নির্বাচন নিয়ে নতুন শঙ্কা
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। যখন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভোটের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা দিয়ে সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে- তখনও সেই নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, সংশয় এবং অনেক প্রশ্ন উঠছে। কারণ সংস্কার প্রস্তাবের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শর্ত দিয়ে জামায়াত, এনসিপি এখন বিএনপির পাল্টা বা বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ও বিভক্তি বাড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা বলছেন, সংস্কার ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের বিষয় পাশ কাটিয়ে একটি ‘সাজানো’ নির্বাচন করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, জামায়াত ও এনসিপি এখন যেসব শর্ত সামনে এনে আন্দোলনে নামার কথা বলছে, তারা তাদের শর্ত বা দাবি আদায়ে কতদূর যেতে পারে, তারা কি নির্বাচন বর্জনের মতো অবস্থানে যেতে পারে? এই দলগুলোর শর্ত বিএনপিকে কী ধরনের চাপে ফেলতে পারে, এমন প্রশ্নেও চলছে নানা আলোচনা। নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপির মতপার্থক্য ছিল শুরু থেকেই। বিএনপি দ্রুত নির্বাচন দাবি করে আসছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলে আসছিলেন। সে সময় নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের সঙ্গেও বিএনপির সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। এক পর্যায়ে বিএনপি এ বছরের ডিসেম্বরেই নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরির পরিকল্পনা করছিল। সেই পরিস্থিতিতে অনেকটা আকস্মিকভাবে নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান বদলের পেছনে ছিল লন্ডন বৈঠক।
প্রধান উপদেষ্টা তার লন্ডন সফরে গত ১৩ জুন সেখানে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়। এই বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের একমত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। লন্ডন বৈঠক এবং তারপর একটি দলের নেতার সঙ্গে নির্বাচনের ব্যাপারে যৌথ বিবৃতি নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দল। শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতেই রোজার আগে নির্বাচনের ঘোষণা আসার পর তাতে জামায়াত, এনসিপি বা কোনো দলই আপত্তি করেনি। তবে জামায়াত, এনসিপি নির্বাচনের আগেই সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের শর্ত বা দাবি তুলেছে। এমনকি জাতীয় সংসদের চলমান নির্বাচনের পদ্ধতি পাল্টিয়ে ভোটের আনুপাতিক হার বা পিআর পদ্ধতি চালু করার দাবিকেও সামনে আনছে জামায়াত।
জামায়াত ও এনসিপির শর্ত কেন : ভোট যখন এগিয়ে আসছে, দল দুটি এক ধরনের চাপ অনুভব করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। এর ব্যাখ্যায় তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির প্রভাব রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এবং রাজনীতিতে। কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে বা সংসদের কোনো একটি আসনে এককভাবে জিতে আসা, এখনও সেরকম অবস্থান তৈরি করতে পারেনি এনসিপি। এই বাস্তবতা এখন বিবেচনায় নিতে হচ্ছে দলটিকে। ফলে নিজেরা যখন চাপ অনুভব করছে, তখন তারা বিভিন্ন দাবি বা শর্ত তুলে সরকার ও অন্য দলগুলোর ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছে।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ আবার মনে করেন, ভোটের রাজনীতিতে যেহেতু ভালো অবস্থান বা সেভাবে সম্ভাবনা তৈরি করা যায়নি, সেজন্য আসন নিয়ে সমঝোতা বা দরকষাকষির চিন্তা থেকেও বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল নিয়ে থাকতে পারে এনসিপি। যদিও তা মানতে রাজি নন দলটির নেতারা। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সংস্কার ও বিচারের বিষয়কে পাশ কাটিয়ে এখন নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। একারণে মানুষের প্রত্যাশায় চির ধরেছে’। নির্বাচন নিয়ে জামায়াতে ইসলামীও এক ধরনের চাপে পড়েছে বলা যায়। দলটির সংগঠিত শক্তি আছে এবং সেকারণে রাজনীতিতে তাদের একটি অবস্থান হয়েছে। কিন্তু জামায়াতের সংগঠিত শক্তির বাইরে সাধারণ মানুষের বিস্তৃত বা ব্যাপক সমর্থন নেই বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। অন্যদিকে, নির্বাচন ইস্যুতে সরব থাকা বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন বিস্তৃত, ব্যাপক। গত বছরের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির সমর্থন আরও বেড়েছে। ফলে ভোট হলেই বিএনপি ক্ষমতায়, এ ধরনের আলোচনায় রয়েছে রাজনীতিতে।
দল ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে, এমন সম্ভবনা যখন দেখা যাচ্ছে, সে সময় বিএনপির কোনো নেতা বা প্রার্থী পরাজিত হতে চাইবেন না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর এই পরিস্থিতি চাপে ফেলেছে জামায়াতকে। সেকারণে দলটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলেছে। তবে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে আন্দোলনের হুমকি দেওয়ার পেছনে জামায়াতের সূত্রগুলো কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করছে।
এর মধ্যে প্রথমত, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন বৈঠক ও যৌথ বিবৃতি দেওয়ার বিষয়কে জামায়াত মেনে নিতে পারেনি। কারণ এর মাধ্যমে একটি দলের পক্ষে সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছে তারা।
সেই লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় শেষপর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের এই সময় ঠিক করা এবং তা ঘোষণা করার ক্ষেত্রে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে জামায়াতের।
এছাড়া আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের বছরপূর্তিতে গত ৫ আগস্ট ঢাকায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সমাবেশ থেকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেছেন। সেদিনই রাতে তিনি বেতার-টেলিভিশনের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
পাঁচই আগস্টেই নির্বাচনের ঘোষণা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে জামায়াতের। দলটি মনে করে, জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার একইদিনে নির্বাচনের সময় ঘোষণার পেছনে কোনো পক্ষের চাপ থাকতে পারে। ঘটনাগুলোর ধারবাহিকতার উল্লেখ করে জামায়াত নেতারা বলছেন, একটি ‘ডিজাইনড’ বা সাজানো নির্বাচন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ধরনের চিন্তার কারণ হিসেবে দলটি বেশ কিছু বিষয় ও অভিযোগ সামনে আনছে। তাদের বড় অভিযোগ হচ্ছে, তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন বৈঠকের পর থেকেই সারাদেশে প্রশাসন বিএনপির প্রতি দুর্বলতা দেখাচ্ছে। প্রশাসন বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে অন্য দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকছে না।
জাামায়াত ও এনসিপি তাদের শর্ত বা দাবির ব্যাপারে বিভিন্ন যুক্তি দিচ্ছে। কিন্তু জামায়াতের অবস্থান বোঝা খুব কঠিন বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, দল দুটোর এমন অবস্থান বিএনপির ওপর চাপ তৈরির কৌশল হতে পারে। সেখানে নির্বাচনে আসনের ব্যাপারে দরকষাকষির বিষয়ও থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে এও বলছেন, তাদের এ ধরনের অবস্থানের কারণে নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, সংশয় বা অনিশ্চয়তা আরও বাড়তে পারে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে বিভেদের কারণে আগামী নির্বাচন সংঘাতপূর্ণ হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সেক্ষেত্রে সুযোগ নেবে এবং তারাও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সব ধরনের চেষ্টা করবে। সেজন্য আমি মনে করি গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষ ২০১৮ মডেলের একটি জোট করলে এই আশঙ্কা দূর করা সম্ভব হবে’।
শর্ত বা দাবিগুলো কী : জামায়াত ও এনসিপির কমন দাবি হচ্ছে, সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই সনদ তৈরি করছে, সেই সনদ বাস্তবায়নের আইনগত ভিত্তি দিতে হবে এবং সনদ বাস্তবায়ন করে তার ভিত্তিতে নির্বাচনে যেতে হবে। এখানে বিএনপির অবস্থান কিন্তু ভিন্ন। তারা চায়, নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়গুলো ছাড়া সংবিধানসহ অন্য বিষয়ে সংস্কার নির্বাচিত সংসদ করবে। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্রেও সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাচিত সংসদকে দেওয়া হয়েছে। আর এতে আপত্তি জামায়াত ও এনসিপির। তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা নির্বাচনের আগে এখন থেকেই সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির দাবি তুলেছে।
উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ, সংসদের উভয় কক্ষে ভোটের আনুপাতিক হার বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিকে আবারও জোরালোভাবে সামনে এনেছে জামায়াত। এসব দাবিতে তাদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দলও রয়েছে। এই দলগুলো রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়ার কথাও বলছে। তবে বিএনপি শুরু থেকেই পিআর পদ্ধতিরও বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোতে একটিমাত্র দল ইসলামী আন্দোলন পিআর পদ্ধতির কথা তুলেছিল।
এছাড়া এটি আলোচ্যসূচিতেও ছিল না। এখন ওই দাবি আবার সামনে আনায় এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিএনপি নেতারা। বিভিন্ন শর্ত তুলে আন্দোলনের হুমকি দেওয়ার বিষয়কে নির্বাচন ভণ্ডুল করার কৌশল বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। তবে জামায়াতে নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কারের সনদ আগে বাস্তবায়ন করতে হবে’। ‘যারা এতে বাধা তৈরি করছে, তারাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়’, এই অভিযোগও করেন ডা. তাহের।
এনসিপি নেতাদের বক্তব্যও একইরকম। দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘নতুন সংবিধান, সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পাশ কাটিয়ে সরকার এখন নির্বাচনকে একমাত্র অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছে। সেজন্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে’।
জামায়াত ও এনসিপি কতদূর যেতে পারে : দল দুটির নেতারা তাদের দল ও দলের বাইরে বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য-বিবৃতিতে তাদের দাবিগুলোকে তুলে ধরছেন।
জামায়াত, এনসিপির সূত্রগুলো বলছে, তারা রাজপথে সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি নিতে পারে। নির্বাচনের আগে সংস্কার সনদের বাস্তবায়নসহ তাদের দাবিগুলো পূরণ না হলে ভোট বর্জনের মতো অবস্থান নেওয়ার চিন্তাও ওই দলগুলোর ভেতরে রয়েছে বলে জানা গেছে।
জামায়াত, এনসিপি নির্বাচন বর্জন করলে সেই ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে না। এতে নির্বাচন প্রশ্নবদ্ধি হবে এবং তা বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তারা বলছেন, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে নির্বাচনে বিএনপি খুশি। কিন্তু তাতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে না, সেই অভিযোগ থাকবে। এছাড়া নির্বাচনি দৌড়ে এখনকার প্রভাবশালী দলগুলোও যদি না থাকে, সেটা বিএনপির জন্য চাপ বাড়াবে। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদণ্ড দুজনেই বিবিসি বাংলার সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন ঘিরে জামায়াত ও এনসিপি নেতাদের বক্তব্যকে মাঠের বক্তৃতা বলে উল্লেখ করছেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, দলগুলোর তাদের স্ব স্ব অবস্থানের পক্ষে চাপ তৈরির বা দাবি আদায়ের চেষ্টা থাকবে। কিন্তু সব দলই ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনে অংশ নেবে।
যদিও জামায়াত ও এনসিপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। কিন্তু মনে হয় না- সরকার এখনই আবার আলোচনার পথে হাঁটবে। অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণার পর এখন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য এরইমধ্যে বলেছে যে, তারা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সেখানে নির্বাচনের তফসিল ও পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সংবিধান সংস্কার বা এর বাস্তবায়নের দাবিদফা নিয়ে আলোচনা করার ফোরাম সেটি নয়। অন্যদিকে, বিশ্লেষকদের পাশাপাশি রাজনীতিকদেরও অনেকে বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের ভেতরেই একটি পক্ষের জোরালো আপত্তি ছিল। সেটিও নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, সংশয়ের পেছনে অন্যতম একটি কারণ।
পরিস্থিতিটা কি নির্বাচনের জন্য হুমকি : নির্বাচনের আগে কোনো দল যদি দাবিদফা নিয়ে রাজপথে কর্মসূচি দেয়, সেটা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। জামায়াত ও এনসিপি যদিও বলছে, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচনে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু নির্বাচনের আগে সংস্কারের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি থেকে তারা সরবেন না। অন্যদিকে, বিএনপিও তাদের অবস্থানে কোনো ছাড় দেবে না। ফলে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, এখন গণতন্ত্রে ফিরতে ভোটের প্রয়োজন। কিন্তু কোনো পক্ষের বা কোনো দলের কারণে নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে এর দায় তাদের ওপরই বর্তাবে। ফলে কোনো রাজনৈতিক দল সেই দায় নিতে চাইবে না।
