পদত্যাগের পর হদিস মিলছে না নেপালের প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। বর্তমানে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে সেনাবাহিনী। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়ার পর ওলির অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন, তা স্পষ্ট নয়।

গতকাল বুধবার এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিক্ষোভকারীরা চারবারের প্রধানমন্ত্রী এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ৭৩ বছর বয়সী কেপি শর্মা ওলির বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। রাজনৈতিক সমাধানের পথ সুগম করতে ওলি পদত্যাগ করেন, তবে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস রূপ ধারণ করে। সরকারি দমন-পীড়নে অন্তত ১৯ জন নিহত হন এবং বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষোভ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন সরকারি ভবন, রাজনীতিবিদদের বাসভবন, সুপারমার্কেটসহ বহু স্থাপনায় আগুন দেয়।

কাঠমান্ডুতে গতকাল বুধবার ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায় এবং রাস্তায় পুড়ে যাওয়া গাড়ি ও টায়ারের অবশিষ্টাংশ ছড়িয়ে আছে। সেনাবাহিনী সতর্ক করে বলেছে যে, দেশের স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা নষ্ট করতে পারে এমন যেকোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ৩ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই হিমালয়কেন্দ্রিক দেশটির হঠাৎ এই সহিংসতা বহু মানুষকে হতবাক করেছে।

এদিকে ভয়াবহ সহিংসতার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস রূপ নেয় দেশটিতে। এক পর্যায়ে সরকারি দমন-পীড়নে অন্তত ১৯ জন নিহত হন এবং বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। ক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন সরকারি ভবন, রাজনীতিবিদদের বাসভবন, সুপারমার্কেটসহ বহু স্থাপনায় আগুন দেয়।

একজন সেনাসদস্য বলেন, বুধবার শহর অনেকটাই শান্ত, সব জায়গায় সেনা মোতায়েন রয়েছে। তবে তিনি গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ করেননি।

নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে লুটপাট ও সহিংসতার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন। নেপালে সরকারবিরোধী আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ার পর দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছে সেনাবাহিনী।

গত মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে জেনারেল সিগদেল সতর্ক করে বলেন যে, আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, লুটপাট বা সাধারণ নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৫৮ বছর বয়সী জেনারেল সিগদেল আন্দোলনকারীদের অবিলম্বে কর্মসূচি স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে, জাতীয় ঐতিহ্য, সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ রক্ষা করতে হবে এবং সাধারণ জনগণ ও কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আটকে পড়া বিদেশিদের দ্রুত সহায়তা চাইতে বলল নেপালের সেনাবাহিনী : নেপালে চলমান বিক্ষোভ ও অস্থিরতায় বিদেশি নাগরিকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বিদেশি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিকটস্থ নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে সহায়তা চাইতে আহ্বান জানিয়েছে নেপালি সেনাবাহিনী। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম হিমলয়ান টাইমস।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলমান জটিল পরিস্থিতির মধ্যে নেপালে আটকে পড়া বিদেশি নাগরিকদের নিকটস্থ নিরাপত্তা সংস্থার কাছ থেকে দ্রুত সহায়তা নিতে আহ্বান জানিয়েছে নেপালি সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ও তথ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উদ্ধার বা জরুরি সহায়তার অপেক্ষায় থাকা বিদেশি নাগরিকরা যেন সরাসরি মাঠে মোতায়েন নিরাপত্তা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বিবৃতিতে হোটেল, পর্যটন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানোরও আহ্বান জানানো হয়, যাতে বিদেশি নাগরিকদের দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।

এদিকে জেনারেশন জি’র নেতৃত্বে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় কাঠমান্ডু উপত্যকাজুড়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এবং ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে পর্যটকসহ বিদেশি দর্শনার্থীরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। একাধিক বিমান সংস্থা ফ্লাইট স্থগিত করেছে এবং হোটেলগুলোতে আটকে পড়া যাত্রীদের আবাসন জোগাতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।