নেতাকর্মীদের একগুচ্ছ নির্দেশনা তারেক রহমানের
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও জনগণের সেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে তারেক রহমান এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। তারেক রহমান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো দেশের প্রতিটি ভোটারের আস্থা নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে, আজকের ও আগামী দিনের তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ছুটে যাচ্ছে তৃণমূল থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে; গ্রাম থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও মজবুত করছে। এই সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
তারেক রহমান বলেন, এরইমধ্যে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৭,০০০-এরও বেশি দলীয় সদস্যের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও অসদাচরণের দায়ে কেউ পদচ্যুত হয়েছেন; আবার অনেকেই বহিষ্কৃত হয়েছেন। বহুমুখী অপপ্রচারের মাঝেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না, তবে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে এগুলো ছিল অপরিহার্য। শৃঙ্খলা কোনো দুর্বলতা নয়; বরং সেটিই আমাদের শক্তি। নিজেদের সদস্যদের দায়বদ্ধ করার মাধ্যমেই আবারও প্রমাণ হলো যে, বিএনপি সততার ব্যাপারে আন্তরিক, এবং আমরা ক্ষমতাসীনদের কাছে যেসব মানদ- দাবি করি, নিজেদেরও ঠিক সেই একই মানদ-ে দাঁড় করাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এইভাবেই আমরা জনগণের আস্থা পুনর্গঠন করতে চাই বিশেষত তরুণদের, যারা রাজনীতিকে শুধুমাত্র ক্ষমতার খেলা হিসেবে দেখতে চায় না; বরং দেখতে চায় সবার অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা একটি মহৎ ক্ষেত্র হিসেবে। সময়ের চাহিদা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপি সব সময়ই নিজেকে আধুনিকায়ন করেছে। আমরা জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ও যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, তরুণদের কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনের প্রতিশ্রুতিসহ ৩১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে আমাদের নীতিমালা গড়ে উঠেছে। আমরা অন্তর্ভুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আরও বেশি নারী, তরুণ নেতা ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাতে জাতি আরও এগিয়ে যায় এবং রাজনীতি মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকে। আমরা চাই, বিএনপির পরিচয় হোক, সেবা, ন্যায়বিচার ও দক্ষতার প্রতীক হিসেবে; বিভাজন কিংবা সুবিধাভোগের প্রতীক নয়।
তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো আলাদা, তাই আমাদের পদক্ষেপগুলোকেও হতে হবে নতুনভাবে চিন্তানির্ভর। তবে আমরা ইতিহাসকে অস্বীকার করি না; বরং তার ভিত্তিতেই এগিয়ে যেতে চাই। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন; জনগণের ক্ষমতায়নকে রাজনীতির কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে গণতন্ত্র ও গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করে গিয়েছেন। আজ আমরা তাঁদের সেই আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলেছি নতুন যুগে; যেখানে সততা, তরুণ নেতৃত্ব ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হবে রাষ্ট্রগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
বিএনপির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, নিজ ঐতিহ্যকে ধারণ করে, বিএনপি প্রাধান্য দিচ্ছে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, ভবিষ্যতমুখী এবং আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মানের পথযাত্রাকে। আমরা জানি, তরুণরা চায় বাস্তব সুযোগ, তারা ফাঁকা বুলি চায় না। জনগণ চায় স্থিতিশীলতা, তারা বিশৃঙ্খলা চায় না। আর বিশ্ব চায়, বাংলাদেশ হোক একটি বিশ্বাসযোগ্য ও সম্মানিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই প্রত্যাশাগুলো পূরণে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার সহকর্মী ও নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকি এবং জনগণের সেবায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি। আমি যেমন আপনাদের প্রত্যেকের ওপর আস্থা রাখি, আপনারাও তেমনি আমার ওপর আস্থা রাখুন। তাহলেই গণতন্ত্রের পথ হবে আরও উজ্জ্বল। আমরা একসাথে প্রমাণ করবো যে, বাংলাদেশে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা, স্থিতিশীল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং গণআকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা সম্ভব, ইনশাআল্লাহ।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভকামনা করেছেন তারেক রহমান : আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভকামনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘দুর্গাপূজা’ সমাগত। উৎসবের প্রাক্কালে আমি সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইবোনদের আমার আন্তরিক শুভকামনা জানাচ্ছি।’
গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এই শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে সকলের সহযোগিতায় শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে উদ্?যাপনের মাধ্যমে এদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনুপম দৃষ্টান্ত ইতোমধ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে পলাতক বিগত স্বৈরশাসনের সুবিধাভোগীরা দুর্গোৎসবের সময়হীন ও অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে একাধিকবার ঐতিহ্যগতভাবে প্রতিষ্ঠিত এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের পতন হলেও তাদের ষড়যন্ত্রের অবসান যে হয়নি তার জলজ্যান্ত উদাহরণ আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি। সুতরাং এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে এমন যেকোনো অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও প্রতিরোধের প্রস্তুতি রাখতে হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দল-বিএনপি, সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে সমন্বয়ের মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের সহায়তায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপনে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। তারেক রহমান বলেন, এদেশের প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় অধিকারের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত রাখতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং তা বিনষ্টকারী যেকোনো ঘৃণ্য অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান দৃঢ় ও সুস্পষ্ট।
