বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল, নিহত ১৯
* রাজধানীতে কারফিউ জারি * ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারকাদের সমর্থন
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভে এবার উত্তাল নেপাল। দেশটিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভ রক্তক্ষয়ী রূপ নিয়েছে। গতকাল সোমবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। কাঠমান্ডু উপত্যকা পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, দুঃখজনকভাবে ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাছাড়া প্রায় ১০০ জন চিকিৎসাধীন, যাদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তবে তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় সহিংসতা আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত ও আহতদের মধ্যে অনেকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। এদিন বিক্ষোভকারীরা নির্দেশনা ভেঙে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এসময় পুলিশ জলকামান, টিয়ারগ্যাস ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এতে বহু বিক্ষোভকারী আহত হন। নেপালের তরুণরা মূলত সরকারের দুর্নীতি ও ২৬টি অনিবন্ধিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মণ্ডযার মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব ও স্ন্যাপচ্যাট রয়েছে- নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে। সংঘর্ষের পর কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন শহরের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করেছে। এ বিক্ষোভ দেশের অন্যান্য বড় শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিন বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ পার্লামেন্ট ভবন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে পুলিশ জলকামান ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায়। এর আগে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসময় তারা গাছের ডাল ও পানির বোতল ছুড়ে পুলিশের দিকে আক্রমণ চালায় এবং দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দেয়।
নেপালের রাজধানীতে কারফিউ জারি : সরকারি দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার কারণে ছাত্রজনতার বিক্ষোভের মুখে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় জানিয়েছে, বানেশ্বর এলাকায় শুরুতে সীমিত পরিসরে কারফিউ জারি করা হলেও এখন তা বিস্তৃত করে রাষ্ট্রপতির বাসভবন শীতলনিবাস, মহারাজগঞ্জ, ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সিংহদরবারের চারপাশ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন বালুয়াটার এবং আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং স্পর্শকাতর সরকারি এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান জেলা কর্মকর্তা ছবি লাল রিজাল ‘স্থানীয় প্রশাসন আইন’র ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ কার্যকর থাকার কথা জানিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে নির্ধারিত এলাকাগুলোতে জনসমাগম, মিছিল-মিটিং কিংবা যে কোনো ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।
এর আগে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যারিকেড বসালেও তরুণরা তা অতিক্রম করে। ফলে পুলিশ জলকামান ও টিয়ারগ্যাস ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভকারীরা গাছের ডাল ও পানির বোতল নিক্ষেপ করে এবং সংসদ ভবনে প্রবেশেরও চেষ্টা করে।
নেপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারকাদের সমর্থন : সরকারি দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকাল থেকে কাঠমান্ডুর রাস্তায় নেমেছে নেপালের ছাত্র-জনতা। তরুণদের এ বিক্ষোভে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন দেশটির খ্যাতিমান শিল্পী ও বিনোদন জগতের তারকারাও। অভিনেতা মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠ ও হরি বংশ আচার্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানান। হরি বংশ আচার্য সম্প্রতি নির্মিত একটি সড়কের ভঙ্গুর অবস্থা তুলে ধরে লিখেছেন, প্রতিদিন ভাবতাম, এত দ্রুত এ রাস্তা নষ্ট হলো কীভাবে। কিন্তু শুধু ভেবেই থেমে গেছি। আজকের তরুণরা শুধু ভাবছে না, প্রশ্ন তুলছে- কেন এমন হলো, কীভাবে হলো, এর দায় নেবে কে? আজকের কণ্ঠস্বর আসলে ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নয়, বরং দায়িত্বশীল নেতাদের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে। তিনি আরও বলেন, নেতাদের উচিত নিজেদের কাজের মানোন্নয়ন করা ও ধীরে ধীরে নেতৃত্বের দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া।
মদন কৃষ্ণ শ্রেষ্ঠও তরুণদের কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে লিখেছেন, দেশের সব যুগ দেখেছি। এখানে কণ্ঠরোধ হয়েছে, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার লালসা দিন দিন বেড়েছে। প্রতিদিন হাজারো তরুণ বিদেশে কাজে পাড়ি জমাচ্ছেন। দুর্নীতি ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। এমনকি ‘মা নেপালকেও’ যেন কাঁদতে দেখি। এই তরুণরাই ভবিষ্যৎ, তাদের স্বপ্নই দেশের স্বপ্ন। এখন জেন জির কণ্ঠস্বর শোনার সময় এসেছে।
গায়ক ও অভিনেতা প্রকাশ সাপুত আন্দোলনে যোগ দিতে সুনীল ও সাচিন নামে দুই ভাইকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি ইউটিউব আয়ের ২৫ হাজার রুপি করে তাদের পাঠিয়ে লেখেন, এই অর্থ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করো, শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকো, ধৈর্য হারিও না।
অভিনেতা ও পরিচালক নিশ্চল বসনেত টিকটকে পোস্ট দিয়ে সমর্থন জানান। তিনি অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় গিয়ে জনগণকে ভুলে যান ও দমনমূলক নিয়ম বানান। তবে এবার আন্দোলনের নেতৃত্ব কোনো ব্যক্তি নয়, বরং নেপালে বসবাসরত তরুণরা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য আওয়াজ তুলছে। তিনি পুলিশকে আহ্বান জানান, যেন কোনো ধরনের সহিংসতা না ঘটে।
অভিনেত্রী কেকি অধিকারী এক কবিতার মাধ্যমে সংহতি জানান, আগুন যেন নিভে না যায়। উত্তেজনা ও দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়াও। তোমাদের শ্রমই দেশ ও সমাজকে শক্তিশালী করবে। সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠো।
অভিনেত্রী বর্ষা রাউত কাঠমান্ডুর বাইরে থাকলেও টিকটকে ভিডিও দিয়ে আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। অভিনেতা অনমোল কেসি, প্রদীপ খাদকা, ভোলারাজ সাপকোটা, বর্ষা শিবাকোটি, গায়িকা এলিনা চৌহান, রচনা রিমাল ও সমীক্ষা অধিকারীও আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন।
