ন্যাটোর মতো পাক-সৌদি চুক্তিতে যোগ দেবে আরও দেশ
প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যোগ দিতে পারবে অন্যান্য দেশও। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান-সৌদির মধ্যে হওয়া ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অন্য আরব দেশগুলোর যোগদানের সুযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি এটিকে সামরিক জোট ন্যাটোর মতো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে হওয়া পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে অন্য আরব দেশগুলোর যোগদানের সুযোগ খোলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘এই দরজা বন্ধ হয়নি।’ এর আগে গত বুধবার রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ঐতিহাসিক এই ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’-তে সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, যে কোনো এক দেশের ওপর আগ্রাসন মানেই উভয় দেশের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।
জিও নিউজের ‘আজ শাহজেব খানজাদা কে সাথ’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফকে জিজ্ঞেস করা হয়, অন্য আরব দেশগুলো কি এই চুক্তিতে যোগ দিতে পারে? উত্তরে তিনি বলেন, “এখনই চূড়ান্ত কিছু বলতে পারছি না, তবে আমি নিশ্চিত করে বলব— দরজা খোলা আছে।” আসিফ বলেন, গত ৪০-৫০ বছরের আঞ্চলিক ইতিহাস বিবেচনায় পাকিস্তানের জন্য ন্যাটোর মতো একটি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তা সবসময়ই ছিল। তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি এখানে থাকা দেশ ও জনগণের, বিশেষ করে মুসলিম জনসংখ্যার মৌলিক অধিকার হলো সম্মিলিতভাবে নিজেদের অঞ্চল ও জাতিকে রক্ষা করা।” তিনি জানান, এই চুক্তিতে কোথাও বলা হয়নি যে অন্য কোনো দেশ যোগ দিতে পারবে না কিংবা পাকিস্তান অন্য কোনো দেশের সঙ্গে একই ধরনের চুক্তি করতে পারবে না।
চুক্তিতে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতাও ব্যবহার হতে পারে কি না- এমন প্রশ্নে আসিফ বলেন, “আমাদের যা আছে, আমাদের সক্ষমতা অবশ্যই এই চুক্তির আওতায় থাকবে। তবে এটাও বলব, পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার পর থেকে কখনও আমাদের দায়িত্বশীল অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।” তিনি বলেন, পাকিস্তান সবসময় তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে এবং কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করেনি। বিপরীতে ইসরায়েল কখনও কোনো পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি।
পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, এক দেশের ওপর হামলা হলে অন্য দেশ সরাসরি জড়িত হবে- এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আরও বলেন, চুক্তিটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে নয় এবং এটি কোনো আগ্রাসী চুক্তিও নয়। বরং এটি একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা, অনেকটা ন্যাটোর মতো। আসিফ উল্লেখ করেন, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সৌদি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। তাই এই নতুন উদ্যোগ মূলত পূর্ববর্তী সহযোগিতারই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। তিনি বলেন, ‘যদি সৌদি আরব বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হয়, আমরা যৌথভাবে তা প্রতিরোধ করব।’ আসিফ স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তানের বহু দশক ধরে সৌদিতে সেনা ও বিমানবাহিনীর একটি বড় কনটিনজেন্ট অবস্থান করছে। তার মতে, এই সম্পর্ক এখন আরও স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হলো এবং প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে নতুন মাত্রা পেল। তিনি বলেন, সৌদি আরবে ইসলামী পবিত্র স্থানগুলোর সুরক্ষা পাকিস্তানের কাছে এক ‘পবিত্র দায়িত্ব’। চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে আসিফ বলেন, ‘এখানে অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা বা ন্যায্যতা নেই। এই চুক্তি কোনো আধিপত্য বিস্তারের পরিকল্পনা নয়, এটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। আমরা কোনো ভূখণ্ড দখল করতে বা আক্রমণ চালাতে চাই না। তবে আমাদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করা যাবে না, আর আমরা সেটাই প্রয়োগ করেছি।’ তিনি বলেন, পাকিস্তান ভবিষ্যতে অন্য দেশের সঙ্গেও একই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়তে পারে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ‘ন্যাটোর মতো’ প্রতিরক্ষা চুক্তি -সৌদি মিডিয়ায় উচ্ছ্বাস : পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান ও সৌদি আরব। আর পারমাণবিক অস্ত্রধারী পাকিস্তানের সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের মিডিয়া। মূলত সৌদি-পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত নতুন এই প্রতিরক্ষা চুক্তিকে ‘ন্যাটোর মতো প্রতিরোধমূলক ছাতা’ আখ্যা দিয়েছে সৌদি আরবের গণমাধ্যম। চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনো এক দেশের ওপর আগ্রাসন মানেই সেটি উভয় দেশের বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে গণ্য হবে। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সৌদি আরবের গণমাধ্যম রিয়াদ ও ইসলামাবাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তিকে “প্রতিরোধমূলক ছাতা” হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা উভয় দেশকে সীমাহীন সামরিক সক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দেবে।
