ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল

প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপের খসড়া চূড়ান্ত করেছে এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ রোডম্যাপ যে কোনো দিন প্রকাশ করা হবে। রোডম্যাপ অনুযায়ী সব কাজ শেষ করে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, ২৪টি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সংসদের রোডম্যাপের খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইসি। এ রোডম্যাপ চলতি সপ্তাহে ঘোষণার করার কথা থাকলেও ইসি সচিব দেশে না থাকা এবং রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনে বিভিন্ন দল সিইসির সঙ্গে দেখা করতে আসায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হতে পারে। তবে খুব দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।

ইসি ও সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি তারিখ সামনে রেখে কার্যক্রম চলছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির ৫ অথবা ৮ তারিখে ভোটগ্রহণ হতে পারে। এ দুটি দিন নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার ভোগ্রহণের সম্ভবনা বেশি। রোববারের আগে দুদিন সরকারি ছুটি থাকায় এ দিনটিকে ভোটের জন্য অগ্রাধিকার দিচ্ছে ইসি। এছাড়া গত তিনটি সংসদ নির্বাচন রোববারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তফসিল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রোডম্যাপে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ভোটার তালিকা হালনাগাদ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, তফসিল ঘোষণার আগে সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা প্রণয়ন, বিভিন্ন প্রকার ম্যানুয়াল, নির্দেশিকা, পোস্টার, পরিচয়পত্র মুদ্রণ স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্বাচনি সরঞ্জামাদি ব্যবহার উপযোগীকরণে কমিটি গঠন করেছে ইসি।

এছাড়া, নির্বাচনি বাজেট বরাদ্দ সংক্রান্ত কার্যক্রম, নির্বাচনের জন্য জনবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, ভোটে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কার্যক্রম যথা সময়ে শেষ করতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। রাজনৈতিক দল প্রচারণা কীভাবে চালাবে, সেটাও নির্ধারণ করেছে ইসি।

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়ে এক পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে নির্বাচনি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা রোধে কার্যকরব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে তিনি বলেন, কোনোক্রমেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠতে পারবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, রাষ্ট্রের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। ভোটার যেন নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রেস সচিব বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাসে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

১০ সেপ্টেম্বর ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ : আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। গতকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহের সই করা এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

চিঠিতে ইসি জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনে অনুমোদিত হয়েছে। এরপর ওই নীতিমালা গত ২৬ জুন বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা সংরক্ষণ ও চূড়ান্ত করে ২৫ দিন আগে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশের বিধান রয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার ওপর দাবি/আপত্তি গ্রহণ ও দাবি/আপত্তিগুলো ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী নিষ্পন্ন করে ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা প্রয়োজন।

ইসি আরও জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রকাশিত ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালার আলোকে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারণ করে এলাকাভিত্তিক ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ, খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি গ্রহণ ও দাবি-আপত্তিগুলো নীতিমালা অনুযায়ী নিষ্পন্ন করে সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে। খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি গ্রহণের শেষ দিন ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রাপ্ত দাবি-আপত্তি নিষ্পতির শেষ তারিখ ১২ অক্টোবর। খসড়া ভোটকেন্দ্রের সম্ভাব্য তালিকা চূড়ান্ত করা হবে ২০ অক্টোবর।

এ অবস্থায় উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী এবং ভোটকেন্দ্র স্থাপনের নীতিমালা অনুসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি খসড়া ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাগত তথ্য (সফটকপিসহ) নির্ধারিত তারিখের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে নির্বাচন সহায়তাণ্ড১ শাখায় পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল : রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্তত ২২টি দল উত্তীর্ণ হয়েছে। দ্রুত এসব দলের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরপর নিবন্ধনের জন্য ইসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

গত ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করে দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্তপূরণ করতে পারেনি। এরপর সব কটি দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত এনসিপিসহ ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়। যাচাই-বাছাই শেষে উত্তীর্ণ হওয়া ২২টি দল হলো- ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদণ্ডশাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।

সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে শুনানি শুরু রোববার : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে সংক্ষুব্ধদের শুনানি আগামী ২৪ আগস্ট থেকে শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুনানি চলবে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ২৪ আগস্ট কুমিল্লা অঞ্চলের শুনানি হবে। এদিন দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ৩ ও ৫; আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টায় কুমিল্লা-৬, ৯, ১০ ও ১১; সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, চাঁদপুর-২ ও ৩, ফেনী-৩, লক্ষ্মীপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হবে। ২৫ আগস্ট খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা-৩, ৪, যশোর-৩, ৬, বাগেরহাট-১, ২ ও ৩; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঝালকাঠি-১, বরগুনা-১, ২, পিরোজপুর-১, ২, ৩, চট্টগ্রাম-৩, ৫, ৮, ১৯, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান আসনের শুনানি হবে। ২৬ আগস্ট ঢাকা অঞ্চলের শুনানি হবে।

এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মানিকগঞ্জ-১, ২, ৩, নরসিংদী-৪, ৫, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪, ৫; আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ১০, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯ আসনের শুনানি হবে।

শেষদিন ২৭ আগস্ট রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও ফরিদপুর অঞ্চলের শুনানি হবে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পঞ্চগড়-১, ২, রংপুর-১, কুড়িগ্রাম-৪, সিরাজগঞ্জ-২, ৫, ৬, পাবনা-১; আড়াইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-৬, জামালপুর-২, কিশোরগঞ্জ-১, সিলেট-১, ফরিদপুর-১, ৪, মাদারীপুর-২, ৩, শরীয়তপুর-২ ও ৩ আসনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০ জুলাই ৩৯ আসনে পরিবর্তন এনে সংসদীয় আসনের খসড়া তালিকা প্রকাশ করে কমিশন। খসড়া তালিকায় দাবি-আপত্তি থাকলে ১০ আগস্টের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। এই সময়ে মধ্যে ৮৩টি আসন থেকে ১ হাজার ৭৬০টি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। এসব দাবি-আপত্তির শুনানি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে সংস্থাটি।