হজযাত্রায় এজেন্সির গাফিলতি থাকলে লাইসেন্স বাতিল

এখনও চুক্তি বাকি অর্ধেক এজেন্সির

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

হাতে মাত্র চারদিন বাকি থাকলেও প্রায় অর্ধেক এজেন্সি চলতি বছরের হজের জন্য সৌদি আরবের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি সারেননি। ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের কার্যক্রম শুরু হবে। আর ২৯ এপ্রিল থেকে সৌদি আরবে পাঠানো হবে হজযাত্রীদের। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারিভাবে ৮১ হাজার ৯০০ জন হজে যেতে নিবন্ধন করেছেন। হজযাত্রায় এজেন্সির গাফলতি থাকলেই লাইসেন্স বাতিল ও জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি গতকাল সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এ কথা জানান তিনি।

ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, বাকি এজেন্সিগুলোকে আগামী শুক্রবারের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট সৌদি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সারতে হবে। নির্ধারিত সময়ের পরে আর চুক্তির সময় বাড়াবে না সৌদি কর্তৃপক্ষ। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে ২০২৫ সালের হজ ব্যবস্থাপনার অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বেসরকারি এজেন্সিগুলো তাদের অধীনে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য সৌদি সরকাররের গাইডলাইন অনুসারে কাজ করে যাচ্ছে। অনেকের কার্যক্রম বেশ সন্তোষজনক। আবার অনেকে ধীরগতিতে চলেছেন। সৌদি সরকারের পক্ষ হতে হজ সেবাদানকারী কোম্পানির সাথে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল চুক্তি সম্পাদনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ডেডলাইনের মধ্যে তাদের পক্ষ থেকে সকল চুক্তি সম্পাদনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। সৌদি হজ মন্ত্রণালয় থেকে গতকালও আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে– চুক্তি সম্পাদনের গতি খুবই শ্লথ। অনেক ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত অর্ধেকের কিছু বেশি এজেন্সি চুক্তি সম্পাদন করেছে এবং আরও অর্ধেকের মত বাকি আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সময় আছে আমাদের চার দিন। এর পরে যদি কেউ আমাদের বলে টাইম বাড়ান, এটা আমাদের সুযোগ নাই। এটা আমাদের হাতে নাই। এটা সৌদি সরকারের ব্যাপার। তিনি আরো বলেন গত বছরের ২৩ অক্টোবর সৌদি মন্ত্রণালয় থেকে এ সময়সীমার ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর আরো কয়েক দফা বিষয়টি জানানো হয়েছিল। সে মোতাবেক ধর্ম মন্ত্রণালয় হতে এজেন্সিগুলোকে জানানো হয়েছিল। উপদেষ্টা বলেন, “মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়গুলো সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। গতকালও এজেন্সিদের আমরা তাগিদ দিয়েছি। তাদের সঙ্গে সভা করেছি। তারা যেন বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে মিনা ও আরাফায় তাবু ও ক্যাটারিংয়ের জন্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, বাড়ি বা হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি, পরিবহন কোম্পানির সাথে চুক্তিগুলো সম্পাদন করবেন। তিনি আরো বলেন, এজেন্সির অবহেলা বা গাফিলতির কারণে কোনো নিবন্ধিত হজযাত্রী হজ করতে না পারলে সে দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে। এ দায় কোনোভাবেই সৌদি সরকার বা ধর্ম মন্ত্রণালয় বহন করবে না। এ বছর হাজযাত্রীরা সন্তোষজনক সেবা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বিশ্বস্ত হজসেবা প্রদানকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছি। আমরা এরই মধ্যে সৌদি সরকারের চাহিদামাফিক হজযাত্রী প্রতি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯১ টাকা হিসাবে ১ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল প্রেরণ করেছি।‘ ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এজেন্সির অবহেলা বা গাফলতির কারণে কোনো হজযাত্রী হজ করতে না পারলে সে দায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে নিতে হবে। এ দায় কোনোভাবেই সৌদি সরকার কিংবা ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বহন করবে না। এজেন্সির অবহেলায় কোনো হজযাত্রী হজ করতে না পারলে এজেন্সির বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল তো হবেই। আর্থিক জরিমানাও করা হবে। তিনি বলেন, হজ ও ওমরাহ বিধিমালা ২০২২-এ সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়া করার লক্ষ্যে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটি প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারে। এবছর এই কমিটিতে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের ২ জন ও জেদ্দা কনস্যুলেটের ২ জন প্রতিনিধি কো-অপ্ট করা হয়। এদের মধ্যে সৌদি দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাশে ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিও ছিলেন।

আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, এরূপ শক্তিশালী একটি কমিটি এ বছর সরকারি মাধ্যমের হজযাত্রীদের জন্য বাড়িভাড়ার কাজটি সম্পন্ন করেছে। এই কমিটি বাড়িভাড়া কোটেশনের পরিপ্রেক্ষিতে দরদাতাদের বাড়িগুলো পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেছে। প্রাথমিকভাবে বাছাই করা বাড়িগুলো দুই বা ততোধিকবার সরজমিনে পরিদর্শন করেছে। তিনি বলেন, বাড়িগুলোর মান, আনুষঙ্গিক সুবিধা, হারাম শরীফ হতে দূরত্ব, হজ প্যাকেজে প্রতিশ্রুত সেবা ও বাড়িভাড়া বাবদ বরাদ্দণ্ডএসকল বিষয়গুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এই কমিটি সর্বোত্তম বাড়িগুলো ভাড়া করেছে এবং বাড়িভাড়া চুক্তিও সম্পাদন করেছে। এ কমিটি বিধি মোতাবেক বাড়িভাড়া করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বান্তঃকরণে চেষ্টা করেছে । উপদেষ্টা বলেন, এ বছর সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য আমরা দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলাম।

সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এ নিবন্ধিত হজযাত্রীদের জন্য মক্কায় আমরা হারাম শরিফের বহিচর্ত¡র থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সৌদি সরকারের বিধান অনুসারে হারাম শরীফ হতে ২ কিলোমিটার দূরে হজযাত্রীদের জন্য হোটেল বা বাসাভাড়া করা হলে সেক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে পরিবহনের বন্দোবস্ত রাখতে হয়। আমরা এ উদ্দেশ্যে হজযাত্রী প্রতি ৩০০ রিয়াল ধরেই প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছিলাম। ‘কিন্তু বাস্তবতা হলো- হজের মৌসুমে অত্যধিক ভিড়ের কারণে অনেকসময় হারাম শরীফ হতে দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে বাস প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এ কারণে আমরা হজযাত্রীদের সুবিধার্থে প্যাকেজ-১ এর বাড়িভাড়া ও পরিবহন বাবদ দেয় টাকা সমন্বয় করে এই প্যাকেজের যাত্রীদের জন্য ৩ কিলোমিটারের স্থলে ২ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে বাড়িভাড়া নিয়েছি।’ আমরা তাদের জন্য যে বাড়িগুলো ভাড়া নিয়েছি তার সর্বোচ্চ দূরত্ব হবে ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার। বাড়িভাড়া কমিটির সদস্যদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের কষ্ট লাঘব হবে এবং হজযাত্রী হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বহুলাংশে কমে গেছে। এখানে দুটি খাত সমন্বয় করে আমরা যে কাজটি করেছি সেটার বিষয়েও প্যাকেজে স্পষ্ট বলা আছে, সরকার হজযাত্রীদের সুবিধার্থে যেকোনো খাত সমন্বয়ের অধিকার সংরক্ষণ করে- বলেন খালিদ হোসেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীদের জন্য মক্কায় যে সব হোটেল ভাড়া করেছি সেগুলোর সর্বোচ্চ দূরত্ব হবে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার। অন্যদিকে, মদিনায় হজ প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ এক কিলোমিটারের মধ্যে এবং হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীদের জন্য ৩০০-৬০০ মিটারের মধ্যে হোটেল ভাড়া করা হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, হজ প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীরা মিনায় জোন-৫ এর তাঁবুতে অবস্থান করবেন এবং হজ প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীরা মিনায় জোন-২ এর তাঁবুতে অবস্থান করবেন এবং সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক সেখানে খাবারসহ অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন। তিনি বলেন, হজের সাথে সংশ্লিষ্ট সেবা বিশেষ করে পরিবহন সেবা, লাগেজ লোডিং-আনলোডিংসহ অন্যান্য সেবার জন্য সৌদি সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা এরই মধ্যে সব চুক্তি সম্পাদন করেছি। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা বিশ্বস্ত হজ সেবা প্রদানকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছি। আশা করি, এ বছর আমাদের হজযাত্রীগণ সন্তোষজনক সেবা পাবেন। তিনি আরো বলেন, আমরা এরই মধ্যে সৌদি সরকারের চাহিদামাফিক হজযাত্রী প্রতি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯১ টাকা হিসেবে ১ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল পাঠিয়েছি।