গত বুধবার রিয়াদে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তির লক্ষ্য হলো “নিরাপত্তা জোরদার করা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা।” চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন মানে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন।’ একজন জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “এটি বহু বছরের আলোচনার ফসল। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দীর্ঘদিনের গভীর সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।” তিনি আরও জানান, “এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা সব ধরনের সামরিক সক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত থাকছে।”
সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান (ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ছোট ভাই) এক্স-এ লিখেছেন, “সৌদি আরব ও পাকিস্তান... যেকোনো আগ্রাসীর বিরুদ্ধে এক ফ্রন্ট... সবসময় এবং চিরকাল।” সৌদি দৈনিক ওকাজ লিখেছে, “ক্রাউন প্রিন্স ও পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন”। দেশটির বিভিন্ন শহরের টাওয়ারগুলোতে সৌদি ও পাকিস্তানি পতাকা আলোকিতও করা হয়। ওই পত্রিকায় একটি কলামে লেখক মুতেব আল আউয়াদ চুক্তিটিকে “ইসলামি ফ্রন্টের ঐতিহাসিক দুর্গ” হিসেবে বর্ণনা করেন। তার মতে, “সৌদির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তি যুক্ত হয়ে আঞ্চলিক প্রতিরোধকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।” তিনি লেখেন, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক শক্তি বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার গ্যারান্টি, উন্নত সামরিক সক্ষমতা তাকে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর অগ্রভাগে রেখেছে, আর ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলোর অভিভাবকত্ব তাকে দিয়েছে আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব।
আউয়াদ বলেন, ভিশন ২০৩০-এর কারণে সৌদি প্রতিরক্ষা শিল্প ও অস্ত্র উন্নয়নে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে এবং এখন উপসাগর ও ইসলামী বিশ্বের সম্মুখ সারির প্রতিরক্ষা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে পাকিস্তান হচ্ছে- এমন পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যার বিশাল সেনাবাহিনী ও ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের পাশাপাশি আরব সাগরের তীরে শক্ত অবস্থান রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যা ও প্রতিরক্ষা শিল্পের অভিজ্ঞতা যৌথ প্রতিরক্ষা কাঠামোকে শক্তিশালী করেছে। চুক্তিটি কার্যত “দ্বিপক্ষীয় যৌথ নিরাপত্তা ছাতা” তৈরি করেছে, যাতে থাকবে যৌথ অভিযান পরিকল্পনা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, সামরিক মহড়া, নৌ ও বিমান সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুনীফ আম্মাশ আল-হারবি সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়াকে বলেন, চুক্তিটি উভয় দেশকে সীমাহীন সামরিক সক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দিয়েছে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পক্ষগুলোকে বার্তা দিয়েছে। সৌদি আরবের বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফয়সাল আল-হামাদ একই চ্যানেলকে বলেন, ‘এই চুক্তি ন্যাটোর নীতি অনুসরণ করেছে। আর তা হচ্ছে- এক দেশের ওপর আক্রমণ মানেই সবার ওপর আক্রমণ।” পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলোও প্রতিরক্ষা চুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, চুক্তির পর ইসলামাবাদের আকাশচুম্বী ভবনগুলো সৌদি ও পাকিস্তানি পতাকায় আলোকিত করা হয়েছিল। আল-রিয়াদ লিখেছে, “ক্রাউন প্রিন্স পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন”। আল-মাদিনা শিরোনাম দিয়েছে, “সৌদি ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি।”
এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার মাত্র এক সপ্তাহ পর। সে ঘটনায় পাঁচজন হামাস শান্তি-আলোচক ও একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। তখন কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির মধ্যস্থতা করছিল।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অন্তত ১১ হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, গাজার প্রকৃত মৃতের সংখ্যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাবের চেয়ে বহুগুণ বেশি হতে পারে। আর সেটি হতে পারে প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি।
পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে নরেন্দ্র মোদির ব্যর্থতা দেখছে কংগ্রেস : কূটনীতিতে ব্যক্তিগত রসায়নই যে শেষ কথা নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তা ফের নতুন করে মনে করিয়ে দিল কংগ্রেস। সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তির পর সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে কংগ্রেস বলেছে, কূটনৈতিক দিক থেকে ওই চুক্তি আরও এক বড় ধাক্কা। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ গত বৃহস্পতিবার ওই চুক্তি প্রসঙ্গে বুঝিয়ে দেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার ব্যক্তিগত রসায়নের যে উল্লেখ করেন, কূটনীতিতে তা অর্থহীন। ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে এক পোস্টে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, পেহেলগামে যেদিন হামলা হয়, প্রধানমন্ত্রী সেদিন সৌদি আরবে ছিলেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সেই সৌদি আরব প্রতিরক্ষা চুক্তি সেরে ফেলল।
পোস্টে জয়রাম আরও উল্লেখ করেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়ন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি ঘটা করে চীন সফর করলেন। তার পরপরই চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং বেইজিংয়ের গোপন সামরিক ভবনের দরজা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির জন্য খুলে দিলেন।
কংগ্রেস নেতা উল্লেখ করেন, প্রতিটি ঘটনাই ভারতের নিরাপত্তার জন্য গভীর উদ্বেগের। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, প্রধানমন্ত্রী মোদির তথাকথিত ব্যক্তিগত রসায়নের কূটনীতি কতটা ব্যর্থ। বস্তুত, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে গত বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হয়, তা ভারতের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। কারণ, চুক্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের কেউ আক্রান্ত হলে তা দুই দেশের ওপর ‘আগ্রাসন’ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে ওই চুক্তি নিয়ে ভারত খুবই সতর্কভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিক্রিয়াও যথেষ্ট সংযত। আগ বাড়িয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য না করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জাতীয় নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর এই চুক্তির কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, ভারত তা খতিয়ে দেখছে। সরকার দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের সামরিক সম্পর্ক বহু পুরোনো। ১৯৬০-এর দশক থেকেই সৌদি সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাকিস্তানি বাহিনী সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ভারত-সৌদি সম্পর্কও মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দৃঢ় হতে শুরু করেছে। ২০০৬ সালে সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ ভারত সফরে এসেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সৌদি আরব সফর করেন ২০১০ সালে। ২০১৬ সালে রিয়াদে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিন বছর পর ২০১৯ সালে পাল্টা ভারতে আসেন যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমান। মোদিও সেই বছর দ্বিতীয়বার সৌদি সফরে যান। যুবরাজও শেষবার ভারত সফরে আসেন ২০২৩ সালে। পেহেলগামে হামলার সময়েও মোদি ছিলেন সৌদি আরবে।
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক যখন জোরদার এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ বাতিল না করে ভারত যখন তা স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে, তখন চুক্তির জন্য এই সময়টা বেছে নেওয়া ভারতকে ভাবাচ্ছে। চুক্তি সইয়ের সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরও উপস্থিত ছিলেন।
ভারত মনে করছে, এই সময়ে এমন চুক্তি সইয়ের একটা সম্ভাব্য কারণ হয়তো ইসরায়েলের আগ্রাসী মনোভাব। মাত্র কয়েক দিন আগে ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের প্রতিবেশী কাতারের রাজধানী দোহায় আকাশপথে আক্রমণ চালিয়েছিল ইসরায়েল। যদিও ইসরায়েলের দাবি, সেই হানার লক্ষ্য ছিল হামাস নেতৃত্ব।
ইসরায়েলের ওই হামলাকে আরব দেশগুলো ভালোভাবে নেয়নি। আরব লিগ ও ওআইসির বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। তারপরেই এই চুক্তি। সৌদি দৃষ্টিতে চুক্তির মুল লক্ষ্য ইসরায়েল মনে করা হলেও পাকিস্তানের দিক থেকে ওই চুক্তি ভারতের ভবিষ্যৎ আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ মনে করা হচ্ছে। সেটাই ভারতের চিন্তার কারণ।
ভারতের কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, চিন্তা বা দুশ্চিন্তা যাই হোক না কেন, এমন কোনো মন্তব্য করা হবে না, যাতে সৌদি-ভারত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে চিড় ধরে। ভারত ও সৌদি আরবের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। সৌদি আরবে ২৫ লাখ ভারতীয় কাজ করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সৌদি আরবে কর্মরত ভারতীয়রা ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠিয়েছিলেন।
