ডাকসু নির্বাচন
সাদিক-ফরহাদদের ভূমিধস জয়
* ভোট পড়েছে ৭৮ শতাংশ, সর্বোচ্চ সূর্যসেন হলে * নির্বাচনে স্বচ্ছতার ঘাটতি নেই, দাবি উপাচার্যের * কারচুপির অভিযোগ তুললেন ছাত্রদলের আবিদ * শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট মেনে নিন : সাদিক কায়েম * নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে বর্জন স্বতন্ত্র ভিসি প্রার্থী তাহমিনার
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আমিরুল ইসলাম অমর

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও বিচ্ছিন্ন কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী এবং ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম। জিএস নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের এস এম ফরহাদ; তিনি ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখার সভাপতি। এজিএস নির্বাচিত হয়েছেন একই সংগঠনের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন খান।
রাত দেড়টার পর শুরু হওয়া ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায়, অমর একুশে হলের ফলাফলে ভিপি পদে সাদিক কায়েম ৬৪৪, আবিদুল ইসলাম ১৪১, শামীম হোসেন ১১১, উমামা ফাতেমা ৯০; জিএস পদে ফরহাদ হোসেন ৪৬৬, তানভির বারী হামিম ১৮০, আবু বাকের মজুমদার ১৪৭, মেঘমল্লার বসু ৮৬ ভোট পেয়েছেন।
ফজলুল হক হলে ভিপি পদে আবু সাদিক কায়েম ৮৪১, আবিদুল ইসলাম ১৮১, উমামা ফাতেমা ১৫৩, শামীম হোসেন ১৪১, আবদুল কাদের ৪৭; জিএস পদে ফরহাদ হোসেন ৫৮৯, আবু বাকের মজুমদার ৩৪১, তানভির বারী হামিম ২২৮, মেঘ মল্লার বসু ৯৯ ভোট পেয়েছেন।
সুফিয়া কামাল হলে ভিপি পদে সাদিক কায়েম ১২৭০, উমামা ফাতেমা ৫৪৭, শামীম হোসেন ৪৮৫, আবিদুল ইসলাম ৪২৩; জিএস পদে এস এম ফরহাদ ৯৬৪, মেঘমল্লার বসু ৫০৭, ইয়াসিন আরাফাত ৪২৮, শেখ তানভীর বারী হামিম ৪০২ ভোট পান।
ফজলুল হক মুসলিম হলে ভিপি পদে সাদিক কায়েম ৮৪১, আবিদুল ইসলাম খান ১৮১; জিএস পদে এস এম ফরহাদ ৪৮৯, আবু বাকের মজুমদার ৩৪৫, শেখ তানভীর বারী হামিম ২২৮ ভোট পেয়েছেন।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ভিপি পদে সাদিক কায়েম ৯৬৬, আবিদুল ইসলাম খান ১৯৯, উমামা ফাতেমা ১৪০, আব্দুল কাদের পেয়েছেন ৫৬; জিএস পদে এস এম ফরহাদ ৮৭৩, শেখ তানভীর বারী হামিম ২৪৯, আবু বাকের মজুমদার ২৪১, আরাফাত চৌধুরী ৭৯ ভোট পেয়েছেন।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ গতকাল মঙ্গলবার উৎসবমুখর পরিবেশে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। চলতে থাকে অভিযোগ-পাল্টাঅভিযোগ। বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণের পর পারস্পরিক অভিযোগের সেই সুর তীব্র হয়। প্রশাসনের বিরুদ্ধে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন অনেকে।
তবে, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষক দলের সদস্য অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কিছু ঘাটতির কথাও তুলে ধরেন তিনি। একই সঙ্গে দলটির আরেক সদস্য অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন জানিয়েছেন, বড় ধরনের কোনো অসঙ্গতি তাদের চোখে পড়েনি।
এদিকে, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর জানানো হয়, রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ফল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু, সেই ঘোষণা বিলম্বিত হয়ে ‘রাতের মধ্যে’ হবে বলে জানায় প্রশাসন। ফল গণনায় দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘ডাকসুর ব্যালটের যে পাঁচটা পাতা, সেটাকে মেশিনে দেওয়ার জন্য প্রথমে আলাদা করতে হচ্ছে। একটা বাক্স খোলার সঙ্গে সঙ্গে আলাদা করার কাজটা আগে করতে হচ্ছে। মূলত এ জন্যই সময় লাগছে।’
রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলাফল ঘোষণাকে ঘিরে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে। ডালপালা মেলতে থাকে বিভিন্ন গুজব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশে অর্থাৎ দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাস এলাকায় যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ পরিস্থিতিতে গভীর রাতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ভোট পড়েছে ৭৮ শতাংশ, সর্বোচ্চ সূর্যসেন হলে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছেন সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থীরা। এ হলের ৮৮ শতাংশ ভোটারই নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এছাড়া আরও ১২টি হলের শিক্ষার্থীরা ৮০ শতাংশের ওপরে ভোট দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডাকসুর চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কোন হলে কত শতাংশ ভোট পড়েছে : বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হলগুলোর সংযুক্ত শিক্ষার্থীরা বেশি ভোট দিয়েছেন। ছাত্রদের হলগুলোর মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ভোট পড়েছে ৮০ দশমিক ২৪ শতাংশ, অমর একুশে হলে ৮৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৮১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, জগন্নাথ হলে ৮২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ৮৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৮৩ শতাংশ, স্যার এ এফ রহমান হলে ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এছাড়া হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ৮৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, বিজয় একাত্তর হলে ৮৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, সূর্যসেন হলে ৮৮ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৭৫ শতাংশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৮৭ শতাংশ ও কবি জসীম উদ্?দীন হলের ৮৬ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। ছাত্রীদের হলে তুলনামূলক কম ভোট পড়েছে। ছাত্রীদের বেগম রোকেয়া হলে ৬৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ৬৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৬৪ শতাংশ ও শামসুন নাহার হলের ৬৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেন।
এবারের নির্বাচনে ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন ভোটারের মধ্যে ছাত্রী ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৪৭১ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৪০৯ জন, নারী প্রার্থী ৬২ জন। এছাড়া হল সংসদ নির্বাচনে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে লড়ছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী। ১৩ ছাত্র হলের প্রার্থী সংখ্যা ৮৫০ জন এবং ৫ ছাত্রী হলের প্রার্থী সংখ্যা ১৮৫। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি এবং হল সংসদের ১৩টি মিলিয়ে প্রতিটি ভোটারকে মোট ৪১টি পদে ভোট দিতে হবে। ভোট গ্রহণ হবে ওএমআর ফরমে, ছয় পাতার ব্যালটে। এরপর ১৪টি গণনা মেশিনে ৮টি কেন্দ্রে হবে ফল গণনা। ফল ঘোষণা করা হবে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে। প্রার্থী তালিকায় রয়েছে- ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বামজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্যানেল। নির্বাচনী লড়াইয়ে ভিপি ও জিএসসহ অন্যান্য পদে রয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী প্রার্থীও।
ডাকসু নির্বাচনে স্বচ্ছতার ঘাটতি নেই- দাবি উপাচার্যের : ডাকসু নির্বাচনে স্বচ্ছতার ঘাটতি নেই বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, যিনি জিতবেন এবং যিনি বিজেতা হবেন, সবাই ফলাফল মেনে নেবেন। তারা স্বীকার করবেন যে, কোথাও কোনো স্বচ্ছতার ঘাটতি নেই।’ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলের দিকে সিনেট ভবনের তিনটি কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট সংগ্রহ হয়েছে। চারটার পরও যেসব শিক্ষার্থী লাইনে থাকবেন, তাদের ভোট নেওয়া হবে।’ উপাচার্য বলেন, ‘কার্জন হলে ভুলক্রমে একটি ছোট সমস্যা হয়েছে। তার জন্য আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। তবুও এই ঘটনার আমরা পুনরায় তদন্ত করে কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেব।’ ভোট শুরু পর কার্জন হলে এক ভোটারকে দুটি ব্যালট দেওয়া হয়েছিল। পরে পোলিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়।
টিএসসির কেন্দ্রে ‘ক্রস চিহ্ন’ দেওয়া একটি ব্যালট একজন ভোটারকে দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে উপাচার্য বলেন, ‘এখানেও আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।’
কারচুপির অভিযোগ তুললেন আবিদ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, অমর একুশে হলে গিয়েছি, সেখানে কারচুপির প্রমাণ পেয়েছি। রোকেয়া হলেও কথা বলেছি। তারা বলেছেন, কারচুপি হয়েছে। এটা কোনোভাবেই আশা করিনি। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়েছি, আমাদের এতিমের মতো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। আমাদের সময় নষ্ট করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, রোকেয়া হলের এক ছাত্রী ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, ‘ভাই, আমাদের যে ব্যালট পেপার দেওয়া হয়েছে, তাতে আগে থেকেই সাদিক কায়েম ও এস এম ফরহাদের নামে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল।’ এটা শুধু রোকেয়া হলের ক্ষেত্রেই হয়নি, এমন ঘটনা অমর একুশে হলের ভোটকেন্দ্রেও ঘটেছে। পরে আমি যখন কেন্দ্রের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলাম, তখন তারা জানালেন যে— এটা কীভাবে হয়েছে তারা জানেন না। সুতরাং, দুটি কেন্দ্রে যেহেতু প্রমাণ পেয়েছি, সেহেতু অন্য জায়গায়ও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
