বেরোবির সাবেক ভিসি কলিমউল্লাহ গ্রেপ্তার

পাঁচজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উন্নয়নকাজের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুদকের মামলায় বেরোবির সাবেক ভিসি ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য ছিলেন। তিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে গত ১৮ জুন সাবেক দুই উপচার্য কলিমউল্লাহ এবং একেএম নূর-উন-নবীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এই মামলা করে দুদক। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে অধ্যাপক এ কে এম নূর-উন-নবী দায়িত্ব পালন করেন ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত।

ড. কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। যদিও তিনি বরাবরই তা অস্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ১১১টি দুর্নীতির ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বৃহৎ সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ। ২০১৯ সালে শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের সই করা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো সাবেক এ উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৪৫টি অভিযোগ করা হয়।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটসহ স্বাধীনতার স্মারক নির্মাণকাজেও সাবেক এ উপাচার্যের অনিয়মের সত্যতা পায় ইউজিসির পৃথক তদন্ত কমিটি। এজন্য উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ওই কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।

এদিকে, বেরোবির সাবেক উপাচার্য একেএম নুরু-উন-নবী, নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহসহ ৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অন্যরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এমএম হাবিবুর রহমান।

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক এ ভিসি এবং আরও চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মামলার এজাহারে অভিযোগ, তারা পরস্পর যোগসাজশে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের ডিপিপি উপেক্ষা করে সরকারি নিয়মাবলী লঙ্ঘন করেছেন।

দুদক অভিযোগে জানায়, এই পাঁচ আসামি মোট ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে ছিল ৩০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চুক্তি সম্পাদন, নকশা পরিবর্তন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কাজ চালানো এবং নিরাপত্তা জামানত হিসেবে রাখা অর্থ এফডিআর হিসেবে ব্যাংকে জমা করা।

দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, এই মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. একেএম নূর-উন-নবী, সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আবদুস সালাম বাচ্চু এবং এমএম হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, তারা অগ্রিম অর্থ প্রদান না করেই ঠিকাদারকে আর্থিক সহযোগিতার নামে ব্যাংক গ্যারান্টি গ্রহণ করে অগ্রিম বিল প্রদান করেছিলেন। এরপর, তাদের চুক্তি অনুযায়ী খরচের জন্যে প্রয়োজনীয় সব নথি উপেক্ষা করে খরচ অনুমোদন করেছেন।

এছাড়া, দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী দরপত্র মূল্যায়ন না করার মতো অভিযোগও উঠেছে।