ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন সিদ্ধান্তে অটল সরকার
প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল ইসলাম অমর

গত ৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর নির্বাচন আয়োজনে সব ধরনের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশনও। শিগগিরই জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি। এরপরও ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন হবে কি হবে না এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে নানা সংশয় থাকলেও ঘোঘিত সময়ই নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অটল অন্তর্বর্তী সরকার। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময় থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।
আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। আসিফ নজরুল বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের, দলের না। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, আমরা ফেব্রুয়ারিতে চলে যাব।’ এক প্রশ্নে জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দল বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কথা বলে। ওইটা একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। আপনারা এটা সব সময় দেখেছেনই। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এসব রাজনৈতিক কথাবার্তা, এখনো ঠিক ওরকমভাবেই কথাবার্তা হচ্ছে। কথাবার্তায় খুব বেশি গুণগত পরিবর্তন হয়নি। ফলে নির্বাচনের সময়ে কে কি বলবেন, এটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই দেখবেন।’ তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আছি। আমাদের স্যার (প্রধান উপদেষ্টা) সর্বজন স্বীকৃত একজন বিশ্বপর্যায়ে নন্দিত মানুষ। উনি নিজে ঘোষণা করেছেন। তার এ ঘোষণা থেকে আমাদের পিছে আসার বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই।’
নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে বিভিন্ন দলের নিজস্ব হিসাব-নিকাশ ও রাজনীতি আছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। গত রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ‘এনসিপির একজন নেতা বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। বিএনপি চাচ্ছে যথাসময়ে নির্বাচন। নির্বাচন পিছিয়ে যাবে কি না, সরকারের পরিকল্পনা কী?’ জানতে চাইলে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকারের পরিকল্পনা তো প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় নিজে পরিষ্কার করে বলেছেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তাদের নিজস্ব হিসাব-নিকাশ আছে, নিজস্ব রাজনীতি আছে। এটার সঙ্গে তো সরকারের অবস্থান বদলের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার বলেছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং সেই মোতাবেক নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে, এটাই হচ্ছে সরকারের অবস্থান। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে।’
এদিকে, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো সংশয় নেই বলে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বিএনপি বিশ্বাস করে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। তিনি বলেন, যারা মাঠে নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন, তারা কৌশলগত কারণে বলছেন। এ বিষয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই।
‘প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা করা সময়েই’ নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীল আলম চৌধুরী বলেছেন, কে কী বলল, শোনার দরকার নেই। গত শনিবার ঢাকার মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেট সংলগ্ন নতুন কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়ে নির্বাচন করতে ‘দেওয়া হবে না’ বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল জোর দিয়ে বলছে। জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, ওটার উপরে কারও কোনো কথা নেই। উনি যে মাসের কথা বলেছেন, সে মাসে নির্বাচন হবে। কে কী বলল, ওটা শোনার আমাদের দরকার নেই।’ তিনি বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলবে, তবে জনগণ যখন নির্বাচনমুখী হবে, কেউ বাধা দিতে পারবে না, কারও কোনো শক্তি নেই নির্বাচন বন্ধ করার।’
নির্বাচন নিয়ে যখন সন্দেহ-সংশয় বাড়ছে, তখন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত বুধবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা দলের কথায় নির্বাচন বন্ধ হবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা করছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে কালোটাকার ব্যবহার বন্ধে অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। তবে সেটা নির্ভর করবে রাজনীতিবিদদের ওপর।’
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। যারা সন্দেহ করছেন তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন সেই অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। গত শুক্রবার মাগুরা গিয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের জন্য পুরো জাতি প্রস্তুত। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানও নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে কাজ করতে শুরু করেছে। এই বর্ষার মৌসুম শেষ হলেই পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনের হাওয়া লেগে যাবে। নির্বাচনের যে মহোৎসব সেটা আপনারা দেখতে পাবেন। যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তারা মানুষের কাছে যাবেন। মানুষ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। তখন সত্যিকার অর্থে একটা নির্বাচনের আমেজ মানুষের মাঝে তৈরি হবে। তখন সব সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে এবং রোজার আগেই হবে। সূত্রমতে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। যখন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ভোটের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা দিয়ে সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তখনও সেই নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ, সংশয় এবং অনেক প্রশ্ন উঠছে। কারণ সংস্কার প্রস্তাবের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শর্ত দিয়ে জামায়াত, এনসিপি এখন বিএনপির পাল্টা বা বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ও বিভক্তি বাড়ছে।
