ফুরফুরে মেজাজে বিএনপি
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল ইসলাম অমর

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে গত বুধবার চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছে ইসি। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করায় দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির নেতারা অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে সময় পার করছেন। নেতারা বলছেন, দীর্ঘ ১৬ বছর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রোজার আগে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের যে ঘোষণা সরকার দিয়েছে, তাতে দেশের মানুষ উল্লসিত। আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরাও খুশি। কারণ একমাত্র অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমেই দেশের গণতন্ত্র মজবুত হয়।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে নির্দিষ্ট করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করে একে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি মনে করে, এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে, গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। বিএনপি আশা করছে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একটি কার্যকরী জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য বিএনপি সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে। ‘এই নির্বাচন অতি জরুরি’ বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখন এই নির্বাচনটা দেশের জনগণই চায়। জনগণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রহরী হয়ে দাঁড়াবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী দিনে নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রধান উপদেষ্টা যে পরামর্শ দিয়েছেন, অবশ্যই সেটা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘সারা জাতি একটা নির্বাচনমুখী পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যাবে। নির্বাচনমুখী আবহ সৃষ্টি হবে। আগামী নির্বাচনের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত একটি নির্বাচন হবে বলে আমরা আশা করি। সেই লক্ষ্য সমগ্র জাতিকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। নির্বাচনের ঘোষণা মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আর বেশি প্রতিষ্ঠিত হবে।’
গতকাল রোববার লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী বছর রমজানের আগে নির্বাচনে মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ বাস্তবায়িত হবে, এরপরও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে চায়। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে মানুষের আস্থার মূল্যায়ন করে দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি- আগামী নির্বাচনে অধিকাংশ আসন ধানের শীষ এবং বিএনপি পাবে। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ, শুধু সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। বিএনপি তা করবে।
এরই মধ্যে নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলটি। ভোটের মাঠে লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে বৈঠক করেছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তারা বলছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী হয়েছে। নির্বাচনের সময়সীমা দেওয়ার মধ্যদিয়ে, এ নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করছিল, তারাও নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলছেন, জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। এখন দলগুলোর যাদের নির্বাচন করার ইচ্ছা, যারা মনে করে তাদের প্রতি জনগণের সমর্থন আছে, তাদের উচিত মাঠে নেমে নির্বাচনমুখী রাজনীতি করা।
তৃণমূল বিএনপির নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন পর উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে আমরা যেমন আনন্দিত, তেমনি দেশের মানুষও উল্লসিত। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে এবার সরকার গঠন করবে। ইনশাআল্লাহ এবারের নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয় হবে।
জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ভোটের ঘোষণা আসার পরপরই অধিকাংশ সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। এতে নেতাকর্মীরা অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে সময় পার করছেন।
এদিকে, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে রমজান মাস শুরুর আগেই নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের তোড়জোড় শুরু হলেও নির্বাচন ঘিরে এখনও সংশয় কাটেনি বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রকাশ্য দুরত্ব এতটা বাড়েনি, যাতে নির্বাচন না হওয়ার মতো কোনো সংকট তৈরি করবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান প্রেক্ষাপট সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
