জাকসু নির্বাচন
ছাত্রদল-বামের বর্জনের মধ্যেই ভোটের উৎসব
* অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন ছাত্রদলের * দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক * জামায়াতের কোম্পানির ব্যালট দিয়ে কারচুপির পাঁয়তারা : শেখ সাদী * জামায়াত নয়, বিএনপির প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে ব্যালট পেপার * ক্যাম্পাসে অবৈধ অবস্থানের দায়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আটক
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বেশকিছু পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে উৎসমুখোর পরিবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে। এতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। শিক্ষার্থীরা নিজের পছন্দের প্রার্থীদের জয়ের আশায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেন। তবে, প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ, ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, পোলিং এজেন্টদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ এনে জাকসু নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রদল, সংশপ্তক, সম্প্রীতির ঐক্য ও স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ প্যানেল।
গতকাল রাত প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা আজ শুক্রবার সকাল হতে পারে বলে জানান জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘একটু আগে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ব্যালট বাক্স সিনেটে এসেছে। এতে সব কেন্দ্রের ব্যালট এক জায়গায় হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা গণনা শুরু করবো। ফল ঘোষণা করতে আগামীকাল সকাল হয়ে যেতে পারে।’ ওএমআর মেশিনে ফল গণনার কথা থাকলেও কিছু অভিযোগ উঠার পর হাতে গণনার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার সময় শুক্রবার সকাল পর্যন্ত লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব বলেন, ‘ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হবে। ফলাফল শুক্রবার সকাল বা দুপুর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’ একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলের ভোটকেন্দ্রের ব্যালট বাক্সগুলো সিনেট হলে আনা হয়েছে। সিনেট হলেই ভোট গণনা শুরু হয় এবং সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি স্থানে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থারা রয়েছে। সেখানেই ফল ঘোষণা করা হবে।’
কোন হলে কত ভোট পড়ল : জাকসু নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৯১৯ শিক্ষার্থী ভোটার। সেখানে আল বেরুনী হলে ২১১ ভোটের বিপরীতে ১২৫, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে ৩৪১ ভোটের বিপরীতে ২১৬, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ ভোটের বিপরীতে ৩১০, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৮০ ভোটের বিপরীতে ১৩৭, শহীদ সালামণ্ডবরকত হলে ২৯৯ ভোটের বিপরীতে ২২৪, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ ভোটের বিপরীতে ৩৮৪, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ ভোটের বিপরীতে ২৪৭, প্রীতিলতা হলে ৩৯৯ ভোটের বিপরীতে ২৪৬, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৯ ভোটের বিপরীতে ২৪৯, ১০ নম্বর (ছাত্র) হলে ৫৪১ ভোটের বিপরীতে ৩৮১, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫৬ ভোটের বিপরীতে ৪৭০, বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ ভোটের বিপরীতে ২৪৬, ১৩ নম্বর (ছাত্রী) হলে ৫৩২ ভোটের বিপরীতে ২৭৯, ১৫ নম্বর (ছাত্রী) হলে ৫৭১ ভোটের বিপরীতে ৩৩৮, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ ভোটের বিপরীতে ২৬১, রোকেয়া হলে ৯৫৫ ভোটের বিপরীতে ৬৮০, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৮০৩ ভোটের বিপরীতে ৪৮৯, বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলে ৯৮৪ ভোটের বিপরীতে ৫৯৫, ২১ নম্বর (ছাত্র) হলে ৭৩৫ ভোটের বিপরীতে ৫৬৪, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৯৯১ ভোটের বিপরীতে ৮১০ এবং শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ ভোটের বিপরীতে ৭৫২ ভোট পড়েছে।
জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১৭৭ জন প্রার্থী। নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৮৯৭ জন শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ হাজার ১১৫ জন এবং ছাত্রী ৫ হাজার ৭২৮ জন। ভোটগ্রহণের জন্য ২১টি কেন্দ্রে ২২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়। নির্বাচনে বামপন্থি, শিবির, ছাত্রদল ও স্বতন্ত্রদের সমর্থিত মিলিয়ে সর্বমোট আটটি প্যানেল অংশগ্রহণ করে। ছাত্রদের ১১টি ও ছাত্রীদের ১০টি হল মিলিয়ে মোট ২১ ভোটকেন্দ্র ঠিক করা হয়। নির্বাচনে ৬৭ জন পোলিং অফিসার (শিক্ষক) এবং ৬৭ জন সহায়ক পোলিং অফিসার (কর্মকর্তা) নিয়োগ করা হয়।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাস কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোতায়েন করা হয় ১ হাজার ৫৩৪ জন পুলিশ সদস্য, ৭ প্লাটুন বিজিবি এবং ৫ প্লাটুন আনসার সদস্য। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসে এবং এর আশপাশে অবস্থান নেয়, যাতে যেকোনো অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দ্রুত মোকাবিলা করা যায়। নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে নিয়ন্ত্রিত চলাচল নিশ্চিত করতে নেওয়া হয় কিছু বিশেষব্যবস্থা। মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন গেট ও প্রান্তিক গেট ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সব গেট ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সকল প্রকার ভাসমান দোকান, টারজান পয়েন্টের দোকান, পুরাতন পরিবহন চত্বর সংলগ্ন দোকান, নতুন কলা ভবন সংলগ্ন মুরাদ চত্বরের দোকান, প্রান্তিক গেটের উত্তর পাশের কাপড়ের মার্কেট ও প্রধান গেট সংলগ্ন দোকানগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে, সকল আবাসিক হলের অভ্যন্তরে ক্যান্টিন ও প্রয়োজনীয় দোকান খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং পর্যাপ্ত খাবার মজুত রাখার কথা বলা হয়।
