অবরোধে স্থবির খাগড়াছড়ি
* বর্তমানে পাহাড়ের অবস্থা শান্ত : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা * সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ: সেনা কর্মকর্তা * নিহতদের লাশ হস্তান্তর, ১৪৪ ধারা বহাল * ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন, অবরোধ তুললেই ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

খাগড়াছড়িতে দুই গ্রুপের সৃষ্ট উত্তেজনা ও সহিংসতার পর জেলাসদর ও গুইমারা জুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে ডাকা অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ গতকাল মঙ্গলবার চতুর্থ দিনের মতো চলমান রয়েছে। এদিকে নিহত তিনজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে খাগড়াছড়ির গুইমারায় সহিংসতা নিয়ে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে পাহাড়ের অবস্থা শান্ত। সেখানে এখন মোটামুটি কোনো সমস্যা নেই। এই জিনিসটা করা হয়েছিল যাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ভালোভাবে পূজা উদ্যাপন করতে না পারেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, পূজা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে করতে হয়। তারা যাতে ভালোভাবে এটা উদ্?যাপন করতে না পারেন, এটা ছিল কিছু কিছু লোকের উদ্দেশ্য। সেটিই তারা করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি।
খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি নিয়ে সেনা কর্মকর্তার ব্রিফিং : খাগড়াছড়ির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সকালে ব্রিফিংকালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ খাগড়াছড়ি এবং গুইমারায় সংঘটিত সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার জন্য আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ধর্ষণ ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে সংগঠনটি। এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশীয় ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করে ফায়ারিং করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
হাসান মাহমুদ বলেন, সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও অবিচ্ছেদ্য অংশ রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে। তিনি ইউপিডিএফকে দেশের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি অবরোধ প্রত্যাহার করতে আহ্বান জানান। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরও বলেন, অবরোধ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। পাহাড়ে শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে ইউপিডিএফকে সতর্ক করেন রিজিয়ন কমান্ডার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি পুনরায় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী বলেন, নিহত তিনজনের লাশ সোমবার রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মধ্য রাতেই লাশ সৎকার করেছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, অবস্থা স্বাভাবিক হলে নির্দেশনা তুলে নেওয়া হবে।
সহিংসতার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন, অবরোধ তুললেই ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার : গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল খন্দকার বলেছেন, খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা অবরোধ তুলে নিলেই ১৪৪ ধারাও প্রত্যাহার করা হবে। একই সঙ্গে জেলার গুইমারার রামেসু বাজারে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘খাগড়াছড়ির চলমান পরিস্থিতি আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করতে চাই। অবরোধ আহ্বানকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। জুম্ম ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে যে ৮টি দাবি দিয়েছে তার মধ্যে সাতটি অ্যাড্রেস করা হয়েছে। সহিংসতার ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, পাহাড়ি এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা সড়ক অবরোধ চলাকালে গত রোববার রণক্ষেত্র হয়ে উঠে গুইমারার রামেসু বাজার। বাজার এলাকার প্রায় অর্ধশত বসতবাড়ি ও ৪০টির মতো দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় নিহত হন ৩ জন। তারা সবাই পাহাড়ি। আহত হন সেনাবাহিনীর মেজরসহ অন্তত ২০ জন। ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে ত্রাণ তুলে দেন জেলা প্রশাসক। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার কাজ করেছে বলেও জানান তিনি। জেলা প্রশাসক বলেন, আহত ব্যক্তিদের যাতে সুচিকিৎসা নিশ্চিত হয় তার জন্য প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পাশে থাকবে প্রশাসন। এই ক্ষতি অপূরণীয় হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা করা হবে।
