বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে

বললেন গোলাম পরওয়ার

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  খুলনা ব্যুরো

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে। তিনি নির্দলীয় সরকারের অধীনে ‘জুলাই সনদ’ এর আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে তার আলোকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘সারাদেশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ যদি অবাধ ও নির্বিঘ্নভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে ইসলামী আদর্শের শক্তিকেই নির্বাচিত করে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘ফ্যাসিস্ট-বাকশালী আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন দেশের প্রেসক্রিপশনে ক্ষমতায় এসে দেশের আলেমণ্ডওলামাদের ওপর জুলুম চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের লজ্জাজনক পতন ঘটেছে। তাই আগস্ট বিপ্লবকে অর্থবহ ও টেকসই করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অতীত অভিজ্ঞতা অনুসরণ করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ অবিলম্বে প্রণয়ন করে বর্তমান সরকারের মাধ্যমেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এই সনদের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’’ গতকাল বুধবার সকালে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আরাফাত আবাসিক এলাকায় উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। চকমথুরাবাদ ভোটকেন্দ্র কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে এবং হরিণটানা থানার ৪ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াত সভাপতি মো. আমির হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান; সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও মিয়া গোলাম কুদ্দুস; ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন; হরিণটানা থানা আমীর আব্দুল গফুর। ডুমুরিয়া উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান; ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হরিণটানা থানা নেতা হারুন অর রশীদ; উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেবক প্রসাদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াত সেক্রেটারি মাওলানা জাহিদুর রহমান নাঈম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহকারী সেক্রেটারি আল আমিন গোলদার, এডভোকেট ব.ম. মনিরুল ইসলাম, মো. সেলিম বাহার, মো. মশিউর রহমান রমজান, মাওলানা ইমরান হোসেন, ডা. মো. ইসমাঈল হোসেন, মো. রফিকুল ইসলাম, রাসেল গাজী, আব্দুল বারেক মোল্লা, মো. শহিদুল, মো. কামাল হোসেন, মো. মুজাহিদুল ইসলাম, মো. মজিবুর রহমান ও হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহিম। সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ইউপি সদস্য আবুল কালাম, সোলায়মান কাজী, বাচ্চু সরদার, বিশিষ্ট সমাজসেবক আবু বকর, সালাহউদ্দিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী, যারা জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন।

ভবিষ্যতের নির্বাচন ও জনগণের প্রত্যাশা : মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে স্বৈরাচারের অনুসারীরা এখনো সক্রিয়। ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হবে। নেতাকর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে ভোট বিপ্লব ঘটানোর জন্য।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন ইসলামী দলগুলোকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চায়। ইসলামের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে ইনশাআল্লাহ। কোনো ষড়যন্ত্রই জনতার বিজয়কে ঠেকাতে পারবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন দুইটি স্লোগান মানুষের মুখে মুখে একটি হলো ‘নতুন বাংলাদেশ’, অপরটি ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’। আমরা চাই, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ দ্রুত প্রণয়ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোটের মাধ্যমে তার আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম ব্যর্থ হয়ে যাবে।” তিনি বলেন, “নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী এবং সংস্থাকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার ও প্রশাসন থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের সরিয়ে দিতে হবে।”

‘জুলাই সনদ’ ও জনগণের উদ্বেগ : তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ ‘জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র’ ঘিরে যে প্রত্যাশা নিয়ে ছিল, তা পূরণ না হওয়ায় দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। শহীদ, আহত ও ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ পরিবারে উদ্বেগ বাড়ছে।’’ তিনি জানান, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। এজন্য ৬টি কমিশন গঠন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে দুই মাসের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার পাঠ করা ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। কবে, কীভাবে তা বাস্তবায়ন হবে তা না থাকায় ঘোষণাপত্র গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব পরবর্তী সরকারের উপর ছেড়ে দেওয়ায় হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।”

নতুন নেতৃত্ব ও সোনার বাংলাদেশ : নেতৃবৃন্দ বলেন, “আগেও চাঁদাবাজি ছিল, এখনও আছে। আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, এখন আরেক দল একই কায়দায় ক্ষমতায় যেতে চায়। তাদের প্রতিহত করে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। জামায়াত একটি সুখী, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলাদেশ গড়তে চায়। আর তা গড়ার জন্য দরকার সোনার মানুষ, যা অতীতেই প্রমাণিত হয়েছে। জনগণ সেই মূল্যায়ন করবে, ইনশাআল্লাহ।” তারা আরও বলেন, “সব দলের শাসন জনগণ দেখেছে, এখন জাতি নতুন কিছু দেখতে চায়। অতিথি পাখিরা ডুমুরিয়া-ফুলতলার উন্নয়ন করতে পারবে না। এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য দরকার যার সঙ্গে এখানকার মানুষের নাড়ীর সম্পর্ক তিনি হলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। মৌসুমি পাখিরা শুধু ভোট নিতে আসবে, কিন্তু এলাকার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না।”