ছয় চুক্তি ও সমঝোতা সই করছে ঢাকা-ইসলামাবাদ

* বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী * অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দুই দেশের সরকারের বিষয় : জামায়াত নেতা তাহের * সম্পর্ক বৃদ্ধিতে একাত্তরের ইস্যু অবশ্যই সমাধান করা উচিত : এনসিপি

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের আশীর্বাদপুষ্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের ইতি টানে ভারত। বন্ধ করে দেয় পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় আমদানিকৃত পণ্য। বাংলাদেশের মানুষকে বেকায়দায় ফেলতে ভিসাপ্রক্রিয়া কঠিন করে। বাংলাদেশকে এক ঘরে করে রাখতে চায়। সেই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায় পাকিস্তান ও চীন। সরকারের পটপরিবর্তনের পর পাকিস্তানের কনটেইনার জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নে সমুদ্রের পাশাপাশি আকাশ পথে এগোনোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেজন্য পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর পর দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্বার্থে বাণিজ্য খাত উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি সময়ে, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্কের হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক বড় সাফল্য। এবার পাকিস্তানের সঙ্গে ছয় চুক্তি সমঝোতা সই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সরাসরি জাহাজ পরিষেবা পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর একটি বড় পদক্ষেপ। দুই দিনের সফরে গতকাল শনিবার দুপুর ২টায় বিশেষ ফ্লাইটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার। তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। এর আগে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায় এসে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈষম্যবিরাধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ইসহাক দারকে নিয়ে পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার তৃতীয় সদস্য ঢাকায় এলেন। গত জুলাইয়ে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভী। আর গত বুধবার ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান। এটি বাংলাদেশ-পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক। এর আগে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হলেও তা হয়েছে কোনো অন্য বৈঠকের ফাঁকে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি পারভেজ মোশারফের ঢাকা সফরের সময় উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। তবে এবারই প্রথম শুধু দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে কেন্দ্র করে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক সূচি: গতকাল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সকাল ১০টায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার আগে তৌহিদ হোসেন ও ইসহাক দার একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ইসহাক দার নিজ দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। আর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বৈঠকের পর ইসহাক দারের সফর উপলক্ষে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছে সরকার। বিকালে ৪টা ১৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর তিনি বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে বেশ কয়েকটি বৈঠকের কথা রয়েছে। ২৪ আগস্ট রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা সই : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে কেন্দ্র করে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের কথা রয়েছে দুই দেশের। সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া চুক্তির তালিকায় রয়েছে দুই দেশের সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি। চূড়ান্ত হওয়া এমওইউগুলো হচ্ছে, দুই দেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, দুই দেশের মধ্যে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, দুই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিআরআই) মধ্যে সহযোগিতা। বৈঠককে কয়েকটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতা, অর্থনীতি এবং অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে আলাপ করবে দুদেশ। এছাড়া আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবে ঢাকা ও ইসলামাবাদ।

বিএনপির সঙ্গে বৈঠক পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর : রাজধানীর গুলশানে গতকাল সন্ধ্যায় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার, সাবেক হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী, বর্তমান হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের গভর্নর তারিক বাজওয়া।

জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর : ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। গতকাল শনিবার বিকাল পৌনে ৫টায় ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। বৈঠক শেষে জামায়াত নেতা তাহের বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো রয়েছে, তা দুই দেশের সরকারের বিষয় বলে মনে করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গও এসেছে।

আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং কীভাবে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং আঞ্চলিক জোট সার্ককে কীভাবে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রায় ১৫ বছরের বৈরী সম্পর্ক কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে জামায়াতের এই নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিছুটা একপেশে ছিল। তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ সরকার বা আমরা সবাই মনে করি যে এই অঞ্চলে সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক থাকা দরকার। সেটার ব্যাপারে দুই পক্ষই জোর দিয়েছি।’ সরকারের সঙ্গে আজ রোববার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক রয়েছে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যেসব অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, সেগুলো অনুকূল পরিবেশে দ্রুত শেষ করা দরকার।

‘৭১-এর অমীমাংসিত ইস্যুগুলো বৈঠকে আপনারা তুলেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এসব বিষয় হচ্ছে দুই দেশের সরকারের আলোচনার বিষয়। আমরা আশা করি, সরকার সেগুলো আলোচনা করবে।’ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন কখন কীভাবে হবে সেটা প্রাসঙ্গিকভাবে আসছে। এটা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বে চলমান আগ্রাসনে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐক্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে থাকা নিয়ে ইসহাক দারের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে।

এনসিপির সঙ্গে বৈঠক পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর : জামায়াত ইসলামীর আগে গতকাল ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিদল। এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্কের অন্যতম অন্তরায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু অমীমাংসিত ইস্যু। ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠকে একাত্তরের বিরোধ সমাধানে আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জবাবে ইসলামাবাদ বলেছে, তারা প্রস্তুত।

