গাজার পথে আরও ১১ জাহাজ
* ইসরায়েলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন ফ্লোটিলার অভিযাত্রীরা * গাজা অভিমুখী নৌবহরের সর্বশেষ জাহাজেরও নিয়ন্ত্রণ নিল ইসরায়েল * গাজায় নৌবহর আটকের প্রতিবাদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ * ইসরায়েলের ফুটবল নিষিদ্ধ করতে উয়েফাকে চিঠি, বার্সেলোনায় বিক্ষোভ
প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখে নতুন করে আরও ১১টি জাহাজ যাত্রা করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) জানিয়েছে, এসব নৌকায় প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী আছেন। ১৫ বছরের সমুদ্র অভিযানের অভিজ্ঞতা আছে এফএফসির। এর আগে এফএফসি মাদলিন ও হান্দালা ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছিল। এবার অবরোধ ভাঙতে এফএফসি ব্যবহারিক পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও প্রক্রিয়াগত সহায়তা দিচ্ছে। এক বিবৃতিতে এফএফসি জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজ আরও ৮টি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে ইতালি ও ফ্রান্সের পতাকাবাহী নৌবহর ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ যোগ দিয়েছ। এই বহরে রয়েছে দুটি নৌকা। একসঙ্গে এ দুটি দল ১১টি জাহাজের বহর নিয়ে গাজা অভিমুখে ছুটে চলছে।
বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এই বহরে থাকা ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজটিতে আছেন। এসব নৌযানের লাইভ ট্র্যাকিং এই লিংকে দেখা যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেছেন, তাঁদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ। তাঁদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা আছে। আজ তাঁরা ফিলিস্তিনি টাইম জোনে পৌঁছেছেন। তবে এখনো দূরত্ব আছে।
কোয়ালিশনের তথ্য অনুযায়ী, নৌযানগুলো বর্তমানে ক্রিট দ্বীপের (পূর্ব ভূমধ্যসাগর) উপকূলে অবস্থান করছে এবং এতে প্রায় ১০০ যাত্রী আছেন। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ও সেখানে চলমান অবরোধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার মিশন চালিয়েছে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজটিতে ২৫টি দেশের সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন। এফএফসির সর্বশেষ এই মিশন গত বুধবার যাত্রা শুরু করে। ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসকবাহী এই জাহাজ।
প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েল বিদেশি সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। এ সময়ে ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, অনেকে আটক ও কারাগারে বন্দী আছেন।
একই সঙ্গে ধারাবাহিক অবরোধ ও বোমাবর্ষণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনি চিকিৎসকদের অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ উঠেছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসক দলগুলোকেও গাজায় প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। যাঁরা অনুমতি পান, তাঁদেরও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ বা সরঞ্জাম আনার অনুমতি দেওয়া হয় না।
জাহাজে থাকা এফএফসির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হুয়াইদা আরাফ বলেন, ‘কনসায়েন্স’ শুধু ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিরোধের প্রতীক নয়, বরং বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার ডাক।’
ইতালির চিকিৎসক রিকার্ডো কোররাদিনি বলেন, ‘সাংবাদিক ও চিকিৎসক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সত্য বলা ও জীবন রক্ষা করা। এই মিশন আমাদের সহকর্মীদের প্রতি এক আহ্বান—আর সেই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও, যাতে তারা নীরবতা ভাঙে, নীতিনৈতিকতা বজায় রাখে এবং ইতিহাসের পাশে দাঁড়ায়।’
এদিকে ত্রাণ নিয়ে গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের সবশেষ জাহাজটিও আজ শুক্রবার আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপকূলে আসলে ম্যারিনেট নামের জাহাজটির দখল নেন ইসরায়েলি সৈন্যরা। এর আগে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের অন্য সব জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। এসব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করা হয়। এর আগেও ইসরায়েল গাজাগামী নৌযানে হামলা চালিয়েছে, জাহাজের মালামাল বাজেয়াপ্ত করেছে এবং অধিকারকর্মীদের বহিষ্কার করেছে।
