জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে সংশয়ে বাম দলগুলো

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন ধারায় রাষ্ট্রগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে জুলাই জাতীয় সনদ করা হচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে এতে সই করা বা না করা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে বিএনপি বা সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বাইরে থাকা বাম দলগুলো। এসব দলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ জাসদ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ (মার্কসবাদী)। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি ও সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়ার বিপক্ষে রয়েছেন তারা।

বাম দলগুলোর আপত্তির জায়গা : প্রথমত, বিদ্যমান সংবিধানের চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের পরিবর্তে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি রাখার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। শুরুতেই এর বিরোধিতা করে আসছে কমিশনের সংলাপে অংশগ্রহণকারী চারটি বাম দল। তারা বলছে, চারটি মূলনীতি সমুন্নত রেখে কমিশনের প্রস্তাবগুলো সংযোজন করা যেতে পারে। কিন্তু মূলনীতির প্রশ্নে বাহাত্তরের সংবিধানে হাত দেওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গত বছরের ৫ অক্টোবর ও চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, সব বিষয়ে ঐকমত্য হলেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু এখন কিছু বিষয় চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলছে। এর দায় কমিশনকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, সংবিধানের চার মূলনীতি বাতিল করলে সনদে সই করার প্রশ্নই ওঠে না।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, শেষ দিনে আমরা সংলাপ বর্জন করে আসার পর এখন পর্যন্ত কমিশন বিষয়টি নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এটি দুঃখজনক। তাই সনদ নিয়ে কী হতে যাচ্ছে, তা পরিষ্কার নয়। তবে খসড়ায় আমরা আমাদের মতামত পুনর্ব্যক্ত করেছি।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, আদর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে একমত হওয়া যায় না। এগুলো চাপিয়েও দেওয়ার বিষয় নয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই একমত হয়েছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কোনও ছাড় দেওয়ার পক্ষে নই। কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টেও সমাধান হবে না। এ কথাগুলো বারবার বললেও কমিশন শোনেনি। আমরা মনে করি, জুলাই সনদ অবশ্যই হওয়া দরকার। তবে মূলনীতি প্রশ্নে আপস নেই। এটা আমরা জানিয়ে দিয়েছে। বল এখন সরকারের কোটে। শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, সংবিধানের চার মূলনীতির বিষয়টি আলোচনায় রাখা যাবে না। নোট অব ডিসেন্টও রাখার সুযোগ নেই। কোনোভাবে বাতিলের চেষ্টা করলে আমরা স্বাক্ষর করবো না।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, সনদে ধর্মনিরপেক্ষ, শোষণমুক্ত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রত্যাশার প্রতিফলন হয়নি। আমাদের আপত্তিগুলো সংযুক্ত করা হয়নি। আমরা চাই, শুধুমাত্র যে বিষয়গুলোতে সবাই একমত হয়েছে, সনদে শুধু সেসব বিষয় সন্নিবেশ হবে। তিনি বলেন, আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে চাই। তবে আপত্তির বিষয়গুলো অবশ্যই নজরে আনতে হবে কমিশনকে।