তারিখ মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সাথে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হবে। যেখানে ঢাকা ও গাজীপুরের ১৫০ জন কর্মকর্তা থাকবেন।

ডেভিল হান্টে কারা নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা পুলিশি অ্যাকশন। পুলিশ কাজ করবে এবং সেনাবাহিনী এতে সহায়তা করবে। যতদিন প্রয়োজন হয় ততদিন এই অপারেশন রাখা হবে। ডেভিল হান্ট পরিচালনায় পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের যে ক্ষমতা আছে সেই ক্ষমতাই পাবে।