গাজায় জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল : জাতিসংঘ

* ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান আরব-মুসলিম নেতাদের * কাতারে আর হামলা করবে না ইসরায়েল : ট্রাম্প * ইসরায়েল একঘরে হয়ে পড়েছে স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন (জেনোসাইড) চালাচ্ছে ইসরাইল। জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত শেষে প্রথমবারের মতো বিশ্ব সংস্থার পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। ইসরাইলের শীর্ষ নেতারা এই জাতিগত নিধন উসকে দিয়েছেন বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ৭২ পাতার এই তদন্ত প্রতিবেদন গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের সবচেয়ে প্রামাণ্য ফলাফল’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় ‘চারটি জাতিগত নিধন কর্মকাণ্ড’ পরিচালনা করেছে বলে তাদের তদন্তে উঠে এসেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরাইলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ ব্যক্তিকে হত্যা করে। আরও আড়াই শ জনের বেশি মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রতিশোধ নিতে ওই দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার ও নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরাইল, যা এখনও চলছে। দখলকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের অনুসন্ধান কমিশনের প্রধান এবং সাবেক আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের বিচারক নাভি পিল্লে বলেন, ‘গাজায় জাতিগন নিধন চলছে। তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের দায়ভার ইসরাইলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর রয়েছে, যারা প্রায় দুই বছর ধরে একটি গণহত্যামূলক অভিযান পরিচালনা করছেন, যার বিশেষ উদ্দেশ্য হলো গাজার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করা।’

এদিকে জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল মেরন প্রতিবেদনটিকে ‘স্ক্যান্ডালাস’ এবং ‘মিথ্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন এটি ‘হামাসের প্রতিনিধি(প্রক্সি)’র রচিত। মেরন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসরাইল পুরোপুরি এই অনুসন্ধান কমিশনের প্রকাশিত মানহানিকর উগ্র মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করছে।’

আরব-মুসলিম নেতাদের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান : কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পর গত সোমবার দেশটির রাজধানী দোহায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা এক জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে বসেন। সম্মেলন শেষে তাঁরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। আরব লীগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এই যৌথ বৈঠকে প্রায় ৬০টি দেশ অংশ নেয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে দোহায় হামাস নেতাদের বৈঠক চলাকালে বিমান ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েল। হামাস জানিয়েছে, হামলায় তাদের পাঁচ সদস্য ও কাতারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। কিন্তু ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির শীর্ষ কোনো নেতা নিহত হননি। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার জরুরি সম্মেলনটির আহ্বান করেছিল কাতার। সম্মেলন শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান কার্যক্রম রোধে সব ধরনের আইনি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে (বৈঠকে অংশগ্রহণকারী) সব দেশের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।’ এসব কার্যক্রম হতে পারে, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা এবং দেশটির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা।’ কাতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও বাহরাইনসহ জর্ডান, মিসর এবং মরক্কো এরই মধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব দেশও গতকালের সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ইউএই, বাহরাইন এবং মরক্কোর শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে অংশ নেননি। এই পাঁচটি দেশের মধ্যে মিসর ও জর্ডান আগেই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাকি তিনটি দেশ পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া ‘আব্রাহাম চুক্তি’র মাধ্যমে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়। গতকালের সম্মেলনে এসব দেশের নেতারা অংশ না নিয়ে ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। বিবৃতিতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়, তারা যেন সংস্থাটির সদস্যপদ স্থগিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়।

এদিকে ইসরায়েল সফরে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গতকাল মঙ্গলবার কাতার সফরে যাচ্ছেন। গতকাল জেরুজালেমে রুবিও বলেন, ইসরায়েলের ‘হামাস নির্মূলের লক্ষ্য’ পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দৃঢ় সমর্থন’ অব্যাহত থাকবে।

দোহায় ইসরায়েলের হামলার পর উপসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। এতে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা রয়েছে। অঞ্চলটির বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি অবস্থিত কাতারে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ভাষ্যমতে, গত সপ্তাহের হামলার পর রুবিও কাতারে গিয়ে দেশটির নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন।

গাজা নিয়ে চাপ বাড়ছে : জ্বালানি তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ ধনী দেশ কাতার সাধারণত শান্তিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কও বেশ ভালো। তা ছাড়া গাজা যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টায় মিসরের পাশাপাশি দেশটিও শুরু থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল। তাই দেশটিতে ইসরায়েলের হামলার সবাইকে অবাক করেছে। হামলার পর ‘সমন্বিত আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়ার’ কথা জানিয়েছে কাতার।

গত সোমবারের জরুরি সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ানো। তবে গাজায় হত্যাকাণ্ড ও মানবিক সংকট সৃষ্টির দায়ে দেশটির ওপর এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে।

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির অভিযোগ, দোহায় (৯ সেপ্টেম্বর) আলোচনায় বসা হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে চাইছে। যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টায় তাঁর দেশ অন্যতম প্রধান মধ্যস্থতাকারী বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সম্মেলনে কাতারের আমির বলেন, ‘যাঁর সঙ্গে আলোচনা চলছে, তাঁকেই যদি পদ্ধতিগতভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়, তাহলে এর মানে স্পষ্ট। ধরে নিতে হবে, আলোচনা ভেস্তে দেওয়ারই চেষ্টা চলছে।’

গত সোমবারের সম্মেলনে সৌদি আরবের ডি-ফ্যাক্টো (কার্যত) শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস প্রমুখ অংশ নেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আগামীকাল যেকোনো আরব বা ইসলামি রাজধানী শহরকেও একইভাবে নিশানা করা হতে পারে।’ গত জুন মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ইরান। একটা পর্যায়ে ইসরায়েলের হয়ে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল। হামলা চালিয়েছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায়। এর জবাবে কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইরান। পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ‘পথ একটাই-আমাদের এক হতে হবে।’

