জুলাই আন্দোলন দমাতে ৩ লাখের বেশি রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলন দমাতে দেশজুড়ে ৩ লাখ ৫ হাজারের বেশি রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৯০ হাজারের বেশি রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলায় ট্রাইব্যুনালকে এ তথ্য জানিয়েছে প্রসিকিউশন। গতকাল সোমবার এ মামলায় দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। তিনি এ মামলায় ৫৪তম ও শেষ সাক্ষী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম ও সর্বশেষ সাক্ষী হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান আলমগীর। তিনি ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জবানবন্দি দেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আলমগীর গত রোববার প্রথম দিনের জবানবন্দি দেন। সোমবার দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দি চলে এবং তা অসমাপ্ত রেখে শুনানি মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাযজ্ঞের নৃশংসতার ভিডিও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরা হয়। এই ভিডিও সরাসরি সম্প্রচারের পাশাপাশি তদন্তকারী কর্মকর্তা জবানবন্দিও সাক্ষ্যও সরাসরি সম্পচার করা হয়। প্রসিকিউশনের দাবি, কোন ধরনের উস্কানি ও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকারিদের উপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে, জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৮ অভিযোগে জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ১৪ অক্টোবর। সকালে কুষ্টিয়ায় ৭ জন হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে এই দিন ধার্য্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২।এছাড়া, রংপুরের বেরোবির শিক্ষার্থী আবু সাঈদ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে ট্রাইব্যুনাল-২ এ।

ট্রাইব্যুনালে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তার তদন্তকালে তিনি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জুলাই আন্দোলন দমনে ছাত্রজনতার ওপর ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি সংক্রান্ত ২২৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পান। এতে দেখা যায়, এলএনজি, চাইনিজ রাইফেল, শর্টগান, রিভলবার, পিস্তলসহ বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহার করে শুধু ঢাকা শহরে ৯৫ হাজার ৩১৩ রাউন্ড ও সারাদেশে ৩ লাখ ৫ হাজার ১১ রাউন্ড গুলি ব্যবহার করা হয়।

আলমগীর বলেন, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা ও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও তিনি পেয়েছেন। এছাড়া র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে হেলিকপ্টার ব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিবেদন পান গত ১৪ জানুয়ারি। ৮১টি অজ্ঞাতপরিচয় লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নেন ৭ মে।

তদন্ত কর্মকর্তা জবানবন্দিতে বলেন, পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন গত বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে আন্দোলন দমনে শান্তিপূর্ণ ছাত্রজনতার ওপরে ব্যাপক মাত্রায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন।