অবরোধকারীদের ওপর হামলা পুলিশের লাঠিচার্জ
উত্তাল শাহবাগ
প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘জুলাই যোদ্ধা’ ব্যানারে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিলেন একদল ব্যক্তি। টানা ৩২ ঘণ্টা অবরোধের পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আরেক দল ব্যক্তি নিজেদের ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে ওই অবরোধকারীদের ওপর হামলা করেন। তারা শাহবাগ মোড়ের চারপাশে রাখা ব্যারিকেড (প্রতিবন্ধকতা) সরিয়ে দেন। এর এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। তখন পুলিশ এসে দুই পক্ষকে লাঠিচার্জ করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর শাহবাগ মোড় দিয়ে পুরোদমে যান চলাচল শুরু হয়।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে একদল লোক বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিলেন। তাদের দফায় দফায় বুঝিয়েও সড়ক থেকে সরানো যায়নি। গতকাল সন্ধ্যায় জুলাই যোদ্ধা দাবি করে অন্য একটি দল শাহবাগে আসে। দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও বিশৃঙ্খলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ দুই পক্ষকেই সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এরপর শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়। এতে ঢাকার ব্যস্ততম এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সারা দিনের পর রাতেও সেখানে অবস্থান নিয়ে অবরোধ চালিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। গতকাল সকালে বৃষ্টির মধ্যেও একদল আন্দোলনকারীকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখতে দেখা যায়।
অবশ্য সকালে আন্দোলনকারীরা কম থাকায় ফার্মগেট-বাংলামোটর হয়ে যাওয়া গাড়িগুলো শাহবাগ মোড় দিয়ে মৎস্য ভবনের দিকে যেতে পারছিল। আবার কাঁটাবন থেকে আসা গাড়িগুলো বাংলামোটরমুখী সড়কে আসতে পারলেও মৎস্য ভবনের দিকে যেতে পারছিল না। শাহবাগ মোড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কাঁটাবন অভিমুখী সড়কেও যান চলাচল বন্ধ ছিল।
এদিন দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যেও তারা সড়ক অবরোধ করে দাবি আদায়ে স্লোগান দিচ্ছেন। একই সঙ্গে সড়কের চারদিকে তারা ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন। এ কারণে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
অবরোধকারীরা জানান, এখনো জুলাই সনদ না হওয়ায় আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন। বারবার এ দাবি জানানো হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ‘গতকাল সারা রাত শাহবাগে সড়কে অবস্থান করেছেন অবরোধকারীরা। আজ দুপুর পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই অবস্থান করছেন। বৃষ্টির মধ্যেই তাঁদের সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।’
জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা বলেন, জুলাই সনদ ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি চলবে। গতকাল ছুটির দিনে সড়কে কর্মস্থলমুখী মানুষের চাপ কম। তবে যানবাহন না পেয়ে ওই সড়কে চলাচলকারীরা ভোগান্তিতে ছিলেন।
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেওয়া; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহত ব্যক্তিদের সব চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের ওপর সংঘটিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদ-ে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগে আপ বাংলাদেশের গণজমায়েত : জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত করছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে এই গণজমায়েত শুরু করে সংগঠনটি।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য জুলাই অভ্যুত্থানের বৈধতা দিতে ঘোষণাপত্র আবশ্যক বলে জানান সংগঠনের নেতারা তারা অভিযোগ করেন, সমন্বয়কদের একটি অংশের চাঁদাবাজিসহ নানা নৈতিকতা বহির্ভূত কাজ জুলাই স্পিরিটের বিপরীত। এ সময় ৩৬ জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন আপ বাংলাদেশের নেতারা।
