অনুমোদনের অপেক্ষায় রোডম্যাপ

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি জানান, একটি কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) তৈরি করা হয়েছে এবং তা অনুমোদনের জন্য কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা জানান।

সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকার সীমানা নিয়ে আসা ৮২টি আপত্তির শুনানি আগামী ২৪ আগস্ট থেকে একটানা চারদিন অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি শেষে দ্রুত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনআইডি সংশোধনের জন্য দেওয়া যে আবেদনগুলো প্রাথমিকভাবে বাতিল হয়েছে- সেগুলো পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে এ ধরনের আপিলের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। ইসি মনে করে, যদি ডাটা এন্ট্রি আরও নিখুঁত হয়, তাহলে আপত্তির সংখ্যা আরও কমে আসবে।

ভোটকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আখতার আহমেদ বলেন, কমিশনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে না বরং বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোতেই ভোটারদের উপস্থিতি সমন্বয় করা হবে। বর্তমানে প্রতি ৫০০ ভোটারের জন্য একটি বুথ আছে, যা ভবিষ্যতে ৬০০ করা হতে পারে।

রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে তিনি জানান, যে ২২টি রাজনৈতিক দলের আবেদন মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল, তাদের কাজ চলছে। যাদের আবেদন বাতিল বা বিবেচনাযোগ্য মনে হয়নি, তাদের সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। বাতিল হওয়ার পেছনে কোন কোন শর্ত পূরণ হয়নি, তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ইসির সচিব বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো উদ্বেগ নেই। সবার নিজস্ব কাজ গুছিয়ে নিলেই হবে।

২৪ আগস্ট থেকে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের শুনানি শুরু : জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনি এলাকাগুলোর পুনর্র্নিধারিত সীমানা সম্পর্কে আপত্তি বা পরামর্শ দাখিল করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই আগামী ২৪ আগস্ট থেকে সংসদীয় আসনের খসড়া সীমানা নিয়ে আপত্তি শুনানি শুরু করবে ইসি; যা চলবে আগামী ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত থাকবেন শুনানিতে। গতকাল সোমবার ইসির উপ-সচিব মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়েছে, ২৪ আগস্ট কুমিল্লা অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি করা হবে। এদিন দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ৩ ও ৫; আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত কুমিল্লা-৬, ৯, ১০ ও ১১; সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, চাঁদপুর-২ ও ৩, ফেনী-৩, লক্ষ্মীপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হবে।

২৫ আগস্ট খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এ দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা-৩, ৪, যশোর-৩, ৬, বাগেরহাট- ১, ২ ও ৩; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঝালকাঠি-১, বরগুনা-১, ২, পিরোজপুর-১, ২, ৩, চট্টগ্রাম-৩, ৫, ৮, ১৯, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান আসনের শুনানি হবে।

২৬ আগস্ট ঢাকা অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ-১, ২, ৩, নরসিংদী-৪, ৫, নারায়ণগঞ্জ-৩,৪,৫; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-১,২,৩,৪,৫,৬,৭,১০,১৪,১৫,১৬,১৮ ও ১৯ আসনের শুনানি হবে।

২৭ আগস্ট রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও সিলেট অঞ্চলের দাবি-আপত্তির শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-১, ২, রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-২, ৫, ৬, পাবনা-১; আড়াইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৬, জামালপুর-২, কিশোরগঞ্জ- ১, সিলেট-১, ফরিদপুর-১, ৪, মাদারীপুর-২, ৩, শরীয়তপুর- ২ ও ৩ আসনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আরও জানানো হয়, শুনানি শেষে রায় সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেবে ইসির আইন শাখা।

জানা যায়, গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৩টি আসনের সীমানা নিয়ে ১ হাজার ৭৬০টি দাবি-আপত্তি জমা পড়ে ইসিতে। এগুলোই নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি।

৩০ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়। বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে গতকাল সীমানা পুনর্র্নিধারণ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ৬৪ জেলার গড় ভোটার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০। এটা ধরে জেলায় একটি আসন বাড়ালে তা গাজীপুরে হবে। এ গড়ের কম বাগেরহাটে একটি কমালে সমতা চলে আসে। দুই জেলার আসনই এফেক্টেড হয়েছে। আর কোথাও ঝামেলা নেই। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে।

সর্বশেষ কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে, ইসি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ১০টি আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করেছিল।

৮৫ কর্মকর্তাকে পুনর্বহাল করে প্রজ্ঞাপন জারি ইসির : চাকরিচ্যুত ৮৫ জন উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইসি। সোমবার এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এর আগে, ৮৫ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। রায়ে চাকরি হারানো কর্মকর্তাদের সব সুযোগ সুবিধা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন জোট সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ৮৫ জন কর্মকর্তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চাকরিচ্যুত করা হয়। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও চারটি পৃথক রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চাকরি ফেরতের এ রায় দেন।