২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
তারেক রহমানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই মামলায় খালাসপ্রাপ্ত পলাতক অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করেছেন আদালত।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক রফিকুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে, গত ১ নভেম্বর বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই মামলার সব আসামিকে খালাস দেন।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুর রশীদ মোল্লা জানান, মামলায় তারেক রহমানসহ খালাস পাওয়া বেশ কয়েকজন আসামি পলাতক ছিলেন। রায়ে তাদের বিরুদ্ধে পূর্বে থাকা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আদেশ দেন আদালত। হাইকোর্টের সেই আদেশ বিচারিক আদালতে আসলে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তারেক রহমানসহ অন্যদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন করি। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পরোয়ানা প্রত্যাহারের আদেশ দেন। জানা যায়, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে ফাঁসি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
ওই বছরের ২৭ নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় এসে পৌঁছায়।
নির্বাচনে বিলম্ব হলে বাড়বে ষড়যন্ত্রের ডালপালা : তারেক
দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্বাচন যত দেরি হবে ততই ষড়যন্ত্রের ডালাপালা বাড়তে থাকবে বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল সোমবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের আহত ফটো-সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রধান অতিথি ছিলেন। এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’।
তারেক রহমান বলেন, সফল সংস্কার অবশ্যই দেশের রাজনীতিবিদদের হাত ধরেই সম্ভব হবে। তাই দ্রুত নির্বাচন দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে, না হলে ষড়যন্ত্রের ডালপালা বাড়তেই থাকবে। কারণ লুট করা পলাতকরা সেই টাকা ষড়যন্ত্রের পেছনে খরচ করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এমন একটি দেশ মানুষের প্রত্যাশা, যে দেশের মধ্যে মানুষের মৌলিক অধিকার থাকবে। ১৫ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না করে অন্য দেশের নাগরিকদের স্বার্থ হাসিলে কাজ করা হয়েছিল। দেশটা সবার, দেশ একক কারো নয়, যা প্রমাণ করেছে জুলাই বিল্পবের মানুষের ঢল। জুলাই-আগস্টের কয়েক সপ্তাহের হত্যাকাণ্ডই প্রমাণ করে গেল ১৫ বছর আওয়ামী লীগ কী পরিমাণ গুম খুন চালিয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা না পেলে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যাবে না। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হলে ভোটের অধিকার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আন্দোলনে আহতদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক’দিন আগে আমরা দেখেছি যে, ছাত্রসমাজের বেশকিছু সদস্য রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন, কেন? তারা সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। জুলাই-আগস্ট মাসে যারা আন্দোলনকে সফল করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। এই ঘটনা একবার না একাধিকবার ঘটেছে।
সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আড়াই বছর আগে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। এই ৩১ দফা নিয়ে দেশের মানুষের ঘরে ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করছি, মানুষকে বলার চেষ্টা করছি কী আমাদের সেই ৩১ দফা।
তিনি বলেন, মানুষের কাছে গেলে একটি কথা বেরিয়ে আসে- আমাদের সমস্যার সমাধান কি হবে? নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিদিন যেভাবে উঠছে-নামছে সেটি মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে গেছে। মানুষের জানার ইচ্ছা, এ সমস্যার সমাধান কীভাবে করা। আজকে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটে বাসে-গাড়িতে, যে পরিমাণ মানুষ এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়, যে পরিমাণ মানুষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এটি একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার। এই সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন। আজকে দেশের বহু মানুষ সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনগণের জানার অধিকার আছে তার চিকিৎসার কী হবে, বংশধরদের চিকিৎসার কী হবে? এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার’ প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ সংগঠনের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়কসহ সম্পাদক আশরাফউদ্দিন বকুল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন, সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার, জ্যেষ্ঠ ফটো সাংবাদিক বুলবুল আহমেদ ও তারিফ রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
