বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চিন্তা
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এই আলোচনা হবে। গতকাল বুধবার কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে দুই পর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। সেখানে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এই সনদের খসড়া এরইমধ্যে চূড়ান্ত করেছে কমিশন। গত জুলাই মাসে এই সনদ সই করার লক্ষ্য ছিল। তবে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সনদ আটকে আছে। অবশ্য বাস্তবায়ন পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশ হবে না। এ বিষয়ে আলাদা সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন। বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে এরইমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক একাধিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এ বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামতও নেওয়া হয়েছে। এসব মতামত সমন্বয় করে গত রোববার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছিল ঐকমত্য কমিশন।
সেখানে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির সুপারিশ করা হবে। এটিই সনদ বাস্তবায়নের সবচেয়ে ভালো বিকল্প। আর সংবিধান-সম্পর্কিত নয়, এমন প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, গত সোমবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। সেখানে আলোচনা হয়, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতভিন্নতা প্রকট। বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই তিন দল তিন ধরনের পদ্ধতির কথা বলেছে।
সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের পক্ষে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রপতির প্রক্লেমেশন (রাষ্ট্রপতির ঘোষণা) বা গণভোটের মাধ্যমে এবং এনসিপি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন চেয়েছে। এর বাইরে অন্তত ১০টি দল সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়। ঐকমত্য কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, এ অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হলে তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।
এ কারণে দলগুলোর সঙ্গে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৩০টি দলকে একসঙ্গে নিয়ে এ আলোচনা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বিশেষজ্ঞদেরও রাখার চিন্তা আছে। যাতে কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে তাঁরা সেটা দিতে পারেন। ঐকমত্য না হলেও কমিশন বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের পদ্ধতি সুপারিশ করবে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত কমিশনের কাছে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো- রাষ্ট্রপতির বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন।
