ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চার সুপারিশ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চার সুপারিশ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট, অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে এ নিয়ে আলাদা মতামত দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে ওই চারটি সুপারিশের কথা জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।

এর মধ্যে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আগামী সংসদ সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য করবে এমনটি চায় গণসংহতি আন্দোলন। অন্যদিকে আগামী সংসদেই বাস্তবায়ন চায় বিপ্লবী ওয়ার্কর্স পার্টি।

বৈঠকে কমিশন জানায়, জুলাই সনদের সাংবিধানিক দিকগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সনদ বা এর কিছু অংশ নিয়ে গণভোট, রাষ্ট্রপতির নির্বাহী ক্ষমতা বলে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন, নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণপরিষদ গঠন করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক পদক্ষেপ, ত্রয়োদশ সংসদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভারূপে প্রতিষ্ঠা করে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মতামত চাওয়া যে, যাতে বলা হবে অন্তর্বর্তী সরকার এ সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে কিনা।

দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্য কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাঁচ পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। এগুলো হলো- অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ এবং ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া।

তবে আরও বিস্তারিত আলোচনার পর জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়া বিষয়গুলোকে (যার মধ্যে ভিন্নমত) চার উপায়ে বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সেগুলো হচ্ছে- অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট এবং বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ।

বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের মধ্যাহ্নে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামী নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতেই হতে হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অপরদিকে অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির বলেন, আমরা মনে করি জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে গত বছরের ৫ আগস্ট। তাই একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তবে এর বাস্তবায়নের তারিখ দেখাতে হবে ৫ আগস্ট থেকে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বিদ্যমান সংবিধানেই মৌলিক বিষয়ে একমত হয়েছে দলগুলো। কমিশন যেসব প্রশ্নে এক হয়েছে, আগামী সংসদের প্রতিনিধিরা তা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হবেন, সে সংক্রান্ত আইন করতে হবে। তিনি চান, আগামী সংসদ হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ নামে; যারা দেশের মৌলিক সংস্কারের কাজ করবে। একইসঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনাও করবে।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে আগামী জাতীয় সংসদ। কারণ সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান সংবিধানের আলোকেই আমরা চলছি। সনদ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হলে বিপজ্জনক হবে বলে সাইফুল হকের আশঙ্কা। তিনি মনে করেন, এমনটি হলে ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়ে রাষ্ট্রপতি যেকোনও সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারেন

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ বলেন, বিশেষ সাংবিধানিক অধ্যাদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নির্বাচিত সরকার তা করবেন কিনা অনিশ্চিত। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামীর পথরেখা তৈরি হবে। দুয়েকটি বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও ৮৪টি বিষয়ের অধিকাংশ বিষয়েই দলগুলো একমত হয়েছে। তার মানে এক ধরনের রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘৩১ জুলাই আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ হলেও সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। বিশেষ করে অঙ্গীকারনামা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।’

এ নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ২ সাবেক বিচারপতি, তিনজন আইনজীবী ও ২ জন আইনের শিক্ষক মতামত দিয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গেও পরামর্শ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। আলী রীয়াজ বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় কমিশন আসলে নিজের পক্ষ থেকে কিছু চাপিয়ে দিতে চায় না। অনেকে বলেছেন কিছু বিষয়ে এই সরকারও বাস্তবায়ন করতে পারে। তবে আজ আলোচনা শেষে সব রাজনৈতিক দলোর অবস্থান সরকারকে জানাতে পারবো। সে বিষয়টি যত দ্রুত সম্পন্ন করতে পারবো, তত দ্রুত সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে দেওয়া সম্ভব হবে।’ তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অব্যাহত ও দৃঢ় সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

বৈঠকে কমিশনেরসদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত