‘দেশের প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত সেনাসদস্যরা’

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাজশাহী ব্যুরো

বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের সব সদস্য দেশের প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘রেজিমেন্টের প্রত্যেকটি সদস্যকে পেশাদার ও প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে আমি সর্বদা বদ্ধপরিকর। পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি একটি সুন্দর জীবনমানও আমাদের কাম্য। যে কোনো কল্যাণমুখী কার্যক্রমের জন্য আমি সর্বদা সচেষ্ট থাকব। এ ব্যাপারে আমি রেজিমেন্টের সব সদস্যের সহযোগিতা কামনা করছি।’ সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা লাভের পর অতি অল্প সময়ের মধ্যেই কঠোর পরিশ্রম, সময়োপযোগী পরিকল্পনা এবং দেশপ্রেমের দৃঢ় অঙ্গীকারের মাধ্যমে আজকের এই মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আসীন হয়েছি। এই রেজিমেন্ট কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে জাতীয় পতাকা লাভের দুর্লভ সম্মানে অধিষ্ঠিত হয়েছে।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের কর্নেল অব দ্য রেজিমেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত। এই রেজিমেন্ট এরইমধ্যে আধুনিকায়ন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন নতুন ইউনিট প্রতিষ্ঠা, আধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জামাদি সংযোজনসহ উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি কর্নেল অব দ্য রেজিমেন্ট হিসেবে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ এবং এর চলমান প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান করব।’

সেনাপ্রধান আশা প্রকাশ করেন, রেজিমেন্টের সব সদস্য তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পেশাদারির সঙ্গে পালন করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, এই রেজিমেন্টের সব সদস্য দেশের প্রয়োজনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দায়িত্ব পালন করবে এবং প্রয়োজনে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকবে।’

এর আগে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের সপ্তম কর্নেল অব দ্য রেজিমেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। এদিন সকালে রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সপ্তম কর্নেল অব দ্য রেজিমেন্ট হিসেবে তিনি অভিষিক্ত হন। এসময় প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তাকে রেজিমেন্টের কর্নেল র‍্যাঙ্ক পরিয়ে দেয়া হয়।

এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘৭ম কর্নেল অব দি রেজিমেন্ট’ হিসেবে সেনাবাহিনী প্রধান সামরিক রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন। আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, সেনাবাহিনী প্রধান অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে তাকে প্রচলিত সামরিক রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে অভিবাদন জানানো হয় এবং বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের জ্যেষ্ঠতম অধিনায়ক এবং জ্যেষ্ঠতম মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার সেনাবাহিনী প্রধানকে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ‘কর্নেল র‌্যাঙ্ক ব্যাজ’ পরিয়ে দেন।

সেনাবাহিনী প্রধান বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের অধিনায়ক ও অন্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন এবং এ রেজিমেন্টের উন্নয়ন, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও দেশে-বিদেশে পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে মতবিনিময় করেন। একই সাথে তিনি স্মরণ করেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের বীর সেনানীসহ সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য এবং দেশমাতৃকার সেবায় এই রেজিমেন্টের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং রেজিমেন্টের প্রতিটি সদস্যকে অভিনন্দন জানান। এছাড়াও, তিনি আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে এই রেজিমেন্টের সব সদস্যের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা, অন্যান্য অফিসার, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার, অন্যান্য পদবির সেনাসদস্য এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলন উপলক্ষে সেনাবাহিনী প্রধানের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে এই রেজিমেন্টের সদস্যদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি ও রেজিমেন্টের প্রতিটি সদস্যের মাঝে আগামী দিনে দেশ সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।

মেজর সিনহা স্মৃতিফলক উদ্বোধন করলেন সেনাপ্রধান : কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভে মেজর সিনহা স্মৃতিফলক উদ্বোধন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে টেকনাফ বাহার ছড়ার মেরিন ড্রাইভে এ ফলকের উদ্বোধন করেন।

এ সময় বিজিবির প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী ও পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পরে সেনা ও বিজিবির দুই বাহিনীর প্রধান হেলিকপ্টারযোগে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা করেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হয়েছিল।