আজ ভারতকে হারাতে চায় বাংলাদেশ
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক

আট বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গতকাল বুধবার মাঠে গড়িয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। স্বাগতিক পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যেকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠেছে আইসিসির এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের। অথচ ভেন্যু নিয়ে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন নিয়েই শঙ্কা জেগেছিল। অনেক জলঘোলার পর অবশেষে মাঠে গড়ালো মর্যাদার এই টুর্নামেন্ট। আসরের দ্বিতীয় দিনে আজ ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ৩টায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এটি উভয় দলের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ।
সবশেষ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত আসরে প্রথমবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিল তারা। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। যা এখনও আইসিসির যেকোনো ইভেন্টে টাইগারদের সেরা ফলাফল হিসেবে বিবেচিত। সেবার সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার প্রথম ম্যাচেই বদলা নেয়ার সুযোগ টাইগারদের সামনে। তবে কাজটি মোটেও সহজ নয়। কারণ অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স ও শক্তিতে অনেক এগিয়ে ভারত।
অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরমেন্স হতাশাজনক। সর্বশেষ ১২ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৪টিতে জিতেছে টাইগাররা। গত বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। যা ছিল টাইগারদের শেষ ওয়ানডে সিরিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ওয়ানডে ফরম্যাটে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেও জিততে পারেনি টাইগাররা। পাকিস্তান শাহিনসের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে। তবে প্রস্তুুতি ম্যাচ আর মূল ম্যাচের মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। তাই মুল ম্যাচে জয়ে চোখ রেখেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। টাইগারদের আশার পালে হাওয়া দিচ্ছে তাসকিন-রানারা।
কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ দলের বোলিং আক্রমণে পেসারদের দাপট। একটা সময় শুধু স্পিনারদের ওপর নির্ভর করতে হতো তাদের। কিন্তু এখন বাংলাদেশকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন পেস বোলাররা। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও দলটি বোলিংয়ে আস্থা রাখছে মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব ও নাহিদ রানার ওপরই। গতকাল বুধবার দুবাইয়ে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘আমাদের পেস আক্রমণ এখন অনেক উন্নত। একসময় আমরা পেস বোলিং নিয়ে ভুগেছি, কিন্তু এখন মানসম্পন্ন পেসার উঠে আসছে। তাসকিন ও নাহিদের মতো গতিময় বোলাররা অধিনায়ক হিসেবে আমাকে দারুণ সুবিধা দিচ্ছে। আমি চাই তারা নিজেদের গতি ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে দলকে সহায়তা করুক। রাতের আলোয় বল সুইং করবে, তাই যদি তারা ভালো লাইন-লেংথ ধরে রাখতে পারে, তবে দল উপকৃত হবে।’ বাংলাদেশের গ্রুপকে কঠিন মনে করছেন শান্ত। তাদের সঙ্গে আছে ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের গ্রুপ বেশ শক্তিশালী। টুর্নামেন্টের আট দলই সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড প্রত্যেকের বিপক্ষেই আমাদের ভালো স্মৃতি আছে। কিছু ম্যাচ আমরা জিতেছি, যেমন গত বছর ভারতের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে জয় পেয়েছিলাম। তবে এসব অতীত, এখন নতুন করে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে, পরিকল্পনাগুলো মাঠে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলেই আগামীকালের ম্যাচ আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে।’ তরুণ পেসার নাহিদের নিয়মানুবর্তিতা ও পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘নাহিদ সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে দুর্দান্ত বোলিং করছে। যখন সে গতিতে আক্রমণ করে, তখন পুরো বোলিং বিভাগ উজ্জীবিত হয়। এটা আমাদের দারুণ অনুপ্রেরণা দেয়, প্রতিপক্ষকে কীভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। আমি চাই, সে ফিট থাকুক ও ধারাবাহিক পারফর্ম করুক। ভারতের বিপক্ষে সে আগেও খেলেছে, শান্ত আছে, নিজের কাজটা ঠিকঠাক করার চেষ্টা করছে। আশা করি, আগামীকাল সুযোগ পেলে দলকে বড় অবদান রাখবে।’ যদিও বাংলাদেশ দল এই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে আন্ডারডগ হিসেবে মাঠে নামবে, তবে তাদের স্কোয়াডে এমন কিছু খেলোয়াড় রয়েছে, যারা ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম। বাংলাদেশ দলের একাদশে কয়েকটি পরিবর্তন হতে পারে, বিশেষত ওপেনিংয়ে। তানজিদ হাসান এখন পর্যন্ত ২১টি ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ২০.৬৫ গড়ে রান করেছেন। তাই, তার জায়গায় নাজমুল হোসেন শান্ত ওপেনিংয়ে নামতে পারেন। শান্ত এবং সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটি শুরুতে শক্তিশালী হতে পারে, যা দলের জন্য সুবিধাজনক হবে। এছাড়া, মেহেদি হাসান মিরাজের জন্য তিনে ব্যাট করার সুযোগ রয়েছে। মেহেদি সম্প্রতি বেশ কিছু ম্যাচে ওপেনিংয়ে ব্যাট করেছেন এবং তার ভারত বিপক্ষে গড় ৪৬- এটি তার ওপর বাংলাদেশের আস্থার প্রতিফলন। মেহেদি ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে দুর্দান্ত এবং নতুন বলের বিপক্ষে তার দক্ষতা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তৌহিদ হৃদয় চার নম্বরে ব্যাট করবেন, এরপর পাঁচ নম্বরে আসবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। মুশফিক ভারতের বিপক্ষে ৭০৩ রান করেছেন এবং তিনি একদম ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে সক্ষম।
বাংলাদেশের উইকেটকিপার-ব্যাটার মুশফিকের অভিজ্ঞতা দলকে ভরসা দেবে। ফিনিশার হিসেবে জাকার আলী নামতে পারেন। তাকে দিয়ে ম্যাচ শেষ করার পরিকল্পনা থাকতে পারে, যার ফলে মাহমুদউল্লাহ ছয়ে ব্যাট করবেন।
বাংলাদেশ দলে তিনজন পেসার এবং দুই স্পিনার নিয়ে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান, নাহিদ রানা এবং তাসকিন আহমেদ পেস বিভাগে থাকবেন, যাদের মধ্যে মোস্তাফিজের ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বেশ ভালো রেকর্ড রয়েছে। নাহিদ রানা তার গতি এবং বাউন্স দিয়ে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সমস্যা তৈরি করতে সক্ষম। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রিশাদ হোসেনের লেগ স্পিন। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের জন্য তার বল বিপজ্জনক হতে পারে, এবং তার স্পিনের সঙ্গে রোটেশন বাংলাদেশ দলকে ভারতকে চাপে ফেলতে সাহায্য করতে পারে। রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, নাহিদ রানা। এটি একটি শক্তিশালী দল, যেখানে প্রতিটি প্লেয়ারই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাংলাদেশ তার যাত্রা শুরু করতে প্রস্তুত। দুই দেশের ৩৭ বছরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও, ভারত ও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে মাত্র একবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। ২০১৭ সালের সংস্করণে বার্মিংহ্যামে রোহিতের অপরাজিত ১২৩ এবং বিরাট কোহলির অপরাজিত ৯৬ রানের হাত ধরে দ্বিতীয় উইকেটে ভারত ১৮৮ রান যোগ করেছিল এবং টিম ইন্ডিয়া ২৬৫ রান তাড়া করে ৯ উইকেটে জিতেছিল সেই ম্যাচ। প্রসঙ্গত ভারত, সেবার ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে গিয়ে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থেকেছিল। ওডিআই ফরম্যাটে আন্তর্জাতিক অভিষেকের দুই বছর পর, বাংলাদেশ ঘরের মাঠে এশিয়া কাপে ১৯৮৮ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল। দু’টি এশিয়ান দেশ সেই সময় থেকে এই ফরম্যাটে ৪১ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। এবং ভারত অপ্রতিরোধ্য ভাবে ৩২ বার জিতেছে। ৮ বার জিতেছে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচে কোনো ফলাফল হয়নি।