ইসরায়েলকে আরব দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে স্বীকৃতি দিয়েছিল মিসর। সোমবারের সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সতর্ক করে বলেন, কাতারে এই হামলা ‘যেকোনো নতুন শান্তিচুক্তির সুযোগকে বাধাগ্রস্ত করছে। এমনকি এরই মধ্যে হওয়া শান্তিচুক্তিগুলোও ভেস্তে দিতে পারে।’

২০২০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আব্রাহাম চুক্তি শুরু করেছিল। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে ইউএই ও বাহরাইনের পর এখন পর্যন্ত আর কোনো দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। তবে সৌদি আরবসহ আরও কিছু দেশের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির সদস্য দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের অভিযোগ, ইসরায়েল ‘সন্ত্রাসী মানসিকতা’ নিয়ে এগোচ্ছে। অন্যদিকে সম্মেলনে অংশ গ্রহণকারী দেশগুলো গাজা প্রসঙ্গে ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেছে। সম্মেলনের ফাঁকে উপসাগরীয় ধনী দেশগুলো বৈঠক করে। বৈঠক শেষে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) মহাসচিব জাসেম মোহাম্মদ আল-বুদাইউই সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েলের লাগাম টেনে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের ‘প্রভাব ও ক্ষমতা’ কাজে লাগাতে আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো।

কাতারে আর হামলা করবে না ইসরায়েল- ট্রাম্প : ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কাতারে আর কোনো হামলার নির্দেশ দেবেন না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাতার হলো গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধের অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ। গত সোমবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ট্রাম্প বলেন, ‘নেতানিয়াহু আর কাতারে হামলার নির্দেশ দেবেন না। কাতার আমাদের খুবই ভালো মিত্র। অনেকেই এটি জানেন না, কিন্তু তিনি (নেতানিয়াহু) ভবিষ্যতে কখনো কাতারে হামলা করার নির্দেশ দেবেন না। এখন থেকে তিনি কাতারের সঙ্গে মিলেমিশে চলবেন।’

গত ৮ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি বিমান বাহিনী কাতারে আশ্রয়প্রাপ্ত হামাসের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে দোহার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলা চালায়। এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল হামাসের বর্তমান শীর্ষ নির্বাহী খলিল আল হায়া এবং গোষ্ঠীটির অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতা। মাত্র ১৫ মিনিট স্থায়ী হওয়া সেই অভিযানে দোহায় হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজনসহ মোট ছয়জন নিহত হলেও সৌভাগ্যবশত বেঁচে যান খলিল আল হায়া এবং হামাসের হাইকমান্ডের সদস্যরা। এই ঘটনায় বিশ্বের প্রায় সব দেশ ইসরায়েলের নিন্দা জানায়।

এদিকে, হামলার কয়েক ঘণ্টা পর ৯ সেপ্টেম্বর এক ব্রিফিংয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট দাবি করেছিলেন যে, কাতারকে সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলার ব্যাপারে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। ব্রিফিংয়ে লিভিট বলেছিলেন, ‘ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই হামলার ব্যাপারে আগে জানিয়েছিলেন।

নেতানিয়াহু বলেছিলেন, তিনি শান্তি স্থাপন করতে চান এবং তা শিগগিরই চান। তাই আমাদের কাছে আগে থেকেই এই হামলার খবর ছিল। নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্টিফ উইটকফের মাধ্যমে দোহাকে আসন্ন হামলার ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। পরে কাতারে অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটি থেকেও দোহাকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল।’ তবে সোমবার ওভাল অফিসে এক্সিওস-এর একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘না, তারা আমাকে আগে কিছু জানায়নি। আপনি হামলার তথ্য যেভাবে পেয়েছেন, আমিও ঠিক সেভাবেই পেয়েছি।’

ইসরাইল একঘরে হয়ে পড়েছে, স্বীকার করলেন নেতানিয়াহু : ইসরাইল আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গাজায় চলমান যুদ্ধ ও কট্টর উগ্র ডানপন্থি নীতির কারণে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে তিনি বলেছেন, দেশকে এখন স্বনির্ভর অর্থনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। গত সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও তার সরকারের কট্টর ডানপন্থি নীতির কারণে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে অবশেষে প্রথমবারের মতো ইসরাইলের একঘরে হয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা এক ধরনের বিচ্ছিন্নতার মধ্যে চলে যাচ্ছি, আর আমাদের ধীরে ধীরে এমন এক অর্থনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে যেখানে স্বনির্ভরতার বৈশিষ্ট্য থাকবে। ‘

মূলত নেতানিয়াহুর সরকার এতদিন কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল। তবে মাসের পর মাস নানা সতর্কবার্তার পর নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে বড় ধরনের স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইসরাইলি দৈনিক দ্যা মার্কারও নেতানিয়াহুর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তিনি বলেছেন- দেশ এখন ‘এক ধরনের রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার’ মধ্যে আছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাইরের ওপর নির্ভরতা এড়াতে ইসরাইলকে নিজেদের অস্ত্র নিজেকেই তৈরি করতে হবে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাজ্য, স্পেন ও কানাডা ইতোমধ্যেই ইসরাইলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করেছে। অন্যদিকে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, নরওয়ে ও যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ চলতি মাসের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

এদিকে নেতানিয়াহুর এই মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্নতা ভাগ্য নয়, এটা নেতানিয়াহুর ভুল ও ব্যর্থ নীতির ফল। তিনি ইসরাইলকে তৃতীয় বিশ্বের দেশে পরিণত করছেন এবং পথ বদলানোরও চেষ্টা করছেন না।