ইসরায়েল প্রায় ১৮ বছর ধরে গাজায় অবরোধ চালিয়ে আসছে। প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বাস এই উপত্যকায়। চলতি বছরের মার্চে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে অবরোধ আরও কড়াকড়ি করা হয়। এতে ভূখণ্ডটি চরম খাদ্যসংকটে পড়ে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার সতর্ক করছে, এই অবরুদ্ধ অঞ্চলে অনাহার ও রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, আর গাজা ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত ৬৬ হাজার ২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের অভিযানে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন ছাড়াও আরও তিনটি জোট অংশ নিয়েছে। তারা আগে গাজায় স্থল ও সমুদ্রপথে একই প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিল। এই জোটগুলো হলো- গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা (জিএমটিজি): এটি আগে গ্লোবাল মার্চ টু গাজা নামে পরিচিত ছিল। এটি একটি তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন। এরা গাজার প্রতি বিশ্ব সংহতির কর্মসূচি আয়োজন করে এবং অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করে। মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা: এটি আগে ‘সুমুদ কনভয়’ নামে পরিচিত ছিল। এটি উত্তর আফ্রিকাভিত্তিক একটি উদ্যোগ, যা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছে দিতে সংহতির মিশন পরিচালনা করে। সুমুদ নুসান্তারা: এটি মালয়েশিয়াসহ আরও আটটি দেশের জনগণের নেতৃত্বাধীন বহর, যা গাজার অবরোধ ভাঙতে এবং গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোর মধ্যে সংহতি জোরদার করতে চায়।
ইসরায়েলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন ফ্লোটিলার অভিযাত্রীরা : ইসরায়েলে আটক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার অভিযাত্রীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) কমিটি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের নৌবাহিনী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনের নৌযানগুলো এবং ক্রু ও অভিযাত্রীদের আটকের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন মিশনের অভিযাত্রীরা।’
ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে গাজার উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ মিশনের অন্তর্ভুক্ত ৪৩টি নৌযান। সুইডেনের নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ও রাজনীতিবিদ মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক ছিলেন সেই মিশনে। এই নাগরিকদের কেউ পার্লামেন্টারিয়ান, কেউ আইনজীবী, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী এবং কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী। কিন্তু গাজার জলসীমায় কাছাকাছি যাওয়ারি পরপরই একটি ব্যতীত সবগুলো নৌযান আটক করে ইসরায়েলের নৌবাহিনী। নৌযান, ক্রু এবং আরোহীদের নিয়ে যাওয়া হয় ইসরায়েলের বন্দরে। গত বুধবার রাতে প্রথমে ১৩টি নৌযান আটকায় ইসরায়েলের নৌবাহিনী; কিন্তু তারপরও বাকি ৩০টি নৌযান গাজার উদ্দেশে এগিয়ে যাচ্ছিল। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একে একে ২৯টি নৌযান আটক করে ইসরায়েলের নৌ সেনারা। সর্বশেষ নৌযানটিকে আটক করা হয়েছে আজ শুক্রবার সকালে। এফএফসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার যেদিন অভিযাত্রীদের আটক করা শুরু হয়, সেদিনই অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।
গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলা নৌবহরের সবশেষ জাহাজেরও নিয়ন্ত্রণ নিল ইসরায়েল : ত্রাণ নিয়ে গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের সবশেষ জাহাজটিও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপকূলে আসলে ম্যারিনেট নামের জাহাজটির দখল নেয় ইসরায়েলি সৈন্যরা। এর আগে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের অন্য সব জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি বাহিনী। লাইভস্ট্রিম ভিডিওতে দেখা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্যরা জোর করে জাহাজটিতে উঠে পড়েন। পোল্যান্ডের পতাকাবাহী ম্যারিনেট জাহাজটিতে ছয়জন ক্রু আছেন বলে জানা গেছে। এর আগে ম্যারিনেট বাদে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের অন্য সব জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েল। ম্যারিনেট জাহাজটিই শুধু চলছিল। এবার সেটিরও দখল নেওয়া হলো।
গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের
গাজা থেকে ১২৯ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরে থাকা অবস্থায় গতকাল রাতে ফ্লোটিলায় প্রথমবারের মতো সরাসরি বাধা দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ।
এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। বহরে প্রায় ৪৪টি নৌযানে ৫০০ মানুষ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের নাগরিকসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক রয়েছেন।
