গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিন হোক ৫ আগস্ট

বললেন তারেক রহমান

প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে আর কাউকে ‘গণতন্ত্র হত্যা এবং ফ্যাসিবাদ কায়েম’ করতে দেওয়া হবে না বলে দৃঢ় প্রত্যয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের এই দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। রাহুমুক্ত হয়েছে দেশ। স্বাধীনতাপ্রিয়, গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের জন্য দিনটি আনন্দের। দিনটি বিজয়ের। বাংলাদেশের এই দিনটিকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জনগণ প্রতি বছর আজকের দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে উপভোগ করবে। গতকাল মঙ্গলবার গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে, দলের সিদ্ধান্তক্রমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অনুষ্ঠানে যান। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা ছিলেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান এবং সালাহউদ্দিন আহমদ।

একাত্তর সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর চব্বিশ সাল ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ এমন মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘হাজারো শহিদের রক্তস্নাত রাজপথে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য’ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না ইনশাআল্লাহ, কাউকে গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। বাংলাদেশকে আর কখনোই তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না ইনশাআল্লাহ। আমি মনে করি এসব প্রশ্ন জাতীয় ঐক্য বহাল আছে, থাকবে ইনশাআল্লাহ।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনটি বাংলাদেশ উদযাপন করছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে। তারেক রহমান বলেন, ‘আজ এবং আগামীর প্রতিটি ৫ আগস্ট হয়ে উঠুক গণতন্ত্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন। এই সুমহান অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দীর্ঘ যাত্রায় আমি এবং আমার দল বিএনপি দেশের সকল গণতান্ত্রিকামী আমি জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা আশা করছে।’ তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত’ বাংলাদেশে যার যার দলীয় আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘ইস্যুভিত্তিক ভিন্নমত’ থাকবে। এটি বিরোধ নয়, বরং ‘গণতন্ত্রের সৌন্দর্য’। তবে ভিন্নমত কিংবা বিরোধের মাত্রা যেন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা, উত্থান কিংবা পুনর্বাসনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। সে ব্যাপারে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি সতর্ক থাকার জন্য বিনীত আহ্বান জানাই। আমি মনে করি, প্রতিটি রাজনৈতিক দল যার যার দলীয় কর্মসূচি কিংবা এজেন্ডা নিয়ে জনগণের আদালতে যাবেন। জনগণ কোনটি গ্রহণ করবেন কিংবা কোনটি বর্জন করবেন এটি সম্পূর্ণ জনগণের এখতিয়ার। এভাবেই প্রতিদিনের রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণ যতক্ষণ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে না পারবে, সরকার গঠন কিংবা সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না। আসুন রাষ্ট্র সরকার শাসন প্রশাসন পরিচালনায় আর প্রতিদিনের কার্যক্রমে জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার চর্চা প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলি। জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে না পারলে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই শক্তিশালী এবং টেকসই হবে না।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘৫ অগাস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যাওয়ার পরপরই বীর জনতার উদ্দেশে অভিনন্দনবার্তায় আমি বলেছিলাম, বিজয়ীর কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়। সেটি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। মব-ভায়োলেন্সকে উৎসাহিত করবেন না, নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করবেন না, অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন, আমরা তেমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে দল মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, সংশয়বাদী, প্রতিটি সন্তান প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকবে।’

বিগত দেড় দশকের ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ আন্দোলনের সঙ্গে স্বাধীনতা পরবর্তী সাড়ে তিন বছরের সময়কাল ছাড়া আর কোনো শাসনামলের তুলনা চলে না বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে বিনীতভাবে আহ্বান জানাবো, হিটলারের নাৎসিবাদ সম্পর্কে যেমন কেউ গৌরব করে না, পলাতক ফ্যাসিস্টের শাসনকাল নিয়েও গৌরব করার কিছুই নেই। ডাকাতি করে কিছু সম্পদ চ্যারিটি করলেও জনগণের চোখে ডাকাত যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে কৌশলে পলাতক ফ্যাসিস্টদের পক্ষে সাফাই গাওয়াও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

যারা কৌশলে ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তুলনা করতে চান, তাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও মনে হয় নজিরবিহীন। ফ্যাসিস্টের দোসররা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পলাতক ফ্যাসিস্টের চক্রের মনে এখনো কোনো অনুতাপ অনুসুচনা নেই।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘একাত্তর সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বাংলাদেশ ভোলেনি, চব্বিশেষর গণঅভ্যুত্থানের শহীদদেরকেও বাংলাদেশ ভুলবে না। একাত্তর থেকে আজ পর্যন্ত দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতা রক্ষা, স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন এভাবেই ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে লাখো মানুষ শহীদ হয়েছেন। আজকের এই দিনে আমি আবারও সকল শহীদদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি।’

দেশ ও জনগণের স্বাধীনতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়ে শহীদরা দেশবাসীকে ‘ঋণী’ করে গেছেন মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘এবার শহীদদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধের পালা। দেশের জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমেই আমরা শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধ করতে পারি।’