ফেব্রুয়ারিতেই ‘মহোৎসবের’ নির্বাচন
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা : * ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন হবে। সেটি হবে মহোৎসবের নির্বাচন, যদি আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে ফয়সালা করতে পারি। এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়, এটি হবে জাতির নবজন্ম * আমাদের হাতে এখন আলাদিনের প্রদীপের মতো সুযোগ এসেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সেই শক্তি এনে দিয়েছে। এই সুযোগ একবারই এসেছে, আর আসবে না * রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের পথে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে একটি ‘মহা উৎসব’, যা জাতির জন্য নবযাত্রার সূচনা ঘটাবে।
গতকাল রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে। সে নির্বাচন মহোৎসবের নির্বাচন হবে। যদি আমরা আমাদের এগুলো ফয়সালা করে ফেলতে পারি তাহলে এটা মহা উৎসব এবং জাতির সত্যিকার নবজন্ম হবে। এটা শুধু নির্বাচন না, এটা মহা উৎসব।
তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন গঠনের সময় তিনি নিশ্চিত ছিলেন না এ উদ্যোগ সফল হবে কি না।
কিন্তু দীর্ঘ আলোচনা ও ধৈর্যের মধ্য দিয়ে কমিশনের সদস্যরা একটি ‘অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনারা মূল কাজটা করে ফেলেছেন, সামান্য রাস্তা বাকি। সবকিছু নির্ভর করছে শেষ অংশটুকুর ওপর। বাকি রাস্তাটুকু যেন আপনারা সুন্দরভাবে সমাপ্ত করেন, পৃথিবীর জন্য নজির সৃষ্টি করেন।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, সমঝোতার পথ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, ‘যত কথাই আমরা বলি, যত যুক্তি দিই সমাধান এখানেই। আমাদের জাতি হিসেবে যে নবযাত্রা শুরু করার সুযোগ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আমাদের দিয়েছে, সেটার একমাত্র সমাধান হলো সমঝোতার পথে গিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা একটা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। ইতিহাসের স্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছেন। এখন শুধু এটাকে নিখুঁতভাবে শেষ করতে হবে।’ ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন হবে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর, যা দেশের নতুন যাত্রার সূচনা করবে।
এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চূড়ান্ত রূপ পাওয়া জুলাই জাতীয় সনদকে দেশের রাজনীতিবিদদের ঐক্যের দলিল।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, দলগুলোর মধ্যে যে সহযোগীতার ধারা তৈরি হয়েছিল, সামনের মাসগুলোতে তা অক্ষুণ্ণ রেখে চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছাতে পারবো। এটি কমিশনের প্রত্যাশা। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য অপরিহার্য। পরাজিত ফ্যাসিবাদি শক্তি এখনও চায়, এ প্রক্রিয়া যেন সফল না হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কিছু বিষয় ছিল যেগেুলো সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। আর কিছু বিষয় আছে যেগুলো সংবিধান-সংশ্লিষ্ট। যেগুলো সংবিধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় সেগুলো অর্ডিন্যান্স অথবা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
কিন্তু রাষ্ট্র কাঠামোর অনেক বিষয় যেগুলো সংবিধানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, যাতে সংবিধানের মৌলিক কতগুলো বিষয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এত বড় পরিবর্তন যে সেগুলোকে শুধু সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে টেকসই করা সম্ভব কি না তার আশঙ্কার জায়গাটি আমাদের মাঝে বিদ্যমান রয়েছে।যেহেতু বাংলাদেশে ইতোমধ্যে হাইকোর্টে সংবিধানের সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং সেগুলো বাতিল হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা সংবিধানে যে মৌলিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসছি তা কীভাবে টেকসই ও কার্যকর করা যায় সেই ব্যাপারে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান রেখেছি পদ্ধতি ঠিক করার জন্য।
আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি মনে করে একটি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান ও নতুনভাবে লিখিত ধারা-উপধারা ও অনুচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যে সংশোধনী ও সংস্কার প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি সেগুলো টেকসইভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, তার জন্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আবেদন কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সবার কাছে প্রশ্নাতীত করে আমরা কমিশনের কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করতে পারি।