আবিদুল ইসলাম বলেন, আমরা জানি না কত ব্যালটে এমন করা হয়েছে, আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। তিনি বলেন, ‘অমর একুশে হলে গিয়েছি, সেখানে কারচুপির প্রমাণ পেয়েছি। রোকেয়া হলেও কথা বলেছি। তারা বলেছেন, কারচুপি হয়েছে। এটা কোনোভাবেই আশা করিনি। সকাল থেকে আমাদের পোলিং এজেন্টদেরও কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা প্রদান করা হয়। প্যানেলের নম্বর শিটটাও দিতে গিয়ে প্রত্যেক জায়গায় বাধার মধ্যে পড়েছি। ভোটকেন্দ্রের বাইরেও বাধার সম্মুখীন হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সকালে আমার বিরুদ্ধে একটা বিশাল প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে, যেখানে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও বিভ্রান্ত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যদিও তারা সংশোধনী দিয়েছে। রোকেয়া হলের নির্বাচনী কর্মকর্তা আমাদের এক প্রার্থীর ব্যালট নম্বর বিতরণ করার জন্য তার ছাত্রত্ব বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অথচ তারা শিবিরের লোকদের তা বিতরণ করতে দিচ্ছেন। মিডিয়ার প্রতিবেদনেও নির্বাচন কারচুপির তথ্য উঠে এসেছে। এসব নিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।’
শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট মেনে নিন: সাদিক কায়েম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়েছেন। এ ভোটে ফলাফল যাই হোক, তা মেনে নিতে সব প্রার্থী ও ছাত্রসংগঠনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ভিপি প্রার্থী সাদেক কায়েম।
তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে হার-জিতের কিছু নেই। আমরা সবাই জুলাইয়ের সহযোদ্ধা ছিলাম। ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছি। জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আমাদের যাকেই বেছে নেবে, তাকেই মেনে নেবো। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর যদি আমরা জোরপূর্বক কিছু চাপিয়ে দিতে চাই, তাহলে হিতে বিপরীত হবে। সাদিক কায়েম বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের ম্যান্ডেট যাকে দেবে, তা মেনে নিতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট মেনে নেবো, সবাইকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করছি, যারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছেন, তারা চক্রান্ত থেকে বেরিয়ে আসবেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঢাবি শিবিরের সভাপতি ও জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ, সেক্রেটারি ও এজিএস প্রার্থী মুহা. মহিউদ্দীন খান প্রমুখ।
‘শিবিরের নির্বাচন মানি না, মানব না’ স্লোগান উমামার প্যানেলের : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে শিবিরকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে উমামা ফাতেমার প্যানেল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’। তারা বলেছে, শিবিরের প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হলেও বাকিদের দেওয়া হচ্ছে না। এর প্রতিবাদে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন প্যানেলটির বিভিন্ন প্রার্থীরা। এ সময় তারা ‘শিবিরের নির্বাচন মানি না, মানব না’- স্লোগানও দেন। এর আগে শিবিরের বিরুদ্ধে দুটি ছবির প্রমাণ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার দেন উমামা। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের ভোটকেন্দ্রের বাইরে এই লিফলেটগুলা দেওয়া হচ্ছে। যার এক প্রান্তে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীদের তালিকা আর অপর প্রান্তে হলের স্বতন্ত্র পরিচয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীদের তালিকা। গুঞ্জন শোনা গেছে এই লিস্টটি পোলিং বুথের ডেস্কের নিচে ছড়ানো আছে।’
ভারতীয় এজেন্টদের ষড়যন্ত্র রুখে দেবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা- জুলাই ঐক্য : আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ও ভারতীয় এজেন্টরা সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দাবি করে জুলাই ঐক্য প্যানেলের মন্তব্য, ভারতীয় এজেন্টদের ষড়যন্ত্র রুখে দেবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে, একইভাবে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ফলাফল নিয়ে নতুন নেতৃত্বকে গ্রহণ করে নেবেন তারা।’ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুলাই ঐক্য থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম জুলাই ঐক্য মনে করে, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ডাকসুর নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, যা আগামী দিনের ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনে মডেল হিসেবে থাকবে।’
