ভোটের আগে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতি
রাকসু নির্বাচনে হাতে ভোট গণনা চায় ছাত্রদল
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সকল বৈষম্য দূরীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাসহ (পোষ্য কোটা) তিন দফা দাবি আজ বৃহস্পতিবারের (১৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যে আদায় না হলে পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঠিক চার দিন আগে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবেন তারা। ইতোমধ্যে তিন দফা দাবি-সংবলিত এ চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছেন তারা। তাদের দাবিগুলো হলো- প্রাতিষ্ঠানিক সকল সুবিধা বাস্তবায়ন করতে হবে, সকল প্রশাসক প্রথা বাতিল করতে হবে এবং শিক্ষকগণের জন্য ব্যক্তিগত চেম্বারের ব্যবস্থা ও গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি। এ সময় জরুরি সেবা ছাড়া ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের পক্ষে স্বাক্ষর করা ৬ ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন, বিএনপিপন্থি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলিম, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমীরুল ইসলাম, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, শাখা জামায়াত সেক্রেটারি ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান, অফিসার সমিতির বিএনপিপন্থি সভাপতি মোক্তার হোসেন ও জামায়াতপন্থি কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা।
এদিকে, রাবির ক্যাম্পাসজুড়ে রাকসু নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। গত রবিবার বিকালে লটারির মাধ্যমে ব্যালট নম্বর দেওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাসজুড়ে নির্বাচনি আমেজ শুরু হয়েছে। প্রার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যালট নম্বর-সংবলিত কার্ডসহ প্রচারণার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের আবাসিক হলগুলোতে, গুরুত্বপূর্ণ চত্বরে, আড্ডাস্থলে, খেলার মাঠসহ আশপাশের মেসগুলোতে সশরীরে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উল্লেখ্য, রাকসু নির্বাচনে মোট ২৮ হাজার ৯০৫ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে রাকসু, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনে মোট ৯০৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি মিলিয়ে একজন ভোটারকে ৪৩টি ভোট প্রদান করতে হবে। ভোট প্রদানের পর গণনা শেষে ২৫ সেপ্টেম্বরই ফল প্রকাশ করা হবে।
স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং হাতে গণনা চায় ছাত্রদল : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ভোট হাতে গণনাসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্রদল। গতকাল বুধবার দুপুরে এসব দাবি জানায় ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এসব দাবিতে স্মারকলিপি দেয় তারা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রদান, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের প্রবেশ সংরক্ষিত করা ও ভোটারদের বিশৃঙ্খলা রোধে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতে কালো টাকা প্রতিরোধ করা এবং সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সব প্রার্থীর জন্য একই আচরণ বিধিমালা মেনে চলার বিষয়টির মনিটরিং করা।
ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, “আমি দেখছি, আমাদের প্রশাসনের গা-ছাড়া ভাব। আমি বলতে চাই, আপনারা আরো একটু সোচ্চার হোন। আমরা ভোট বর্জন করতে চাই না। “আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। রাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমি আশাবাদী, সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন হবে। আমাদের এই দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে রাকসু, সিনেট ও হল সংসদ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ইতিহাসে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, “ছাত্রদলের ছয় দফা দাবির মধ্যে পাঁচটা দফাই অত্যন্ত যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনার একটি দাবি ব্যাতীত পাঁচটা দাবিই মেনে নেবে। বর্তমান সময়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। উদাহরণ হিসাবে জাকসু নির্বাচনের কথা বলা যায়।” তিনি আরও বলেন, “স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স নিশ্চিত করা হবে এবং এভিএম পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হবে।”
২৮ জুলাই তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী সোমবার থেকে শুরু করে ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা পর্যন্ত প্রচার চলবে।
২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনে ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে। ভোট গণনা শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
