চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর্দা উঠছে আজ

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ক্রীড়া ডেস্ক

বিশ্বের ক্রিকেট প্রেমীদের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই পর্দা উঠছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির। আইসিসির এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট ঘিরে নবরূপে সেজেছে পাকিস্তান। প্রায় তিন দশক (২৯ বছর) পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। তাই তো তিন হোস্ট শহর করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপন্ডিকে নববধূর মতো সাজিয়েছে আয়োজকরা। নিরাপত্তাজনিত কারণে দীর্ঘদিন সেখানে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট বন্ধ ছিল। তাই নিরাপত্তার প্রশ্নে ছাড় দিতে রাজি নয় দেশটি। পাঞ্জাবের পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) উসমান আনোয়ার জানিয়েছেন, দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও ক্রিকেট-ভক্তদের জন্য পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি জানান, লাহোরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ৮ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য, যার মধ্যে থাকবেন ১২ জন সিনিয়র অফিসার, ৩৯ জন ডিএসপি, ৮৬ জন পরিদর্শক, ৭০০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ৬ হাজার ৬৭৩ জন কনস্টেবল এবং ১২৯ জন নারী পুলিশ। রাওয়ালপিন্ডিতে দায়িত্ব পালন করবেন ৫ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে থাকবেন ৬

জন সিনিয়র অফিসার, ১৫ জন ডিএসপি, ৫০ জন পরিদর্শক, ৫০০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ৪ হাজার কনস্টেবল এবং শতাধিক নারী পুলিশ সদস্য।

প্রথা অনুযায়ী স্বাগতিক আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে লড়াই। তাদের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ-এ এর এই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে করাচিতে। দিবারাত্রির এই ম্যাচটি শুরু হবে বিকাল ৩টায়।

বলা যেতে পারে, সদ্য শেষ হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালের লড়াইটা যেন আবারও ফিরে এলো। যে ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হলেও, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে ফেভারিটের তকমা দেয়া হচ্ছে পাকিস্তানকে। কারণ দলটির ফর্ম। সবশেষ ১০ ওয়ানডেতে ৭টি জয় পেয়েছ রিজওয়ান-বাবররা। তবে দুর্বলতাও আছে পাকিস্তানের। ব্যাটিংয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ক্রিটেটাররা রান পেলেও ধারাবাহিকতার বড্ড অভাব। যে কারণে ক’দিন আগেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ট্রফি হাতছাড়া করেছে দলটি। শুধু সালমান আলী আগা ছিলেন ব্যতিক্রম। তবে শাহীন আফ্রিদি, হারিস রউফ, নাসিম শাহদের নিয়ে গড়া পেস ডিপার্টমেন্ট জ্বলে উঠলে যে কোনো দলকে হারাতে পারে পাকিস্তান। নিউজিল্যান্ডকেও পেছনে রাখার সুযোগ নেই। সবশেষ দুই ম্যাচেই পাকিস্তানকে হারিয়েছে ব্লাক ক্যাপরা। ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যাট হাতে দারুণ পারফর্ম করেছেন কেন উইলিয়ামসন। বল হাতে ছন্দে আছেন দুই পেসার পিটার ও’রোর্ক ও ম্যাট হেনরি। তবে টপ অর্ডারে টম ল্যাথাম, রাচিন রবিন্দ্র, আর মিডল অর্ডারে ডারিল মিচেল রান পেলে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে শিরোপা জেতা অসম্ভব নয়। ব্লাক ক্যাপদের তুরুপের তাস হতে পারেন অলাউন্ডার গ্লেন ফিলিপসও।

এদিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত হয়েছে ৮টি আসর। এর মাঝে, স্মৃতির পাতায় আছে অনেক অনেক ঘটনা। তার মাঝেই সেরা পাঁচ মুহূর্ত তুলে ধরেছে আইসিসি। যেখানে আছে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের সেই মুহূর্ত। দেখে নেয়া যাক চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেরা ৫ মুহূর্ত।

২০০২: ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা : বীরেন্দ্র শেবাগের অফ স্পিন জাদুতে সেবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে দিয়ে ফাইনালে ওঠে ভারত। কলম্বোতে প্রথম সেমিফাইনালে শেবাগের ফিফটিতে ৯ উইকেটে ২৬১ রান দাঁড় করায় ভারত। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৭ উইকেট হাতে রেখে দুইশ’র গণ্ডি পেরিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। সেঞ্চুরি (১১৬ রান) আদায় করে নেন গিবস। এরপর তিনি রিয়াটার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যান। অপরদিকে সেঞ্চুরির কাছাকাছি ছিলেন প্রোটিয়া লিজেন্ড জ্যাক ক্যালিস। এরপর বল হাতে মার্ক বাউচার, জ্যাক ক্যালিস (৯৭ রান) আর ল্যান্স ক্লুজনারকে ফিরিয়ে নাটকীয়ভাবে ভারতকে ফাইনালে তোলার নায়ক বনে যান শেবাগ। ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ও ব্যাট হাতে ৫৯ রান করে ম্যাচসেরাও হন তিনি।

২০০৪: ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ইংল্যান্ড : সেবার ফাইনালে ইংল্যান্ডের করা ২১৭ রানের জবাবে ১৪৭ রানে ৮ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখনও বল বাকি ৯৮টি। শিবনারায়ণ চন্দরপলের বিদায়ে হার চোখ রাঙাচ্ছিল ক্যারিবীয়দের। তবে, ৯ম উইকেটে কার্টনি ব্রাউনি আর ইয়ান ব্র্যান্ডশোর ৭১ রানের অবিশ্বাস্য এক জুটিতে শিরোপা জিতে নেয় ক্যারিবিয়ানরা। ব্রাউনি ৩৫ আর ব্র্যাডশো অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে।

২০০৯: দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ড : দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে ওয়াইজ শাহের ৮৯ বলে ৯৮ রানে ৮ উইকেটে ৩২৩ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গ্রায়েম স্মিথের ১৪১ রানের পরেও ২২ রানে হেরে যায় প্রোটিয়ারা। ব্রড-অ্যান্ডারসন জুটির তিনটি করে উইকেট শিকারে হাইস্কোরিং ম্যাচে হেরে সেমির আশা জাগিয়েও ছিটকে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

২০১৩: নিউজিল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা : কার্ডিফে লো স্কোরিং থ্রিলারে মাত্র ১৩৮ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৩৫ রানে ৭ উইকেট থেকে লাসিথ মালিঙ্গার ম্যাজিকে ১৩৫ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে বিপাকে নিউজিল্যান্ড। তবে টিম সাউদির ব্যাটে ওই ম্যাচে ১ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয় পায় কিউইরা।

২০১৭: ভারত-পাকিস্তান : বৈশ্বিক আসরে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে চমকে দেয় পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তানের করা ৩৩৮ রানের জবাবে মাত্র ১৫৮ রানেই গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। ব্যাট হাতে ফখর জামানের সেঞ্চুরির পর মোহাম্মদ আমিরের ম্যাজিকাল স্পেলে লন্ডনে ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা উৎসবে মেতেছিল সরফরাজ আহমেদের পাকিস্তান।