‘জুলাই ঐক্য চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল সব সময় পাশে থাকবে। ডাকসুর সুষ্ঠু নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে বিদেশি এজেন্সি এবং বাম বা যে কোনো ভারতপন্থী দল বিশৃঙ্খলা পরিবেশ তৈরি করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে তা মোকাবিলা করা হবে।’
ভোট গণনায় কারচুপি হতে পারে, শঙ্কা আবু বাকেরের : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনায় কারচুপি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংসদ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পর ভোট গণনা চলার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সভাপতি বাকের মজুমদার বলেন, ‘প্রতি হলের ৩০০টি ভোট করে যদি কনভার্ট (অন্য প্রার্থীর দেখানো) করতে পারে তাহলে ৫৬০০ ভোট হয়ে যায়। একজন প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য এর চেয়ে বেশি ভোটের প্রয়োজন নাই। আমরা জানি না ভেতরে নির্বাচন নিয়ে এখন কী হচ্ছে।’
ভোটকেন্দ্রগুলোতে থাকা ছাত্রদলের এজেন্টরা কেন্দ্রে সরাসরি ভোটারদের ম্যানিপুলেট (প্রভাবিত করা) করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাকের মজুমদার। তিনি বলেন, ‘৮টি কেন্দ্রে যারা পোলিং অফিসার হিসেবে ছিলেন তাদেরকে বলা হয়েছে, আপনাদের কোনো কাজ নাই, চাইলে চলে যেতে পারেন, আপনাদের প্রয়োজন নাই। এ বিষয়টা হচ্ছে এমন, আপনি সম্মানের সাথে চলে যান আমরা যা করার তা করবো।’
ভোট গণনা সম্প্রচারের এলইডি স্কিন বন্ধ রাখা হয়েছে অভিযোগ করে আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আমরা দেখেছি কার্জন হলের সামনে ২০ মিনিটের মতো এলইডি স্ক্রিন বন্ধ ছিল। শামসুন্নাহার হলে ১ ঘণ্টা পর এলইডি স্ক্রিন এসেছে। অনেক সাংবাদিকেরা বিভিন্ন ভোট গণনা কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন, তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন।’ এছাড়া কয়েকটি কেন্দ্রে আগে থেকে ব্যালট পেপার পূর্ণ করা ছিল বলে অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান আবু বাকের মজুমদার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছেন বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সভাপতি বাকের মজুমদার। তিনি বলেন, ‘মির্জা আব্বাস ডাকসু নির্বাচনের কোনো কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট না। কিন্তু তিনি আজকে এখানে প্রবেশ করা মানে একটা ভিন্ন বার্তা যাচ্ছে দেশবাসীর কাছে। মির্জা আব্বাস আজকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই, রাইট (অধিকার) নেই। প্রবেশ করেছেন কেন এটা সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।’
শেষ মুহূর্তে ভোটবর্জন স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী তাহমিনার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী সহসভাপতি (ভিপি) পদে দাঁড়ানো তাহমিনা আক্তার। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি। অভিযোগ করে তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘আগে থেকে শিবির প্রার্থীর পক্ষে পূরণ করা ব্যালট দিয়ে এবং বিভিন্ন কৌশলে জালিয়াতি করে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য প্রহসনের ভোটগ্রহণ হচ্ছে। এসব অভিযোগ তুলে তাহমিনা আক্তার (ব্যালট নং ১০) বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার পক্ষ থেকে ভিপি পদে প্রার্থিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘এ ভুয়া নির্বাচন বর্জন ও বয়কট করলাম। শিবিরের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ভিসি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার ওপর অনাস্থা জ্ঞাপন করে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ তাহমিনা আক্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের আবাসিক ছাত্রী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। একই সঙ্গে নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রণী ভূমিকায়।
ঢাবির প্রবেশপথসহ আশপাশে হাজারো মানুষের ভিড় : উৎসবমুখর ও অনেকটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এরইমধ্যে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন প্যানেলের নেতাকর্মীরা সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এর বাইরেও ঢাবির প্রবেশমুখ ও আশপাশের এলাকায় মানুষের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে গণতন্ত্র ও মুক্তি তোরণে মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। বকশিবাজার মোড়েও উপস্থিত ছিলেন শতাধিক মানুষ। এছাড়া পলাশী মোড়েও জড়ো হয় অনেকে।
