টেন্ডার প্রক্রিয়ার পরও থমকে আছে সেন্টমার্টিন জেটি সংস্কার

ভরা মৌসুমেও সুফল পাননি পর্যটকরা * ঠিকাদার আত্মগোপনে থাকার গুঞ্জন!

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পাঁচ মাস পরও থমকে আছে সেন্টমার্টিন জেটি সংস্কার প্রকল্পের কাজ। যার কারণে ভরা মৌসুমে পর্যটকরা সুফল পায়নি। ভাঙা জেটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে, দ্রুত জেটি সংস্কার কাজ শুরু হবে। অপর একটি বলছে, কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার গত ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে গেছেন। এ কারণে কবে জেটি সংস্কার শুরু হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পরিষদের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ইজিপি প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়ম মেনে সেন্টমার্টিনের জেটি সংস্কারের জন্য ঢাকার এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডকে নিয়োগ দেয়া হয়। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৪ চার টাকা। কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে ১ মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত।

তবে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, গেল বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রোপাইটর মোহাম্মদ রাকিবুল আলম ও স্থানীয় প্রতিনিধি ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক থাকায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ২ বছর আগেও ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করে জেটিতে পন্টুন ও ফুটো অংশে কাঠের তক্তা বিছানো হয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাঠের তক্তা নষ্ট হয়ে যায়। এখন জেটির অবস্থা নড়বড়ে। সূত্র মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্বীপে ওঠানামার একমাত্র ভরসা পূর্ব সৈকতের জেটি। ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটিটি নির্মাণ করে দেয়। জেটির প্রস্থ ১৮ ফুট। জেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় কক্সবাজার জেলা পরিষদ।

কিন্তু ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর টানা ১১ বছর জেটির সংস্কার হয়নি। কয়েক বছর ধরে জেলা পরিষদ সংস্কার করলেও জেটির এখন নাজুক অবস্থা। সোমবার সকালে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মারুফ বলেন, ‘জেটি সংস্কারের জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববারও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা সহসাই কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইজিপি প্রকল্পের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কাজটি পান ঢাকার এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। গত সরকার আমলে সুবিধাভোগী ঠিকাদার অবগত নয়, যদি কাজে অনিয়ম ধরা পড়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, নতুন জেটির উচ্চতা বাড়বে, রেলিংসহ বিভিন্ন কাজে লোহার পরিবর্তে স্টিলের অবকাঠামো লাগানো হবে। প্রসঙ্গত, সেন্টমার্টিনে দুমাস পর্যটক যাওয়ার পর শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে বন্ধ রয়েছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। ফলে কোনো পর্যটক দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারবেন না। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে আগামী ৯ মাস দ্বীপে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। সর্বশেষ শুক্রবার ৩১ জানুয়ারি পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত গত দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করেছেন। এসময় ভ্রমণের আগে অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করে ট্রাভেল পাস নিয়ে সেন্ট মার্টিন যেতে হয়েছে পর্যটকদের। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা দ্বীপটিতে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবেন। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে দৈনিক দুই হাজার পর্যটকের জন্য সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও সেখানে রাত যাপনের সুযোগ রাখা হয়েছিল।