নুরের অবস্থা স্থিতিশীল
* বেগম খালেদা জিয়ার উদ্বেগ ও নিন্দা * বিদেশে চিকিৎসার আশ্বাস রাষ্ট্রপতির * আইএসপিআরের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান গণঅধিকার পরিষদের * সরকারকে দায় নিতে হবে, বললেন আসিফ মাহমুদ
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর কাকরাইলে শুক্রবারের সংঘর্ষে গুরুতর আহত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন; তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন তার খোঁজখবর নিয়েছেন। এদিকে, আইএসপিআরের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
নুরুল হকের অবস্থা স্থিতিশীল : নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল বলে গতকাল রোববার জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, নুর কথা বলতে পারছেন, তরল খাবার গ্রহণ করছেন এবং তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি এখন নিয়ন্ত্রণে। সকালে ঢামেকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নুরের চারটি প্রধান সমস্যা ছিল- নাকের হাড় ভেঙেছে, মুখে ফাটল আছে, ডান চোখে আঘাত এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, রক্তক্ষরণ এখন মোটামুটি রিজলভ হয়ে গেছে।
ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘ব্যথা ও ট্রমার কারণে তার ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। একটা বোর্ড হবে, তাদের নিয়ে একটু পর আবার বসব। তখন সিদ্ধান্ত হবে তাকে আমরা কখন ছাড়তে পারব, বা আইসিইউ থেকে কেবিনে শিফট করতে পারব। আসলে ফ্র্যাকচারের কোনো ওষুধ লাগে না। সময় দিলে অটোমেটাক্যালি ঠিক হয়ে যায়, চার থেকে ছয় সপ্তাহ সময় লাগে। এজন্য হাসপাতালে থাকা জরুরি নয়। হয়তো এক সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতাল থেকে চলে যেতে পারবেন। তারপর বাসায় বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।’
বেগম খালেদা জিয়ার উদ্বেগ ও নিন্দা : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি নুরের যথাযথ চিকিৎসার দাবি জানান এবং দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। তার নির্দেশে ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন শনিবার রাতে ঢামেকে নুরের খোঁজখবর নেন।
রাষ্ট্রপতির বিদেশে চিকিৎসার আশ্বাস : রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন নুরুল হক নুরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন। নুরের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানানো হয়, রাষ্ট্রপতি তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি নুরের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
আইএসপিআরের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান গণঅধিকার পরিষদের : ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সাংবাদিক সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে এটা নাকি ‘মব’! তাহলে ‘মব’ কে করেছে? সেনাবাহিনী, নাকি আমরা? আমরা আমাদের কার্যালয়ের সামনে যেখানে প্রেস ব্রিফিং শুরু করেছি, আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়ার সঙ্গে আমরা সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করবো। আমরা যখন ব্রিফিং করছি তখন সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্যরা আমাদের ওপর হামলা করল। এই হামলার ঘটনাকে সেনাবাহিনী বলছে ‘মব’। এটা কোনোভাবেই ‘মব’ হতে পারে না। যদি মব হয়েই থাকে, তাহলে সেই মব সৃষ্টি করেছে সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে আমরা সেটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। এছাড়া আমাদের কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং ভেতরে ঢুকে আমাদের নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করেছে। এটাকে যদি মব বলেন। তাহলে সেই মব করেছে সেনাবাহিনী।
তিনি আরও বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীর ওপর রক্তাক্ত করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। বিভিন্ন মিডিয়াতে এসেছে কীভাবে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে সেনাবাহিনী। সে সময় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ভয় এবং আতঙ্কে বাথরুমের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই বাথরুমের দরজা ভেঙে তাদের বের করে রক্তাক্ত করেছে নেতাকর্মীদের। আমার নিজের কাছে লজ্জা লাগছে সেনাবাহিনীর নাম আমার মুখে নেওয়া লাগছে। সেনাবাহিনী আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠান। যে প্রতিষ্ঠানের গণঅভ্যুত্থানের ভূমিকা আছে।
সেই প্রতিষ্ঠানের কতিপয় ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনীর পুরো বাহিনীকে কলুষিত করা হচ্ছে। আমরা সেনা প্রধানকে আহ্বান জানিয়েছি, আপনি যদি এই ঘটনার দায় নিতে না চান, এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সেনা আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম, এর মধ্যে এখনো সেনাপ্রধান তার অবস্থান স্পষ্ট করেননি। কেন তিনি তার অবস্থান স্পষ্ট করছেন না, সেটি আমাদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের। আমরা সেনাপ্রধানকে আবারও বলতে চাই, আপনি অনতিবিলম্বে আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে সেই হামলায় আপনার অবস্থান স্পষ্ট করুন।
সরকারকে দায় নিতে হবে- আসিফ মাহমুদ : নুরকে দেখতে এসে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব বলেন, আওয়ামী লীগ আমলেও এমন হামলা হয়নি, যা এই সরকারের আমলে হয়েছে। এর দায় সরকারকে নিতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের চেষ্টাটা ব্যর্থ হয়েছে, তাই জাতীয় পার্টির ভেতর দিয়ে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছে। জাতীয় পার্টি হচ্ছে একদম সুনির্দিষ্ট ও চিহ্নিত ফ্যাসিবাদী। আমরা দেখেছি, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের এই ফ্যাসিবাদী সংসদকে তারা বারবার বৈধতা দিয়েছে। কীভাবে ভারত থেকে প্রেসক্রিপশন এনে বাংলাদেশে তারা একটি কৃত্রিম সংসদ তৈরি করেছে, কৃত্রিম গণতন্ত্র দেখিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই চিহ্নিত ফ্যাসিবাদীদের কোনোভাবে, কোনো ধরনের সমর্থন কেউ যদি দেওয়ার চেষ্টা করে অথবা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সমর্থন করা হয়, তাহলে জনগণের পক্ষ থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তা রুখে দেবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে বিজয়নগরের গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ করলে নুরুল হক নুরসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