গাজায় নৌবহর আটকের প্রতিবাদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ : গাজায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণ বহনকারী একটি নৌবহর ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হাতে আটকের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তীব্র তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানায়। ইউরোপ থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত, বিক্ষোভকারীরা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতি অসদাচরণের নিন্দা জানাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের পর গাজায় এখন দুর্ভিক্ষ চলছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ইসরায়েলি একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজনীতিবিদ এবং জলবায়ু প্রচারক গ্রেটা থানবার্গসহ চার শতাধিক মানুষ বহনকারী ৪১টি জাহাজকে বুধবার থেকে ইসরায়েলি নৌবাহিনী থামিয়ে দিয়েছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পৌঁছাতে বাধা দিয়েছে।
স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্সেলোনার পৌর পুলিশ বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বার্সেলোনায় প্রতিবাদণ্ডবিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
স্প্যানিশ সরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের একটি অংশকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে পিছু হটতে বাধ্য করেছে।
বার্সেলোনার সাবেক মেয়র আদা কোলাউকে বহনকারী একটি নৌকাও এগিয়ে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ তার সহকর্মীদের ইসরায়েল কর্তৃক নির্বাসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ডাবলিনে আইরিশ পার্লামেন্টের বাইরেও কয়েকশ বিক্ষোভকারী মিছিল করে। সেখানে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকে প্রায়শই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আয়ারল্যান্ডের শতাব্দীব্যাপী সংগ্রামের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
মরিয়ম ম্যাকনালি নামে এক নারী বলেছেন, তিনি ডাবলিনের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তার মেয়ে নৌবহরের সাথে যাত্রা করেছে।
ম্যাকনালি এএফপিকে বলেছেন, আমি আমার মেয়ের জন্য উদ্বিগ্ন, কিন্তুসে যা করছে তা নিয়ে খুব গর্বিত। তিনি বলেছেন, মারাত্মক বিপদের মুখেও সে মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
এএফপির একজন সাংবাদিক দেখেছেন, প্যারিসের প্লেস দে লা রিপাবলিক-এ প্রায় এক হাজার মানুষ মিছিল করেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ ফ্রান্সের বন্দর শহর মার্সেইতে ইসরায়েলের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির অভিযোগে অস্ত্র প্রস্তুতকারক ইউরোলিংকসের অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশের সময় বিক্ষোভকারীরা আটকানোর চেষ্টা করলে বিকেলে প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এএফপি সংবাদদাতাদের জানিয়েছেন, বার্লিন, দ্য হেগ, তিউনিস, ব্রাসিলিয়া এবং বুয়েনস আয়ারসেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে ইতালিতে দেশের প্রধান ইউনিয়নগুলো ফ্লোটিলার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিকে কর্মীদের রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রোম ছাড়াও মিলান, টোরিনো, ফ্লোরেন্স এবং বোলোগনাসহ অন্যান্য শহরেও ১০ হাজার মানুষ একটি বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় একই রকম বিক্ষোভের একদিন পর রাজধানীর বিক্ষোভকারীরা কলোসিয়ামে জড়ো হয়ে মিছিল করে ইসরায়েলের প্রতি অতি-ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা জানায়।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়েছে, ‘আমরা সবকিছু অবরুদ্ধ করতে প্রস্তুত। গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
তুরস্কের সরকার ইসরায়েলের আক্রমণের তীব্র সমালোচকদের মধ্যে অন্যতম। বিক্ষোভকারীদের একটি দীর্ঘ দল ‘দখলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা’সহ ব্যানার নিয়ে ইস্তাম্বুলে ইসরায়েলি দূতাবাসের দিকে মিছিল করে।
২১ বছর বয়সী ছাত্রী এলিফ বোজকুর্ট এএফপিটিভিকে বলেছেন, ‘আমরা সুমুদ নৌবহরের সকল সদস্য এবং সকল বন্দীর মুক্তি দাবি করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে আমরা দাবি করছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণহত্যাকারী ইসরায়েলি রাষ্ট্রের সঙ্গে সকল শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করা হোক।’
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় সংসদ ভবনের সামনেও প্রায় ৩ হাজার বিক্ষোভকারী বিক্ষোভে অংশ নেয়। সেখানে একটি ব্যানারে ইইউকে ‘অবরোধ ভাঙার’ আহ্বান জানানো হয়। এ সময় ভিড়ের মধ্যে ধোঁয়াটে বোমা এবং পটকা ফাটানো হয়েছিল।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আইসিস নামে একজন বিক্ষোভকারী এএফপিটিভিকে বলেছেন, বার্তাটি হলো প্রতিটি নৌকাকে রক্ষা করতে হবে, প্রতিটি নৌকাকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সঙ্গে ব্লকের চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলে পাঠানো জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত অর্থ বন্ধ করার আহ্বান জানান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন এএফপি সাংবাদিক এবং সুইস সম্প্রচারকদের মতে, জেনেভায় একই আকারের জনতা সমাবেশ করেছিল। বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারী কেন্দ্রীয় স্টেশনের কাছে আগুন জ্বালিয়েছিল।