সরেজমিনে কয়েকটি প্রবেশমুখ ঘুরে দেখা যায়, ঢাবির আশেপাশে ধীরে ধীরে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। গণতন্ত্র ও মুক্তি তোরণের সামনে কয়েকশ মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ দলবদ্ধভাবে অবস্থান করছেন, কেউবা আশপাশে দাঁড়িয়ে নীরবে অপেক্ষা করছেন। বকশিবাজার মোড়েও একই চিত্র-এখানে অন্তত দুই শতাধিক মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। এছাড়া পলাশী মোড় থেকে লালবাগের অভিমুখে সড়কে কয়েকশত মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে?
পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক প্রবেশপথে দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ক্যাম্পাসের ভেতরেও আগের তুলনায় পুলিশের উপস্থিতি বেড়েছে? বিজিবি, র্যাব ও ডিবির উপস্থিতিও দেখা গেছে।
ছয় বছর পর এবার অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের নির্বাচনে ডাকসুর ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঢাবি প্রশাসনকে ‘জামায়াতি’ আখ্যা দিল ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে শিবিরের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের আশপাশে বহিরাগত (জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী) জড়ো করার অভিযোগ তুলেছে ছাত্রদল। এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের মুখোমুখি হয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জামায়াতি প্রশাসন’ আখ্যা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সিনেট ভবনে একটি মিটিং চলাকালীন সেখানে ঢুকে পড়েন ছাত্রদল নেতারা। এরপর সেখানে কিছুটা হট্টগোল হয়।
এসময় ছাত্রদল নেতারা ক্যাম্পাসের আশপাশে জড়ো হওয়া লোকদের ‘জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী’ দাবি করে উপাচার্যকে উপর্যুপরি প্রশ্ন করতে থাকেন। উপাচার্য ‘ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে’ জানালেও তারা তা মানতে রাজি হননি।
একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস টেবিল চাপড়ে উপাচার্যকে ‘জামায়াতি প্রশাসন’ বলে আখ্যায়িত করেন। জবাবে উপাচার্য তিনি কোনো দলের নন এবং কখনো রাজনীতি করেননি বলে দাবি করেন।
এসময় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব উপাচার্যকে বলেন, ‘আমরা আজকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাকে ‘জামায়াতি প্রশাসন’ হিসেবে আখ্যা দিলাম। আমরা আজ থেকে আপনাদের বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করবো না। যদি আপনি এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমরা আর আপনাকে কোনো সহযোগিতা করবো না।’
ফলাফল ঘিরে ঢাবির গেটে গেটে ছিল পুলিশ-র্যাব-বিজিবি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে এখন ফলাফলের অপেক্ষা। চলছে ভোট গণনা। এসময় ক্যাম্পাসে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকগুলোতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শাহবাগ, নীলক্ষেত, ফুলার রোড, দোয়েল চত্বরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেটেই চোখে পড়ছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান। পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবির টহলও জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা জানাচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক চলাচলে তারা কোনো বাধা দিচ্ছেন না। তবে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, গেটগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেখতে একটু চাপা উত্তেজনা অনুভূত হচ্ছে। তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই আশা করছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ফলাফল ঘোষণা হবে এবং সবার গ্রহণযোগ্যতার মধ্য দিয়েই ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।
দিনভর আলোচনায় ছিল যেসব ঘটনা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর, তবে দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে নানা বিতর্ক, অভিযোগ ও বেদনাদায়ক ঘটনা। ভোর থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা, আর ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ফিজিক্যাল এডুকেশন সেন্টারের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করলে সর্বপ্রথম আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। যদিও তিনি দাবি করেন, রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়েই প্রবেশ করেছেন। এরপর থেকেই আচরণবিধি ভঙ্গের আরও অভিযোগ সামনে আসে—মোটরসাইকেলে করে ভোটার পরিবহন, খাবার বিতরণ এবং কেন্দ্রের আশপাশে প্রচারণা চালানো, যা নির্বাচনের বিধি অনুযায়ী নিষিদ্ধ।
