ফিলিস্তিনকে একের পর এক স্বীকৃতি
কূটনৈতিক সুনামির মুখে ইসরায়েল
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার পথ ধরে পর্তুগালও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। রোববার পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো র্যাঙ্গেল এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। তিনি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি লিসবনের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এটিকে ‘ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনের একমাত্র কার্যকর পথ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সরকার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পর পর্তুগালের এ ঘোষণা আসে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে ঘটা এ ঘটনাকে ‘কূটনৈতিক সুনামি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগির আরও কয়েকটি দেশ একই ধরনের পদক্ষেপ নেবে। বর্তমানে, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
রোববার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ঘোষণা করেন, অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে ক্যানবেরা কানাডা ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমন্বিতভাবে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের গতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ঘোষণা করেন, কানাডা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনাকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারও এদিন ফিলিস্তিনকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ‘ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের জন্য শান্তির আশা এবং দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করতে যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।’ এদিকে, সোমবার শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন বেশ কিছু দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যেসব দেশের নাম আলোচনায় এসেছে তার মধ্যে রয়েছে- ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা ও সান মারিনো। এছাড়াও, কিছু প্রতিবেদনে নিউজিল্যান্ড ও লিচেনস্টাইন-এর মতো দেশগুলোও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ পদক্ষেপগুলোকে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে বাধাগ্রস্ত করার ইসরায়েলি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চার দেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল হামাস : ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ফাতাহ। তারা এ পদক্ষেপকে নিজেদের ভূমি ও পবিত্র স্থানগুলোর ওপর ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারের স্বীকৃতি হিসেবে অভিহিত করেছে।
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, এ পদক্ষেপের পাশাপাশি গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং পশ্চিমতীর ও অধিকৃত জেরুজালেমে আগ্রাসন ও ইহুদিকরণ প্রকল্পের মোকাবিলা করতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। হামাস ইসরায়েলকে একঘরে করা, এর নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
একইভাবে, ফাতাহ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা ১৯৬৭ সালের সীমান্তের ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার এ পদক্ষেপে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছে, এটি একটি ঐতিহাসিক স্বীকৃতি এবং ফিলিস্তিনিদের বিজয়, যা স্বাধীনতার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামের বৈধতাকে নিশ্চিত করে। অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোকেও এ পদক্ষেপ অনুসরণ করে ফিলিস্তিনি জনগণের রাষ্ট্র গঠনের বৈধ আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
স্বীকৃতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাল সৌদি ও কাতার : যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সৌদি আরব ও কাতার। এক বিবৃতিতে সৌদি আরব জানিয়েছে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি পশ্চিমা দেশগুলোর শান্তি প্রক্রিয়ার অঙ্গীকারকে আরও সুদৃঢ় করেছে। সৌদি আরব ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দেওয়া বাকি দেশগুলোকেও একই পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে কাতার জানিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলোর স্বীকৃতি এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সবল করেছে।
যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াও পর্তুগালের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতিকে ‘মাইলস্টোন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ফিলিস্তিনি শীর্ষ নেতারা। ফাতাহের মোহাম্মদ শাতাইয়া বলেন, এটি মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন বড় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফল।
ফিলিস্তিনের আরও একজন শীর্ষ নেতা বলেন, এটি গাজাবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক পরিবর্তনের সূচনা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরাইলের যুদ্ধ বন্ধে আহ্বান জানান তিনি।
তবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনও গঠিত হবে না। যে দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে তাদের প্রতি নেতানিয়াহু বলেন, সন্ত্রাসবাদকে অনেক বড় পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। যা হতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন নেতানিয়াহু।
