জলজটে নাকাল ঢাকাবাসী চারদিন ভারি বৃষ্টির আভাস
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে টানা ছয়ঘণ্টা বৃষ্টিতে ডুবেছে পথঘাট। বুধবার নিউ মার্কেট এলাকা, গ্রিন রোড, আজিমপুর, আরামবাগ, মালিবাগ, মৌচাক মার্কেট এলাকাসহ অনেক জায়গায় সড়কে পানি জমে। এই জলাবদ্ধতার জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পথে বের হওয়া মানুষদের। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাষ্য, রাতভর বৃষ্টিতে ঢাকার প্রায় সব এলাকায় পানি জমলেও, বেলা ১২টা নাগাদ ‘আশি ভাগ’ এলাকা থেকে পানি নেমে যায়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভারি বর্ষণ চলতে পারে আগামী চারদিন। এতে শহরের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা বাড়ার আশঙ্কা জানিয়ে এই সমস্যা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ঢাকায় বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ২০৩ মিলিমিটিার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এরমধ্যে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল সকাল থেকেও রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। বেলা বাড়লে কিছুটা রোদের দেখা মিলেছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবের বৃষ্টির প্রভাব শুরু হবে। ৪ তারিখ পর্যন্ত চলবে। বৃষ্টি বাড়বে, ঢাকায় ভারি বর্ষণের সতর্কতা দিচ্ছি। জলাবদ্ধতার সতর্কতা জানিয়ে দিচ্ছি, কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, জলাবদ্ধতা দূর করতে তারা ‘প্রস্তুত আছেন’।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় ডিআইটি রোডের আবুল হোটেলের সামনের সড়কে এবং পৌনে ১০টায় মালিবাগের মৌচাক মার্কেটের সামনের সড়কে পানি জমে ছিল। সকাল ১০টা পর্যন্ত ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় রাপা প্লাজার সামনে এবং গ্রিন রোডের রাস্তার অনেকাংশ তলিয়ে যায় পানিতে। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় আরামবাগের নটরডেম কলেজের সামনের এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। ওই সময় পর্যন্ত পানি ছিল নিউ মার্কেট এবং বকশিবাজারে শিক্ষা বোর্ডের সামনের সড়কেও। সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগের সামনের সড়কে পানি জমে থাকায়, হাসাপাতালে যাওয়া আসায় সমস্যা পড়েন অনেকে। সকালে পানি ছিল মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এলাকার সড়কেও। নিউ মার্কেট এলাকায় ছিল হাঁটু সমান পানি। পানিতে কেউ হেঁটে, কেউ ভ্যান বা রিকশায় চড়ে রাস্তা পার হয়েছেন। পানি জমে বিভিন্ন দোকানের ভেতরেও। নিউ মার্কেটের একটি দোকানের কর্মী জুয়েল রানা বলেন, ‘এইটা তো সারা বছরের দুর্ভোগ, রাস্তা নিচু এই কারণে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়।’ নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী রোমান মিয়া বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। দোকানদাররা জানে বৃষ্টি হলে দোকানের কোন পর্যন্ত পানি উঠতে পারে। সেই হিসাব করে মালমালা উঁচুতে রাখে। তারপরও অনেক সময় পানিতে মালপত্র নষ্ট হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার বলেন, গতকাল রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার প্রায় সব এলাকায় পানি জমেছিল। বেলা ১২টা পর্যন্ত আশিভাগ এলাকার পানি নেমে গেছে। তিনি বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বিষয়টি জেনেছি। জলাবদ্ধতা দূর করতে আমরা কাজ করছি, প্রস্তুত আছি।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে খাল, ড্রেন পরিষ্কারের একটা বড় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ সড়কে এখন আগের মত পানি জমে না। তিনি বলেন, আমরা ধারণা ছিল খালগুলো পরিষ্কার করলে, ড্রেনগুলো পরিষ্কার করলে জলাবদ্ধতা হবে না। এ কারণে ড্রেন-খাল পরিষ্কার করেছি। এর ফল পাওয়া শুরু করেছি। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে সব সময় জলাবদ্ধতা হত, এবার হয়নি।
তিনি বলেন, বিমানবন্দর এলাকায় অনেকগুলো উন্নয়ন কাজ চলার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেখানে কিছু জলাধার ছিল সেগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি যেতে পারে না। কমডোর এ বি এম সামসুল আলম বলেন, আগামী চার দিন ঢাকায় ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় পানি সরাতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের কুইক রেসপন্স টিমের লোক আছে। আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীরা আছেন। পাশাপাশি আমাদের প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরাও সহায়তা করবেন। তবে জলাবদ্ধতা দীর্ঘমেয়াদে দূর করতে হলে অবশ্যই লোকজনকে সচেতন হতে হবে। তা যেখানে সেখানে ময়লা ফেললে সেগুলো ড্রেনে যায়, খালে যায়। পানি যেতে দেরি হয়।
রোববার পর্যন্ত দেশে ভারি বৃষ্টির আভাস: আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ওপর একটি শক্তিশালী মৌসুমি বৃষ্টিবলয়ের প্রভাব থাকতে পারে। এর ফলে দেশের ৮০ শতাংশ এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)।
এটি চলতি বছরের ১৩তম এবং মৌসুমি বৃষ্টি বলয়গুলোর মধ্যে নবম। এবারের এই বৃষ্টিবলয় দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা জুড়ে সক্রিয় থাকবে এবং বেশকিছু অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে এবং দক্ষিণ অঞ্চলে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বিডব্লিউওটি জানায়, এই বৃষ্টিবলয়টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় প্রভাব ফেলবে। সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকবে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে এর প্রভাব বেশ সক্রিয় থাকবে। অন্যদিকে, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে এর প্রভাব মাঝারি থাকতে পারে। এই সময়ে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীরবর্তী নিচু এলাকা সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। এ ছাড়া, অনেক স্থানে জলাবদ্ধতাও তৈরি হতে পারে। সংস্থাটি আরও জানায়, বৃষ্টিবলয় ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে দেশের পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশ করে ৬ অক্টোবর রংপুর বিভাগ দিয়ে দেশ ত্যাগ করতে পারে। এই সময়ে একটানা ও দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় এর প্রভাব বেশি। এই ৬ দিনের বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ হতে পারে রংপুরে ২৮০-৩৮৫ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ১৭৫-২৫০, খুলনায় ১৬০-২১০, ময়মনসিংহে ১৪০-২০০, বরিশালে ১৫০-১৭০, ঢাকায় ১২০-১৭০, সিলেটে ৮০-১৩০, চট্টগ্রামে ৮০-২০০ মিলিমিটার।
ওয়েদার অবজারভেশন টিম জানায়, এই বৃষ্টিবলয় চলাকালে দেশের প্রায় ৬০-৭০% এলাকায় সেচের চাহিদা পূরণ হতে পারে। আবহাওয়া আরামদায়ক থাকবে এবং টানা বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। এ ছাড়া এবারের বৃষ্টিবলয়ের প্রথম দিকে তীব্র বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকলেও পরে তা হালকা থেকে মাঝারি হয়ে আসতে পারে। বাড়তি সতর্কতার বিষয়ে বিডব্লিউওটি জানায়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাই এসব এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই সময় সাগর বেশ উত্তাল থাকতে পারে। তাই সব ধরনের নৌ-যানকে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে।