দিনটির সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে কার্জন হলে। চ্যানেল এস-এর সাংবাদিক তরীকুল ইসলাম শিবলি সংবাদ সংগ্রহের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক মহল ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।
আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি ঘটে আমর একুশে হলে। সেখানে ভোটগ্রহণের সময় এক ভোটারকে একসঙ্গে দুটি ব্যালট পেপার দেওয়া হয়। এই অনিয়ম চোখে পড়তেই বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হয়। পরে নির্বাচন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পোলিং কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এই ঘটনা ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে এবং সামাজিক মাধ্যমে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের বাইরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ ওঠে। ভোটগ্রহণের সময় কেন্দ্রের আশপাশে প্রার্থীদের সমর্থকদের প্রচারণা চালাতে দেখা যায়, কেউ কেউ ভোটারদের কাছে প্রচারণামূলক স্লিপ বিতরণ করছিলেন। নির্বাচন আইন অনুযায়ী ভোটকেন্দ্রের ১০০ গজের মধ্যে কোনো প্রকার প্রচারণা নিষিদ্ধ হলেও অনেক জায়গায় এই নিয়ম মানা হয়নি। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ক্যাম্পাসজুড়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরের দিকে এফ রহমান হলে ভোট কেন্দ্রের আশপাশে হঠাৎ করে উত্তেজনা দেখা দেয়। কয়েকজন সমর্থকের মধ্যে তর্কাতর্কি থেকে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উভয়পক্ষের সমর্থকরা স্লোগান দিতে শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়ও। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিম এগিয়ে আসে এবং উভয়পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। যদিও এই ঘটনা স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে।
এছাড়া আরেকটি আলোচিত ঘটনা ঘটে সহকারী প্রক্টর ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের মধ্যে। ভোটের পরিবেশ নিয়ে কথা বলার সময় তাদের মধ্যে বাকবিন্যাস হয়, যা দ্রুত তর্কে রূপ নেয়। ঘটনাস্থলে থাকা অন্যরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন, তবে এই মুহূর্তটিও সংবাদকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের নজর এড়ায়নি। পরে এই ঘটনাও ক্যাম্পাসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
পুরো দিনজুড়ে এসব ঘটনার পাশাপাশি ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি এবং প্রথমবারের ভোটারদের অংশগ্রহণ ইতিবাচক সাড়া তৈরি করলেও অনিয়ম, উত্তেজনা এবং বিতর্কিত মুহূর্তগুলো আজকের ডাকসু নির্বাচনের স্মৃতিতে থেকে যাবে।
নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়ে। ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, কিছু কেন্দ্রে তার পোলিং এজেন্টদের বাধা দেওয়া হয়েছে এবং ভোটারদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। যদিও প্রধান রিটার্নিং অফিসার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাসিম উদ্দিন সরকার জানান, সামগ্রিকভাবে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ঘটেনি।
দিনভর ক্যাম্পাসে ভোটারদের অংশগ্রহণ ছিল উৎসাহজনক। প্রথমবার ভোট দেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ উচ্ছ্বাস দেখা যায়। অনেকে জানান, আগের নির্বাচনে ভোট দিতে না পারলেও এবার নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরে তারা আনন্দিত। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে অশান্তি ও অভিযোগ-প্রতিবাদের কারণে শান্তিপূর্ণ ভোটের পাশাপাশি বিতর্কও সমানভাবে আলোচনায় ছিল। উৎসব, অভিযোগ ও শোকের মিশেলে শেষ হয় ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।
প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। পাঁচ ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ ভোটের বিপরীতে ১৩ ছাত্র হলে এই সংখ্যা ২০ হাজার ৯১৫ জন। ২৮টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৪৭১ জন। প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে ভোটের লড়াইয়ে নামেন ১ হাজার ৩৫ জন। এবারের ডাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১০টি প্যানেল অংশ নেন। এর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়েন প্রার্থীদের আরেকটি অংশ।
