এক ইঞ্চি মাটিও দেবে না আফগানিস্তান

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলেকিত ডেস্ক

আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ে কোনো চুক্তি ‘সম্ভব নয়’। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক এই মার্কিন ঘাঁটিটি ফেরত পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এমনকি ফেরত না দিলে ‘ফল ভালো হবে না’ বলেও হুমকি দেন তিনি। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের উত্তরে অবস্থিত বাগরাম ছিল তালেবানের বিরুদ্ধে ২০ বছরের যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। চার বছর আগে মার্কিন সেনারা এই ঘাঁটি ত্যাগ করে।

ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘যদি আফগানিস্তান যারা এটি তৈরি করেছে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত না দেয়, তবে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে!’ গত রোববার আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান স্টাফ ফাসিহুদ্দিন ফিতরাত স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কিছু মানুষ একটি রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে ঘাঁটিটি ফেরত নিতে চায়।’ তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটি নিয়েও কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। আমাদের এটির দরকার নেই।’ পরে এক সরকারি বিবৃতিতে আফগান সরকার সতর্ক করে দেয় যে, ‘আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ।’ ট্রাম্প বারবার এই ঘাঁটি হারানোর সমালোচনা করেছেন এবং এর কারণ হিসেবে চীনের সঙ্গে আফগানিস্তানের নৈকট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে এক রাষ্ট্রীয় সফরের সময় তিনি প্রথমবার প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাগরাম ঘাঁটি ফেরত পাওয়ার দাবি উল্লেখ করেন।

২০২১ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে এবং এর আগে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে মার্কিন ও ন্যাটো সেনারা বাগরাম থেকে সরে আসে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার পর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আফগান সামরিক বাহিনী ভেঙে পড়ে এবং তালেবান আবার ক্ষমতায় আসে।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি বাগরাম পুনর্দখলের জন্য মার্কিন সেনা পাঠানোর কথা বিবেচনা করছেন কিনা সে বিষয়ে কিছু বলবেন না। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা বলছি, এবং আমরা এটি ফেরত চাই, এখনই ফেরত চাই। আর যদি তারা তা না করে, তাহলে আমি কী করব তা আপনারা জানতে পারবেন।’

বাগরাম একটি বিশাল, বিস্তৃত স্থাপনা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো বারবার বাগরামে মার্কিন বাহিনীর দ্বারা পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। বিশেষ করে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর সময় আটক বন্দীদের প্রতি অমানবিক নির্যাতনের অনেক প্রমাণ পরবর্তীতে গণমাধ্যমে এসেছে।

মূল পোতাশ্রয়টি ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় নির্মিত হয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় মার্কিন সহায়তায় এটি সম্প্রসারিত হয় এবং এক দশকের সোভিয়েত দখলদারির সময় মস্কো এটিকে আরও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে। ২০১০ সালের দিকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে এটি একটি ছোট শহরের আকার ধারণ করে। যেখানে সুপারমার্কেট এবং ডেইরি কুইন ও বার্গার কিং-এর মতো দোকানও ছিল। বারাক ওবামা (২০১২) এবং ট্রাম্প (২০১৯) সহ বেশ কয়েকজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ঘাঁটি পরিদর্শন করেছিলেন।

বাগরাম বিমান ঘাঁটি দখলে নিতে ট্রাম্প কেন এত মরিয়া? - আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান সরকারের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ঘাঁটিটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এটি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলার পর আফগানিস্তানে একটি বিমান ঘাঁটি তৈরি করেছিল আমেরিকা। বাগরাম বিমান ঘাঁটিটি ২০০১ সাল থেকেই মার্কিন সেনারা ব্যবহার করত। ২০২১ সালের তালেবান সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হয় মার্কিন সেনা। এসময় কাবুলের দক্ষিণে অবস্থিত কৌশলগত বাগরাম ঘাঁটিও ছাড়তে হয় তাদের।

কয়েক বছর পার হওয়ার পর আবারও সেই বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের মার্চ থেকেই বাগরাম ঘাঁটি ফিরে পেতে তোড়জোড় শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

স্থানীয় সময় গত শনিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাগরাম বিমান ঘাঁটি যারা তৈরি করেছে, আফগানিস্তান যদি সেটি তাদের কাছে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।’ গত শনিবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয় ঘাঁটিটি পুনরুদ্ধারের জন্য মার্কিন সেনা পাঠাবেন কিনা? এ প্রশ্নের উত্তর তিনি সরাসরি দেননি। বলেন, ‘এটা নিয়ে এখন আমরা কথা বলব না।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এখন আমরা আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা ওই বিমান ঘাঁটি ফেরত চাই। খুব শিগগিরই ফেরত চাই। যদি ওরা সেটা না করে, যদি না করে, আমি কী করব সেটা আপনারা সকলে দেখতে পাবেন।

বিষয়টি নিয়ে জানাশোনা আছে, এমন তিনটি সূত্র জানিয়েছে, বাগরাম ফিরে পেতে নিজের প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্প আলাপ করছেন। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তারা জানান, অন্তত এক মাস ধরে ঘাঁটিটি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনে আলোচনা চলছে।

সূত্রগুলো সিএনএনকে জানায়, ট্রাম্প ও তার জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করেন যে বিভিন্ন কারণে ঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চীনের ওপর নজরদারি করা, আফগানিস্তানের বিরল খনিজ হাতে পাওয়া ও উত্তোলন করা, ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসবিরোধী শাখা খোলা এবং কূটনৈতিক সুবিধা আবার চালু করা।

এদিকে বাগরাম বিমান ঘাঁটি নিয়ে চুক্তি সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়েছেন একজন আফগান তালেবান সরকারি কর্মকর্তা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগের মার্কিন ঘাঁটিটি ফেরত চাওয়ার কথা বলার পর গত রোববার এ কথা জানান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অফ স্টাফ ফাসিহউদ্দিন ফিতরত।

ফিতরত বলেন, কিছু লোক একটি রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে ঘাঁটিটি পুনরুদ্ধার করতে চায়। আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটির ওপরও চুক্তি সম্ভব নয়। আমাদের এর প্রয়োজন নেই।