ভারত থেকে ঠেলে পাঠানো সোনালি বিবি এখন ‘রাষ্ট্রহীন’
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি বর্তমানে ‘রাষ্ট্রহীন’ অবস্থায় রয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে স্বামী ও আট বছরের ছেলেসহ তাঁকে দিল্লি থেকে আটক করে পুলিশ। একপর্যায়ে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ সন্দেহে তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পুলিশ তাঁদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে। ২৯ বছর বয়সী সোনালি বিবির পৈতৃক বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, সোনালি বিবি, তাঁর ছেলে এবং স্বামীকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই জেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের আরেকটি পরিবারকেও আটক করা হয়েছে। এই পরিবারের সদস্যরা হলেন সুইটি বিবি (৩২) এবং তাঁর দুই ছেলে। তাদের বয়স ৬ ও ১৬ বছর। এমন একসময়ে এই দুই ঘটনা ঘটল, যখন কলকাতা হাইকোর্টে এই দুই নারীর পরিবারের দায়ের করা হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের শুনানি চলছে। হেবিয়াস কর্পাস শুনানিতে কোনো ব্যক্তিকে আইনবহির্ভূতভাবে আটক করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম গত বৃহস্পতিবার ফোনে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘তাদের ভারতের আসাম সীমান্তবর্তী কুড়িগ্রাম থেকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। এরপর তাঁরা কিছুদিন ঢাকায় কাটিয়েছেন। সেখানে বেশির ভাগ সময় রাস্তার ওপর থেকেছেন। গত এক মাস ধরে তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় থাকছিলেন। আমরা তাঁদের গ্রেপ্তার করেছি।’
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সোনালি ও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ভারতীয় নথিপত্র পাওয়া গেছে। শুক্রবার তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়েছে। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। যেহেতু এখানে নারী ও শিশু রয়েছে, তাই আমরা বিষয়টি যথাযথ সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে সামাল দিচ্ছি।’ সোনালি বিবির পৈতৃক বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় হলেও দুই দশক ধরে তাঁরা দিল্লিতে থাকছেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা সেখানে ভাঙারি কুড়ানো এবং গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
সোনালির মতোই সুইটি বিবির পৈতৃক বাড়িও বীরভূম জেলায়। দুই নাবালক ছেলেসহ এই পরিবারকেও প্রায় একই সময়ে আটক করা হয়। উভয় পরিবারকে প্রথমে দিল্লির কে. এন. কাতজু মার্গ থানায় আটক রাখা হয়েছিল। পরে তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর পর একটি অজ্ঞাতনামা স্থানে সোনালি ও অন্যরা সাহায্যের জন্য কাকুতি-মিনতি করছেন।
বাংলাদেশে সোনালি ও সুইটিদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্র্যান্ট লেবার ওয়েলফেয়ার বোর্ডের চেয়ারম্যান সমীরুল ইসলাম। এটি ‘গভীর উদ্বেগের’ বিষয় মন্তব্য করে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার এই সদস্য বলেন, ‘সোনালি গর্ভবতী এবং তাঁদের সঙ্গে শিশুও রয়েছে। তাঁরা সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। সব ধরনের আইনি উপায়ে আমরা তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আদালতে শুনানি চলছে।’
পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চের আহ্বায়ক অর্ণব পাল বলেন, ‘এখন তাঁরা (সোনালি-সুইটিরা) রাষ্ট্রবিহীন মানুষে পরিণত হয়েছেন। আমাদের মতে, আইনি লড়াইয়ের চেয়ে নেপথ্যের সংলাপই বেশি কার্যকর। দুই দেশের মধ্যে নেপথ্য আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের দ্রুত ফেরানোর দিকে জোর দেওয়া উচিত।
দীর্ঘসূত্রতার আইনি লড়াই তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।’ গত বুধবার হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের যৌথ বেঞ্চ বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত গুরুতর’ বলে মন্তব্য করেছেন। এর আগে কেন্দ্রের পক্ষে উপস্থিত অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল অশোক চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই, কলকাতা হাইকোর্টে এর শুনানি হতে পারে না। তবে কলকাতা হাইকোর্টের যৌথ বেঞ্চ আগামী ১০ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন। বেঞ্চ বলেছেন, ‘এটি একটি গুরুতর বিষয়। এ বিষয়ে সাংঘর্ষিক রায় হওয়া উচিত নয়।’
সোনালি ও সুইটিদের আটকের আগে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের আরও রাজ্য থেকে কথিত অবৈধ বাংলাদেশি আটকের অভিযান চালাচ্ছে ভারতের পুলিশ। এতে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে বেশ কিছু বাংলাভাষী অভিবাসী শ্রমিককে আটক করা হয়। কিন্তু এসব আটক ব্যক্তির অনেকের পৈতৃক বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগীদের পরিবার।
এভাবে অনুপ্রবেশকারী অভিযোগে মুম্বাই ও রাজস্থান থেকে আটক করে ৯ জনকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে সে দেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছিল। পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁদের ফেরত এনেছে।
