শাটডাউনে মার্কিন সরকার

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

সরকারি ব্যয় সংক্রান্ত বিল পাসে আইনপ্রণেতাদের শেষ মুহূর্তের চেষ্টাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পর আংশিক ‘শাটডাউনে’ চলে গেল মার্কিন সরকার। মার্কিন সেনেটে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা একে অপরের অন্তর্বর্তীকালীন (স্টপগ্যাপ) প্রস্তাবগুলো খারিজ করে দেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের সব সংস্থা ও কার্যক্রম সচল রাখতে অর্থায়নের মেয়াদ গতকাল বুধবার মার্কিন পূর্বাঞ্চলীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিটে শেষ হয়ে যায়।

১৯৮০ সালের পর থেকে ডজনেরও বেশি বার মার্কিন সরকারের কার্যক্রম এরকম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু এবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অর্থায়ন বিরতিকে কাজে লাগিয়ে সরকারি খাতের আকার নাটকীয়ভাবে ছোট করার যে হুমকি দিয়ে রেখেছেন তা আগের শাটডাউনগুলোর তুলনায় বড় ধরনের অচলাবস্থার আশঙ্কা তৈরি করছে, বলছে আল জাজিরা। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, শাটডাউনকে কাজে লাগিয়ে তিনি এমন সব পদক্ষেপ নিতে পারেন যা ডেমোক্রেটদের জন্য ‘খারাপ হবে’।

‘শাটডাউনের সময় আমরা এমন কিছু করতে পারি, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর এবং তারা আর ফিরিয়ে আনতেও পারবে না—যেমন বিপুল সংখ্যক মানুষকে ছাঁটাই করা, তাদের পছন্দের বিষয়গুলো ছেঁটে দেওয়া, তাদের পছন্দের কর্মসূচিগুলো কাটছাঁট করা, সরকারের ‘শাটডাউন’ থেকে ‘অনেক ভালো কিছু হতে পারে’ মন্তব্য করে এসবই বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম ‘শাটডাউনে’ গেল মার্কিন সরকার। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণ অনুমোদনসহ ‘অতি জরুরি নয়’ এমন সব সরকারি সেবা বন্ধ থাকবে।

আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনীর সদস্য, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের চাকরি থাকবে, কিন্তু শাটডাউনের এই সময়ে তাদের বেতন বকেয়া থাকবে। তবে শাটডাউন চলাকালেও সামাজিক নিরাপত্তা ও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

আগের শাটডাউনগুলোর সময় লাখো ফেডারেল কর্মী সাময়িক ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন এবং পরে কাজে ফিরে আসার পর তাদের বকেয়া বেতন দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু ট্রাম্প বর্তমান অর্থায়নের বিরতিকে কাজে লাগিয়ে ‘অনেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত’ করার হুমকি দিয়ে রেখেছেন।

এর আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা সরকার সচল রাখার লক্ষ্যে নিজ নিজ পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিপক্ষ দলের আইনপ্রণেতাদের মন জয়ের চেষ্টা করে গেছেন।

গত মাসের শুরুর দিকে ডেমোক্র্যাটরা আরও ৯ সপ্তাহ সরকারি সংস্থা ও কার্যক্রম সচল রাখতে রিপাবলিকানদের আনা একটি খসড়া ‘স্টপগ্যাপ’ বিল প্রত্যাখ্যান করেছিল।

খসড়া ওই বিলে স্বাস্থ্যসেবার আওতা বাড়ানোর মতো অনেক কিছুই চেয়েছিল তারা। তাদের লক্ষ্য ছিল ট্রাম্প তার ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিলে’ মেডিকেইড কর্মসূচি যেভাবে কাটছাঁট করা হয়েছিল তা উল্টে দেওয়া। কিন্তু রিপাবলিকানরা তাতে রাজি হয়নি।

শাটডাউন এড়াতে সেনেটের রিপাবলিকানরা একেবারে শেষ মুহূর্তে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বিল নিয়ে হাজির হয়, যা পাস হলে সরকারি অর্থায়নের মেয়াদ ২১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়তো। দুই ডেমোক্র্যাট ও এক স্বতন্ত্র সেনেটরের সমর্থনসহ তাদের প্রস্তাবটি ৫৫-৪৫ ভোটে জয়ী হলেও বিল পাসের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়।

এর পাল্টায় ডেমোক্র্যাটরা অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত অর্থায়নের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবায় এক ট্রিলিয়নের বেশি খরচ বাড়িয়ে আরেকটি বিল আনে। সেটি ৪৭-৫৩ ভোটে খারিজ হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তের এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর অচলাবস্থার জন্য ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা একে অপরকে দায় দিচ্ছেন।

‘রিপাবলিকানরা তাদের স্বাস্থ্যসেবা সংকটের সমাধানের বদলে আমাদের শাটডাউনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে,’ এলছেন সেনেটের সংখ্যালঘু অংশের নেতা ডেমোক্র্যাট চাক শুমার।

তবে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষের সংখ্যাগুরু অংশের নেতা জন থুন বলছেন, এই অচলবাস্থা শিগগিরই কেটে যাবে এবং বুধবারই আরেকটি বিলে ডেমোক্র্যাটদের বড় একটি অংশ দলীয় লাইন টপকে রিপাবলিকানদের ভোট দেবে।

‘এসব অপ্রয়োজনীয়। এগুলো তারা করছে তাদের বাম রাজনৈতিক ঘাঁটিকে সন্তুষ্ট রাখতে,’ ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন তিনি।

এ নিয়ে ১৯৮০ সালের পর মার্কিন সরকার পনেরোতম বার ‘শাটডাউনে’ গেল বলে জানিয়েছে বাইপার্টিজান পলিসি সেন্টার।

এরমধ্যে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে দীর্ঘসময় ‘শাটডাউন’ দেখেছে। ৩৫ দিনের সেই অচলাবস্থা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে, শেষ হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে।