হামাসের সাড়া, বন্ধ হচ্ছে যুদ্ধ

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে গাজা যুদ্ধ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ২০-দফা পরিকল্পনার প্রধান দফাগুলোতে হামাস সম্মতি জানানোর পর যুদ্ধ বন্ধের প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। এরপর গাজায় হামলা বন্ধে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রবল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে থাকা ইসরায়েল বলেছে, তারা ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রস্তুত। অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে। ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা এ অবস্থাকে যুদ্ধ থেকে সরে আসার সুবর্ণ সুযোগ বলে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে নেতানিয়াহুর নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় এ পদক্ষেপ বড় ধাক্কা খেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, আগ্রাসন এবং ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে তারা পরিকল্পনাটি ব্যাপকভাবে পড়েছেন এবং ফিলিস্তিনি দলগুলোর সঙ্গে গভীরভাবে পরামর্শ করেছেন। সংগঠনটি বলেছে, জাতীয় দায়িত্বের ভিত্তিতে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক নীতি, অধিকার ও সর্বোচ্চ স্বার্থ মাথায় রেখে এই প্রতিক্রিয়ায় উপনীত হয়েছেন তারা। হামাস বলেছে, যুদ্ধ বন্ধ এবং আগ্রাসী ইসরায়েলি বাহিনীর প্রত্যাহারের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যে তারা সব জীবিত ইসরায়েলি বন্দির মুক্তি এবং মৃত ইসরায়েলিদের লাশ ফেরত দিতে সম্মত। তবে সংগঠনটি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, এই মুক্তি তখনই ঘটবে যখন বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ার জন্য মাঠের পরিস্থিতি সুরক্ষিত করা হবে। সেই লক্ষ্যে হামাস মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। যুদ্ধ বন্ধ করা, গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশ নিশ্চিত করা, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি রোধ করা এবং উপত্যকা দখলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য বিবৃতিতে আরব, ইসলামিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়। এতে বলা হয়, তারা ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামিক সমর্থনের ভিত্তিতে গঠিত স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার হাতে গাজা ভূখণ্ডের প্রশাসন তুলে দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। হামাস জোর দিয়ে বলেছে, গাজার দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যৎ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত ট্রাম্পের প্রস্তাবের অন্য দিকগুলোর জন্য বৃহত্তর জাতীয় সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ প্রস্তাব অনুসরণ করে এ ধরনের বিষয়গুলোকে অবশ্যই একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি কাঠামোর মধ্যে আলোচনা করতে হবে। বিবৃতির উপসংহারে বলা হয়, ‘হামাস এই জাতীয় প্রক্রিয়ার অংশ হবে এবং এতে দায়িত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

এর আগে হামাস নেতা মুসা আবু মারজুক আলজাজিরাকে বলেন, হামাস নীতিগতভাবে পরিকল্পনার প্রধান বিষয়গুলোতে সম্মত হয়েছে, তবে এর বাস্তবায়নের জন্য আলোচনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আলোচনা ছাড়া এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তিনি প্রস্তাবে বারবার হামাসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘হামাস একটি জাতীয় মুক্তি আন্দোলন; প্রস্তাবের সঙ্গে এ ধরনের শব্দ ব্যবহার কোনোভাবে যায় না।’ হামাসের আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা ওসামা হামদান বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে হামাসকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা সফল হবে না।’ তিনি নিশ্চিত করেন, তারা গাজা ভূখণ্ডে বিদেশি প্রশাসনকে মেনে নেবেন না। ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়বস্তু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শাসনের জন্য একটি অস্থায়ী টেকনোক্র্যাট কমিটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ‘বোর্ড অব পিস’-এর ওপর দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ বোর্ডের প্রধান হবেন ট্রাম্প নিজে, সঙ্গে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সদস্য ও প্রধানরা। এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর হামাস স্পষ্ট করে দেয় যে ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের নিজস্ব বিষয়গুলি পরিচালনা করতে সক্ষম। হামদান একইভাবে জোর দিয়ে বলেন, গাজাকে ফিলিস্তিনি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করার বিষয়ে একটি ফিলিস্তিনি জাতীয় চুক্তি রয়েছে। তিনি গাজা উপত্যকায় বিদেশি বাহিনীর প্রবেশ প্রত্যাখ্যান করে এটিকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেন।