বৈঠক শেষে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, পাকিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের যে ধারণা, সেটা তাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এনসিপি মনে করে, বিগত সময়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে যে শত্রুর ভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের যে ধারণা, সেটাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একাত্তরের ইস্যুকে অবশ্যই সমাধান করা উচিত। আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের শিক্ষায়, অর্থনীতিতে এবং সংস্কৃতিতে সম্পর্ক উন্নয়নের যে সুযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বড় ভাই সুলভ আচরণ যেন কাউকে প্রভাবিত না করে। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের যেসব প্রতিবেশী দেশগুলো রয়েছে, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক হবে ভ্রাতৃত্বের। তাদের মধ্যে কোনো ধরনের বড় ভাই সুলভ, আগ্রাসন, আধিপত্যবাদী মানসিকতা থাকবে না, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। ইসকাহ দার কী বলেছেন, এমন প্রশ্নে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, দক্ষিণ এশিয়াতে একটা যুদ্ধ হয়েছিল। পানি নিয়ে আবার যদি কোনো যুদ্ধ আসে, যেহেতু আমাদের অনেকগুলো নদী রয়েছে, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আমাদের নদীগুলো কীভাবে ভালো থাকতে পারে। পাকিস্তান যে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ১৫-২০ বছরে ওষুধ শিল্পে সহযোগিতা তৈরিতে তারা অনেকভাবে চেষ্টা করেছে। তাদের ওষুধ খাতের কাঁচামাল অনেক ভালো। সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে আমাদের ওষুধশিল্প খাতের খরচ কমিয়ে আরও বেশি যেন রপ্তানি করতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সুযোগটা আমাদের দুই দেশের মধ্যে হয়নি। তিনি আরও বলেন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এখানে করা যায় কিনা, সেটা নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামগুলো, সেগুলো কীভাবে উন্নয়ন করা যায়। প্রতিরক্ষা খাতে কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আলোচনায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সার্ক নিয়ে বৈঠকের বিষয়ে নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ভারতের কারণে সার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে, দক্ষিণ এশিয়ায় সার্ককে কীভাবে আরও সক্রিয় করা যায় এ বিষয়ে কথা বলেছি। পাকিস্তানও পরমাণু অস্ত্রের দেশ। দক্ষিণ এশিয়াতে পাকিস্তানেরও অনেক প্রভাব রয়েছে। কীভাবে সার্ককে সক্রিয় করা যায়, অর্থনৈতিক জায়গায় আমরা কীভাবে সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে পারি, সে বিষয়ে কথা হয়েছে। একাত্তরের বিরোধ সমাধানের বিষয়ে ইসহাক দার কী বলেছেন, জানতে চাইলে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, আমরা তাদের বলেছি, একাত্তরের বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত। তারা বলেছে, তারা এটাতে প্রস্তুত।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে ইসলামাবাদ : বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর মোহাম্মদ ইসহাক দার। এটি ১৩ বছরের মধ্যে প্রথমবার পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বাণিজ্য ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, প্রায় ১৩ বছর পর একজন পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন, এই সফর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ২০১২ সালের নভেম্বরে শেষবারের মতো কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় সরকারি সফরে এসেছিলেন। সেই সময় হিনা রব্বানী খার ছয় ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।

উল্লেখ্য, এর আগে গত শুক্রবার চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান বলেন, এ বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে। পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য আগ্রহ রয়েছে। তবে বিমান সংযোগ না থাকলে এটি সম্ভব নয়। আমরা এই বছরের শেষ নাগাদ সরাসরি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে ফ্লাইট চূড়ান্ত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দুই দেশে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হলে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, ব্যবসায়িক সংযোগ, পণ্য পরিবহনসহ সবকিছু আরও সহজ হবে। আজ রোববার জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ নিয়ে চুক্তি সই করব। দুই দেশের মধ্যে কী কী করতে হবে, তা এই গ্রুপ নির্দিষ্ট করবে। এর বাইরে আছে জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন। এটি দুই দেশের অর্থমন্ত্রীদের নেতৃত্বে কাজ করে। এ কমিশন শিক্ষা বিনিময়, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্পসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো দেখবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক পথনকশা (রোডম্যাপ) তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান জাম কামাল খান।

বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমাদের বাণিজ্যে বৈচিত্র্য ও সক্ষমতা বাড়াতে যতগুলো দেশের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারা সম্ভব, সবার সঙ্গে উদারভাবে সংযুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। বিক্রয় প্রবৃদ্ধি ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ মূল্যে আমদানির সক্ষমতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে আমরা পাকিস্তানের প্রতিপক্ষের (বাণিজ্যমন্ত্রী) সঙ্গে সুন্দর সুন্দর সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করেছি।’ শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাণিজ্য বৃদ্ধি করা, আমদানি ও রপ্তানির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং যেসব খাতের কথা জাম কামাল খান বলেন, ‘তার বাইরেও আমরা অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, বাংলাদেশের সব ব্যবসায়ীর একত্র শক্তিতে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি হবে।’