নির্বাচনি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগ (নিরাপত্তা, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট) ব্যতীত সকল ধরনের মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময়ে শুধুমাত্র শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাকার স্টিকারযুক্ত এবং নির্বাচন কমিশনের স্টিকারযুক্ত যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। সকল স্টাফবাস শুধুমাত্র প্রান্তিক গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করল ছাত্রদল : জাকসু নির্বাচন বর্জন করেছে ছাত্রদল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল প্যানেলের জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। তিনি বলেন, আমাদের ভিপি প্রার্থীকে তাজুদ্দিন হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে ভোট গণনার যন্ত্রপাতি (ওএমআর) কেনা হয়েছে। অমোচনীয় কালি উঠে যাচ্ছে। ফলে এটি একটি পাতানো নির্বাচন। তাজুদ্দিন হলে ভোটার লিস্টে কারও ছবি নেই। যার ফলে দুই ঘণ্টা ওই হলে ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।
তানজিলা হোসাইন বৈশাখী বলেন, প্রতিবাদ করায় জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা বাতিল করা হলেও তার দেওয়া ব্যালট দিয়ে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। জাহানারা ঈমাম হলে একজন স্বতন্ত্রপ্রার্থীর গায়ে হাত তোলা হয়। সেখানে মব সৃষ্টি করা হয়। সব হলে আমাদের পোলিং এজেন্টদের থাকতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, মেয়েদের হলগুলোতে আইডি কার্ড চেঞ্জ করে ছাত্রশিবিরের লোকজন বারবার ভোট দিয়েছেন। জাকসুতে কোনোভাবে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করা হচ্ছে। এটা পরিপূর্ণ কারচুপির নির্বাচন। প্রহসনের নির্বাচন। এসবের প্রতিবাদের আমরা ভোট বর্জনে বাধ্য হচ্ছি। এসময় ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসানসহ প্যানেলের বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক : অনিয়মের অভিযোগ এনে জাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক। গতকাল ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছু সময় আগে তারা এ ঘোষণা দেন। নির্বাচন বর্জনকারী তিন শিক্ষক হলেন- অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা ও নাহরিন ইসলাম খান। তাদের মধ্যে অধ্যাপক নজরুল ছিলেন কেন্দ্রীয়ভাবে জাকসু নির্বাচন মনিটরিংয়ের দায়িত্বে। বাকি দুই শিক্ষক ছিলেন হল-পর্যায়ের মনিটরিং দায়িত্বে।
জামায়াতের কোম্পানির ব্যালট দিয়ে কারচুপির পাঁয়তারা চলছে- শেখ সাদী : জাকসু নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কোম্পানি থেকে নেওয়া ব্যালট ব্যবহার করে কারচুপির পাঁয়তারা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থীরা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীর কোনো এক অখ্যাত কোম্পানি থেকে ক্রয় প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করে। ছাত্রশিবিরকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ভোট গণনায় কারচুপির বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিকভাবে ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার পরিবর্তে ম্যানুয়ালি ভোট গণনার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু একই কোম্পানির ব্যালটপেপার দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রশিবির তাদের কোম্পানি থেকে আলাদা করে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে কারচুপির মাধ্যমে জয়ী হওয়ার জন্য নীলনকশা করেছে বলে আমরা মনে করছি। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানালে ও নতুন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের দাবি জানালে নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবি না মেনে জামায়াতে ইসলামীর কোম্পানির ব্যালট দিয়েই ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। এইরকম পক্ষপাতমূলক আচরণের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছি।
‘জামায়াত নয়, বিএনপির প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে ব্যালট পেপার- মাজহারুল ইসলাম: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের জন্য কেনা ওএমআর ফরম (ব্যালট পেপার) যে প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হয়েছে সেটি জামায়াত নয়, বরং বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এ সময় তিনি কিছু প্রমাণও হাজির করেন।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, অনেকে বলেছে ওএমআর ফরম যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে সেটি জামায়াতের প্রতিষ্ঠান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই, এই ফরম যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে সেটির নাম এইচআর সফট বিডি, যার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার রোকনুজ্জামান রনি। তার ফেসবুক পোস্টে দেখুন খালেদা জিয়া, তার আইনজীবি সানাউল্লাহকে প্রমোট, তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের ছবি পোস্ট করা আছে। এছাড়া খালেদা জিয়ার ছবি বিকৃত করা নিয়ে ফেসবুক পোস্টে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। তাহলে তিনি কিভাবে জামায়াত হন? কেন এতো মিথ্যাচার করা হলো? জাকসু এই জিএস প্রার্থী আরও বলেন, আমাদের কথা হলো ব্যক্তি যেই হোক বা মেশিনটা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে, সেটা কোনো ফ্যাক্ট হওয়ার কথা না। মেশিনে যদি কোনো ত্রুটি থাকে সেটি নিয়ে কথা ওঠা উচিত। আমরা যদি বলি বর্তমান ভিসি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ছিলেন। তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয়টি বিএনপির হয়ে গেছে? আপনারা মিথ্যাচার বন্ধ করুন। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কথা বলুন।
