নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফুল ইসলাম

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী সপ্তাহে রোডম্যাপ প্রকাশ করবে এ এম এম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। ফলে সব বাধা পেরিয়ে আগামী সপ্তাহে থেকে চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচনী ট্রেনে উঠবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ইসির রোডম্যাপ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে আমাদের নির্বাচনি রোডম্যাপটি দিতে পারব। আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনি কাজের সময়ভিত্তিক বাস্তবায়নসূচি থাকবে এ রোডম্যাপে। আমরা তফসিলের আগে নির্বাচনের রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে বসব। সূত্র জানায়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা এসেছে, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূনের কাছ থেকে। নির্বাচন কমিশনও বলছে, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ভোটের আগে ৫০ থেকে ৬০ দিন হাতে রেখে ভোটের তফসিল দেবে।
ভোটার তালিকা, সীমানা নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, নির্বাচনি আইনের সংস্কার, সরঞ্জাম কেনাকাটা, দল ও অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, প্রশিক্ষণ, মুদ্রণ, আইনশৃঙ্খলা সভা, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিয়ে সভাসহ তফসিলের আগে-পরে প্রস্তুতির ফর্দ থাকবে এ রোডম্যাপে। জানা যায়, কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ১৮ আগস্টে এ নিয়ে বৈঠক করার কথা রয়েছে। ইসির অনুমোদনের পর তা পুস্তিকা আকারে প্রকাশ হতে পারে।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে রোডম্যাপ প্রকাশের রেওয়াজ চলে এসেছে। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রোডম্যাপ দিয়েছিল তৎকালীন ইসি। বর্তমান ইসিও এ ধরাবাহিকতা বজায় রাখছে। বর্তমান ইসি ২০২৪ সালের নভেম্বরে যোগ দেওয়ার পর ২০২৫ সালের ডিসেম্বরকে ধরে একটা প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছিল।
ইসি ও সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি তারিখ সামনে রেখে কার্যক্রম চলছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির ৫ অথবা ৮ তারিখে ভোটগ্রহণ হতে পারে। এ দুটি দিন নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার ভোগ্রহণের সম্ভবনা বেশি। রোববারের আগে দুদিন সরকারি ছুটি থাকায় এ দিনটিকে ভোটের জন্য অগ্রাধিকার দিচ্ছে ইসি। এছাড়া গত তিনটি সংসদ নির্বাচন রোববারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়ে এক পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে নির্বাচনি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা রোধে কার্যকরব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে তিনি বলেন, কোনোক্রমেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠতে পারবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, রাষ্ট্রের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। ভোটার যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্রেস সচিব বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাসে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করবে ইসি।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, যেদিন নির্বাচন হবে, আনুমানিক তার ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। রোজার আগে নির্বাচন, রোজা যদি হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি, তার আগে দুই চার দিন সময় দেবেন ফর নিউ গভার্নমেন্ট টু টেক ওভার, শপথগ্রহণ ইত্যাদি। তার আগে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের যে ডেটটা হবে, টেন্টেটিভলি তার থেকে ৬০ দিন আগে আপনারা হিসাব করবেন।
ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল : রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্তত ২২টি দল উত্তীর্ণ হয়েছে। দ্রুত এসব দলের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে তদন্তের জন্য পাঠানো হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। এরপর নিবন্ধনের জন্য ইসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
গত ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করে দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এরপর সব কটি দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত এনসিপিসহ ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়। যাচাই-বাছাই শেষে উত্তীর্ণ হওয়া ২২টি দল হলো- ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদণ্ডশাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।
সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে আবেদন পরেছে প্রায় ১৬০০ : সারা দেশের সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে ৩৯টির সীমানায় পরিবর্তন এনে খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। পরে গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত এই খসড়ার বিরুদ্ধে আবেদন পরেছে ১৫৯৮টি। আগমী সপ্তাহ থেকে এসব আসনের শুনানি করবে ইসি।
কোন কোন আসনে পরিবর্তন আসছে, সেগুলো হলো- পঞ্চগড়-১, ২, রংপুর-৩, সিরাজগঞ্জ-১, ২ সাতক্ষীরা-৩, ৪, শরীয়তপুর- ২, ৩, ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪, ১৯, গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫, ৬, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪, ৫, সিলেট-১, ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ৩, কুমিল্লা-১, ২, ১০, ১১, নোয়াখালী-১, ২, ৪, ৫, চট্টগ্রাম-৭, ৮ ও বাগেরহাট -২, ৩, আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে।
সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন ভোটার, ৪২ হাজার ১৪৮টি ভোটকেন্দ্র এবং ২ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪টি ভোটকক্ষ ছিল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সম্ভাব্য ২ হাজার ৯৫০টি অতিরিক্ত ভোটকেন্দ্রসহ মোট ৪৫ হাজার ৯৮টি ভোটকেন্দ্র এবং সম্ভাব্য ১৯ হাজারটি অতিরিক্ত ভোটকক্ষসহ মোট ২ লাখ ৮০ হাজার ৫৬৪টি ভোটকক্ষ হতে পারে। এসব ভোটকেন্দ্রে সম্ভাব্য মোট ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯০ জন ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার প্রয়োজন হবে।
আগামী নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা হতে পারে ১২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৪ হাজার : আগামী নির্বাচনে ভোটের আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে ইসি। এতে ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে ত্রয়োদশ নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা দাঁড়াতে পারে প্রায় ১২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫২ জন (জন্মতারিখ ০১-০১-২০০৮ পর্যন্ত সব ভোটারসহ)। এছাড়া তফসিলের আগ পরর্যন্ত যে কেউ ভোটার হতে পারবেন এবং ভোট দিতে পারবেন।
