পুড়ছে নেপাল, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

তরুণদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পদত্যাগের পর প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌদেলও পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়টি নেপালের সচিবালয় থেকে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়। তবে, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের বিষয়টি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এমনটি দাবি করা হয়। টানা দুই দিন ধরে নেপাল সরকারের পদত্যাগের দাবিতে কারফিউ উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রী ও রাজনীতিকের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করেছেন। গত সপ্তাহে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম ও বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে অলির নেতৃত্বাধীন সরকার।
সরকারের এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গত সোমবার রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেন নেপালের কয়েক হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই তরুণ বা জেন-জি প্রজন্মের। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ অন্তত সাতটি শহরে এদিন ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ দমনে কঠোর হন অলি সরকার। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে কাঠমান্ডুতে অন্তত ১৭ জন ও ইতাহারিতে ২ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হন চার শতাধিক বিক্ষোভকারী। বিক্ষোভ দমনে সরকারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। সরকারের ওই দমনমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সোমবার সকাল থেকে কালঙ্কি, চাপাগাঁও ও কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভণ্ডসমাবেশ ও প্রতিবাদ শুরু হয়। পুলিশ রাজধানীর পার্লামেন্ট ভবনের সামনে থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে।
প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে আগুন: বিক্ষুব্ধরা নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল ও প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বাসার ছাদ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, তবে গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ চিত্র জানা যায়নি। নেপালের কর্মকর্তারা জানান, ভোরে বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী তার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হয়। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা পিছিয়ে যায়নি এবং শেষ পর্যন্ত ভেতরের দুটি বাড়িতেই আগুন ধরিয়ে দেয়। একই দিন নৈকাপ এলাকায় সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখকের বাসভবনেও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। লেখক সোমবার পদত্যাগ করেছিলেন। কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ললিতপুরে অবস্থিত দেশটির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুঙের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ভাঁসেপাটিতে অবস্থিত উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিষ্ণু পাউডেলের বাড়িতেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এছাড়াও শাসক দল নেপালি কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
মন্ত্রীদের হেলিকপ্টারে নিরাপদে সরিয়ে নিলো সেনাবাহিনী: নেপালে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করায় দেশটির সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে করে ভাইজেপাতি থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন। গতকাল নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্ত্রীদের বাসভবন থেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনার পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তাদেরকে ঠিক কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। আন্দোলনকারীরা ভাইজেপাতির মন্ত্রিসভার বাসভবনগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে কাঠমান্ডু পোস্ট। সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, পার্লামেন্ট ভবন রক্ষার জন্যও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামরিক ঘাঁটিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ত্রিভুবন বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল: নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে গতকাল কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের (টিআইএ) মহাব্যবস্থাপক হংস রাজ পান্ডে জানান, গতকাল দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের পর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। এর আগে কোটেশ্বর এলাকার কাছে ধোঁয়া দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর বন্ধ করা হয়নি, আমরা সেটি বন্ধও করব না।’ বিমানকর্মীরা চলাচল সমস্যার কারণে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে কোনো ফ্লাইট ছাড়তে পারেনি। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে দেশীয় বিমান সংস্থাগুলো সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে। এর মধ্যে বুদ্ধ এয়ারও রয়েছে।
গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ভারতের: নেপালে চলমান বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। নেপালের প্রতিবেশী ভারত বলছে, তারা নেপালের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারি করছে। এমনকি নেপালের পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি ভারতে পালিয়ে যেতে পারেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে তার পদত্যাগের পর নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ধরনের বিমানের উড্ডয়ন এবং অবতরণ বাতিল করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মাঝেই সেখান থেকে মাত্র দুটি বিমান থাইল্যান্ড এবং চীনের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম খবর দিয়েছে। তবে এই দুই ফ্লাইটে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি ছিলেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নেপালের সঙ্গে সীমান্তে উচ্চ সতর্কতা জারি করে ভারত বলেছে, নেপালে চলমান বিক্ষোভে প্রাণহানির ঘটনায় নয়াদিল্লি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিক্ষোভ চলমান থাকায় পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারি করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আশা করছি, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ সংযম প্রদর্শন করবেন এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও আলোচনার মাধ্যমে যেকোনও সমস্যার সমাধান করবেন।’’
পার্লামেন্ট ভবনে ‘বিজয় পতাকা’ ওড়ালো আন্দোলনকারীরা: জেন জি আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগে দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে ‘বিজয় পতাকা’ উড়িয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণের ভেতরের কিছু অংশ ভেঙে প্রবেশ করে এবং সেখানেই ‘বিজয় পতাকা’ ওড়ান।
