বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ
‘ভুল ধরিয়ে দিতে পারলে করজোড়ে ক্ষমা চাইব’
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে রীতিমত তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। দল থেকে শোকজও করা হয়েছে তাকে। যার জবাব দেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় তার বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন কয়েকজন। গত রোববার মধ্যরাত থেকে ‘বিপ্লবী ছাত্র জনতা’ ব্যানারে কনকর্ড টাওয়ারের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করছেন। ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’, ‘জুলাই রাজবন্দী’সহ কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি থেকে গত রোববার ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে ফজলুর রহমানের বাসার সামনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার মাঝে ব্যানার বিছিয়ে বসে আছেন ৮ থেকে ১০ জন। কিছুক্ষণ পরপর তারা ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। পাশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অবস্থান নিয়েছেন।
‘জুলাই রাজবন্দি’ নামে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সৈয়দ মাহাদী হাসান বলেন, ‘ফজলুর রহমান জুলাইকে অবমাননা করেছেন। জুলাই বিপ্লবকে কালো শক্তি বলেছেন। আমরা তাঁকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি (ফজলুর রহমান) যে দাম্ভিকতা দেখিয়েছেন তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। আমরা গতকাল রাত থেকে এখানে অবস্থান নিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যাব না।’
এ বিষয়ে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের বাসার সামনে ৮ থেকে ১০ জন ব্যক্তি অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছেন। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে।
এদিকে, গতকাল সোমবার গণমাধ্যমের সামনে মুখ খুললেন ফজলুর রহমান। তিনি দাবি করেন, পুরো বিষয়টা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সবার সামনে। সেই সঙ্গে, যদি তার বক্তব্যে কেউ ভুল ধরিয়ে দিতে পারেন, তাহলে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইবেন বলেও জানিয়েছেন। এদিন তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘পকানো ভাইরাল হয় নাই। এটা ইউটিউবে অনেক কিছু করা যায় (কারসাজি)। আমার সমস্ত বক্তব্যটা আপনারা তাদেরকে দিতে বলেন, এই দুই লাইন দিয়ে, ছবির নিচে হেডিং দিয়ে ওই ‘ফজলুর রহমান বলেছে ইউনূসকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে,’ এইসব তো এই দেশে হইতেছে। আমার টোটাল বক্তব্যটা লাগবে, কোথায় কখন বলেছি, সেটা লাগবে’।
এ সময় তিনি দাবি করে বলেন, যদি তার বক্তব্যে ভুল ধরিয়ে দিতে পারেন কেউ, তাহলে হাত জোড় করে ক্ষমাও চাইব। তার কথায়, ‘আমার বক্তব্যটা সামনে এনে কেউ যদি আমাকে বুঝাইতে পারে যে এটা আপনি ভুল বলেছেন, তাহলে আমি সঙ্গে সঙ্গে হাত জোড় করে মাফ চাইব। কিন্তু পুরো বক্তব্যটা বাজাতে হবে, আমি কী বলেছি সেটা দেখাতে হবে, এই ইউটিউবের একটা লাইন দিয়ে হবে না’।
সম্প্রতি একটি টকশোতে ফজলুর জানান, দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করার ‘ষড়যন্ত্র’ করে আসছে জামায়াত। এ প্রসঙ্গে ৫ আগস্ট নিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ৫ আগস্ট ঘটাইছে, কালো শক্তি, সেই কালো শক্তির নাম হলো জামায়াতে ইসলাম, তাদের যে অগ্রগামী শক্তি তার নাম হইলো ইসলামি ছাত্রশিবির, যাকে সারজিস আলমরা, যারা এইটার অভিনয় করছে, ৫ আগস্টের অভিনেতা যারা, আমি তাদেরকে নেতা বলতে আর চাই না, তাদের আমি অভিনেতা বলব। সেই আলবদর, আল শামস, জামায়াতে ইসলামণ্ড আমরা মনে করেছিলাম ৫৪ বছর পর পূর্বপুরুষের পরাজয়ের গ্লানি তারা ভুলে গেছে, কিন্তু না সেই পরাজয়ের গ্লানি দ্বিগুণ আকারে তাদের মধ্যে এসেছে’। এসব কথা বলার পর থেকেই তোপের মুখে পড়ে গেছেন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান। দলটির পক্ষ থেকে তাকে শোকজ নোটিসও পাঠানো হয়। যদিও সে প্রসঙ্গে বলেছেন, তিনি যথাসময়ে দলকে এর উত্তরটা দেবেন।