এরপর বিক্ষোভকারীরা সুইস শহরের মন্ট ব্লাঙ্ক ব্রিজের দিকে রওনা দিয়ে লেক জেনেভার শেষ প্রান্তের দিকে অগ্রসর হলে সেখানে দাঙ্গা পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে দাঙ্গা পুলিশ লাঠিচার্জ করে পিছু হটিয়ে দেয়।
গ্রিক রাজধানী এথেন্সে বিক্ষোভকারীদের একটি দল আতশবাজি এবং অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
গ্রীসের ওয়ার্ল্ড অ্যাগেইনস্ট রেসিজম অ্যান্ড ফ্যাসিজম গ্রুপের সমন্বয়কারী পেট্রোস কনস্টান্টিনো এএফপিটিভিকে বলেছেন, সুমুদের নৌবহরের ওপর আক্রমণ, এটি ইসরায়েলি বর্ণবাদ রাষ্ট্রের বর্বরতার বহিঃপ্রকাশ। তারা গাজায় মানবিক সাহায্যের জন্য একটি পথও খুলতে চায় না।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনেও কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী সমাবেশ ও মিছিল করেছে।
ইসরায়েলের ফুটবল নিষিদ্ধ করতে উয়েফাকে চিঠি, বার্সেলোনায় বিক্ষোভ : গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলার প্রতিবাদে স্পেনের বার্সেলোনা শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে।আয়োজকেরা বলছেন, ফ্লোটিলার নৌবহরে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এবং শত শত অধিকারকর্মীকে আটক করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন তাঁরা। এদিকে ইসরায়েল ও তাদের ক্লাবগুলোকে সব প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধ করতে ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফাকে আহ্বান জানিয়েছেন ৩০ জনের বেশি আইনবিশেষজ্ঞ। গাজায় ইসরায়েলের চালানো নৃশংসতার প্রতিবাদে এমন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উয়েফার সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন বরাবর একটি চিঠি লিখেছেন ওই আইনবিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের তদন্তকারীদের তৈরি করা সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে চিঠিতে বলা হয়, ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করা এখন ‘অপরিহার্য।’ জাতিসংঘের তদন্তকারীদের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে, তা ইতিমধ্যেই নিশ্চিত।
গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের
চিঠিতে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও এর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, তাদের আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা করতে হবে এবং অবিলম্বে ইসরায়েলি ফুটবলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে।
বিশ্বের ফুটবল থেকে ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি কয়েক মাস ধরে জোরালো হয়েছে। গ্লাসগো, প্যারিস, রোম ও বিলবাওসহ বিভিন্ন শহরের ফুটবল–ভক্তরা ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে গাজার প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন।
চিঠিতে গাজার ক্রীড়াঙ্গনের ওপর ইসরায়েলের ভয়াবহ প্রভাবের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে অন্তত ৪২১ জন ফিলিস্তিনি ফুটবলার নিহত হয়েছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলা গাজার ফুটবল অবকাঠামোকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একটি গোটা প্রজন্মের ক্রীড়াবিদদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনি খেলাধুলার মূল ভিত্তিকে নষ্ট করছে।
এ আইনবিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, ইসরায়েলি ফুটবল সংস্থা (আইএফএ) এই লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে এটিকেও গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত বলে ধরা হচ্ছে। আর তা উয়েফা প্রতিযোগিতায় এ সংস্থার অংশগ্রহণকে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে আছেন লেমকিন ইনস্টিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশনের নির্বাহী পরিচালক এলিসা ভন জোডেন-ফোরজি, পাশাপাশি কয়েকজন সাবেক জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক আইনবিষয়ক গবেষক।
গত বৃহস্পতিবার উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন বরাবর একটি চিঠি লিখেছেন আইনবিশেষজ্ঞরা। জাতিসংঘের তদন্তকারীদের তৈরি করা সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে চিঠিতে বলা হয়, ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করা এখন ‘অপরিহার্য।’
ইসরায়েলের জাতীয় দল এখন ইউরোপীয় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলছে এবং দেশটির ফুটবল ক্লাবগুলো উয়েফার দেশীয় টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে।
বিশ্বের ফুটবল থেকে ইসরায়েলকে বিচ্ছিন্ন করার দাবি কয়েক মাস ধরে জোরালো হয়েছে। গ্লাসগো, প্যারিস, রোম ও বিলবাওসহ বিভিন্ন শহরের ফুটবল-ভক্তরা ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে গাজার প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন।