ওভারঅল পরিস্থিতি উদ্বেগজনক -শিবিরের জিএস প্রার্থী : ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদল ও বাগছাস বিভিন্নভাবে মব তৈরি করেছে। তারা দাবি করেছে, শিবির এবং ছাত্রী সংস্থা ভোট চুরি করেছে। তবে তিনি বলেন, ওভারঅল যা আমি দেখতে পেয়েছি, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি প্রশাসনের চরম ব্যর্থতার পরিচায়ক।
সম্প্রীতির ঐক্য ও স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ প্যানেলের ভোট বর্জন : প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ, ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা, পোলিং এজেন্টদের হয়রানিসহ নানা অভিযোগ এনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে সম্প্রীতির ঐক্য ও স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ প্যানেলসহ পাঁচজন স্বতন্ত্রপ্রার্থী। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় এ ঘোষণা দেন তারা। গতকাল রাত ৯টা প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জাকসুতে মোট চারটি প্যানেল ভোট বর্জন করেছে। এর আগে জাল ভোট ও ভোটারের অতিরিক্ত ব্যালট কেন্দ্রে পাঠানোসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বর্জন করে সংশপ্তক পর্ষদ ও ছাত্রদল প্যানেল।
ছাত্রীদের কেন্দ্রে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী, হট্টগোলে ভোট বন্ধ : জাকসু নির্বাচনে ছাত্রীদের একটি কেন্দ্রে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান প্রবেশ করায় হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের বের করে দেন। এ নিয়ে কেন্দ্রটি সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফজিলাতুন্নেসা হলে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর পৌনে ১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে হট্টগোল চলছিল এবং ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হলে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলেছে।
ভোটার ২৯৩ জন, ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে ৪০০- আরিফুল্লাহর অভিযোগ : জাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রগুলোতে ভোটারের চেয়েও বেশি ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুল্লাহ আদিব। তিনি বলেন, শহীদ সালামণ্ডবরকত হল কেন্দ্রে মোট ভোটারই ২৯৩ জন। অথচ সেখানে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে ৪০০টি। এটা খুব অ্যালার্মিং (আশঙ্কাজনক)। অতিরিক্ত ১০৭টি ব্যালট পেপার সেখানে কেন পাঠানো হয়েছে, তার কোনো সদুত্তর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা পাইনি।
শিবির ও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জিতুর : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। জিতু বলেন, ‘আমার দেখেছি, অনেকগুলো হলে ইসলামী ছাত্রশিবির তারা তাদের প্রার্থীদের প্রচারপত্র বিলি করছে। এটা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, এ ছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একটি কক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অবস্থান করছিলেন। তাকে সেই হলের প্রভোস্ট ও সাংবাদিকরা বের করে দিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হল কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার সময় ভোটারের আঙুলে মার্কার দিয়ে দাগ না দেওয়ারও অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের এ ভিপি প্রার্থী। তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি কয়েকটি হলে ভোট দেওয়ার পরে ভোটারদের হাতে মার্ক করা হয়েছে, কয়েকটি হলে হয়নি। এ বিষয়টি আমাদের কাছে অসঙ্গতি মনে হয়েছে।
ভোটের দিন জাবির হলে অবস্থান করা ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আটক : জাকসু নির্বাচন চলাকালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একটি কক্ষ থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক সহ-সভাপতিকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টার দিকে হলের ৪২৪ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক ছাত্রদল নেতা হাফিজুর রহমান সোহান কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ ব্যাচের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। অবৈধভাবে হলে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে এসেছিলাম রাতে। একটু শরীর খারাপ লাগায় এখানে হলে এসে শুয়ে পড়েছি।’ আবাসিক হলে অবস্থানের ক্ষেত্রে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আমি কোনো অনুমতি নিইনি।’
এদিকে, আটকের পর ছাত্রদলের ওই নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথ হল কেন্দ্রপ্রধান ও প্রভোস্ট অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালে আবাসিক হলে সাবেক শিক্ষার্থীদের অবস্থান করা আচরণবিধির লঙ্ঘন। তাই আমরা তাকে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দিচ্ছি।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘আটক ছাত্রদল নেতাকে সিকিউরিটি গার্ডের কাছে রাখা হয়েছে। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। যেহেতু সে সাবেক ছাত্র, কী জন্য এখানে এসেছে, তা জেনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
