সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রীর স্ত্রী রিমান্ডে

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মেহেরপুর প্রতিনিধি :

ঢাকায় গ্রেপ্তার সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী ও কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা মোনালিসা ইসলামের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার মোনালিসাকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শারমিন নাহারের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তার বিরুদ্ধে মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে আদালতে মামলা রয়েছে। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মারুফ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ৪ আগস্ট মেহেরপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ২৮ আগস্ট শিক্ষার্থী রাশিদুল ইসলাম বাদী হয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। এতে সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম, ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই সরফরাজ হোসেনসহ আওয়ামী লীগের ১৬৩ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। মেহেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মেজবাহ উদ্দীন বলেন, সৈয়দা মোনালিসার নামে মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে।

ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মেহেরপুর আদালতে নেয়া হয়। আদালত এ সময় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

কোর্ট ইন্সপেক্টর মানষ রঞ্জন দাস বলেন, বৈষম্যবিরধী ছাত্রদের দায়েরকৃত মামলাটিতে মোনালিসার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। পলি খাতুন নামের এক নারীর দায়েরকৃত মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মোনালিসা ইসলামকে গতকাল সকালে ঢাকার ইস্কাটনের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে তাকে মেহেরপুরে পাঠানো হয়।

মেহেরপুর পুলিশ সুপার মাকসুদা আকতার খানম বলেন, মেহেরপুর সদর থানায় গত ১৯ আগস্ট দায়ের করা মামলার আসামি সৈয়দা মোনালিসা হোসেন। পৃথক আরেকটি মামলা আছে তার নামে। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতা ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ফরহাদ হোসেন ও তার স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা মেহেরপুর জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তারা মানুষকে নানাভাবে শোষণ করেছেন। আর মন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর ছিলেন তার স্ত্রী সৈয়দা মোনালিসা।

স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, মেহেরপুর জেলায় অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা রাশিয়ায় পাচার করেছেন মোনালিসা। এছাড়া তিনি অনলাইন ক্যাসিনো এজেন্ট ও জুয়াড়িদের নিরাপত্তা দিতেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মেহেরপুরসহ সারা দেশের টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি ও অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী।

তার দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করেছেন ফরহাদ হোসেনেরই ছোট ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুল। সম্প্রতি তিনি এক অডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ভাইয়ের দুর্নীতির কারণেই আজ আমরা সবাই ঘরছাড়া, পালিয়ে বেড়াচ্ছি এবং মামলার আসামি হয়েছি। ফরহাদ হোসেন নিয়োগ, বদলি-বাণিজ্য প্রভৃতি দুর্নীতির মাধ্যমে ন্যূনতম দুই হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কানাডার বেগমপাড়ায় তার বাড়ি আছে। ঢাকায় একাধিক বাড়ি আছে। সবকিছুর নিয়ন্ত্রক ছিলেন মন্ত্রী ও তার স্ত্রী। টাকা ছাড়া টেন্ডার, নিয়োগ, বদলি কিছুই হতো না।

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা ২৬৩/২৪ নম্বর মামলার ১২ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। এছাড়াও পলি খাতুন নামের এক নারীর ৫ আগস্ট দায়েরকৃত একটি জিআর মামলার প্রধান আসামি মোনালিসা। মামলা নম্বর জিআর ৩৮৭/২৪।