গাজায় বোমাহামলা বন্ধের নির্দেশ ট্রাম্পের : রয়টার্স জানিয়েছে, হামাস ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ সমাপ্তি পরিকল্পনার কিছু শর্ত মেনে নিতে রাজি হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প হামাসের প্রতিক্রিয়াকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, তার বিশ্বাস হামাস শান্তির জন্য প্রস্তুত এবং ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় বোমা নিক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট এক অভূতপূর্ব ভিডিও ভাষণ দিয়েছেন, যেখানে মূল বিষয়গুলো নিয়ে আরও আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি সেইসব দেশকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা আমাকে এটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে। এ পরিকল্পনায় কাতার, তুরস্ক, সৌদি আরব, মিসর, জর্ডান এবং আরও অনেকে সহায়তা করেছে। এর পেছনে বহু মানুষ কঠোর লড়াই করেছেন। এটি একটি বড় দিন। আমরা দেখব এর পরিণতি কী হয়। আমাদের কথাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।’ ট্রাম্প বলেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমি বন্দিদের তাদের বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় আছি। সুতরাং, আমি শুধু আপনাদের জানাতে চাই যে এটি একটি খুব বিশেষ দিন। হয়তো অনেক দিক থেকে অভূতপূর্ব। এটি সত্যিই অভূতপূর্ব।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই যুদ্ধ শেষ হোক এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসুক; সবাই এই বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ ছিল। এবং আমরা তা অর্জনের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ, এবং সবার সঙ্গে ন্যায্য ব্যবহার করা হবে।’

বিস্মিত নেতানিয়াহু : ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কিছু কথায়, বিশেষ করে হামাসের পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলায় এবং ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানানোর কারণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন। জানা গেছে, হামাস যা বলেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু একটি সমন্বিত, যৌথ ইসরায়েলি-আমেরিকান প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যাতে এটিকে মোটেও ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করা না হয়। আলজাজিরা বলেছে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের এ ধরনের সংবাদে একদিকে নেতানিয়াহুর ভঙ্গুর মানসিক অবস্থা, অন্যদিকে যুদ্ধ প্রলম্বিত করে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার মানসিকতা প্রকাশিত হয়েছে।

ট্রাম্পের মন্তব্যকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করেছে হামাস। সংগঠনের এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা বন্দি বিনিময়, যুদ্ধ অবসান ও গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। খবরে বলা হয়, হামাস বন্দিবিনিময়ে সম্মত হলেও নিরস্ত্রীকরণের মতো জটিল বিষয়গুলো এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ট্রাম্প সোমবার এই প্রস্তাব ঘোষণা করেছিলেন; গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পর্যায়ক্রমিক প্রত্যাহারই এই প্রস্তাবের লক্ষ্য বলে জানানো হয়। ওয়াশিংটনের অভূতপূর্ব সামরিক, গোয়েন্দা ও রাজনৈতিক সমর্থনে চলমান গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই পরিকল্পনা নিয়ে আসেন, যার ফলে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৬ হাজার ৩০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এই নৃশংস সামরিক হামলা বন্ধের লক্ষ্যে জাতিসংঘের যেকোনো পদক্ষেপে নিয়মিতভাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত বিশ্বনেতাদের : এদিকে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার মূল দফাগুলোতে হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। হামাসের জবাব এবং সব বন্দিকে মুক্তি দিতে তাদের প্রস্তুতিকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা গাজায় ইসরায়েলি হামলা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য ট্রাম্পের আহ্বানেও সমর্থন জানিয়েছেন। হামাসের প্রতিক্রিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য মার্কিন নেতার বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে মিসর। দেশটি আশা প্রকাশ করেছে, এ ইতিবাচক অগ্রগতি যুদ্ধ শেষ করার জন্য সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় স্তরে উন্নীত করবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান হামাসের সাড়াকে একটি স্থায়ী শান্তি অর্জনের দিকে গঠনমূলক এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ইসরায়েলকে অবিলম্বে তাদের সব ধরনের হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, হামাসের এই অঙ্গীকার অবিলম্বে অনুসরণ করা উচিত, এবং এর মাধ্যমে শান্তি অর্জনের দিকে অগ্রগতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ বলেছেন, এখন গাজায় শান্তি এবং বন্দিদের মুক্তি নাগালের মধ্যে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হামাসের বিবৃতিতে উৎসাহিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এবং সব পক্ষকে সংঘাতের অবসান ঘটাতে এ সুযোগ কাজে লাগানোর অনুরোধ করেছেন।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ইসরায়েলের : ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার প্রতি হামাসের সাড়ার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এখন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইসরায়েলের প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর অবিলম্বে সব বন্দির মুক্তির জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নে আমরা প্রস্তুত হচ্ছি।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রেসিডেন্ট এবং তার দলের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাব। এদিকে, ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ বলেছেন, ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার মূল উপাদানগুলোতে হামাস সম্মতি জানানোর পর বন্দিদের মুক্তি এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি সত্যিকারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। লাপিদ এক্স পোস্টে বলেছেন, চুক্তির বিশদ চূড়ান্ত করার জন্য ইসরায়েলের উচিত প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে চলমান আলোচনায় যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া। তিনি আরও বলেন, আমি মার্কিন প্রশাসনকে জানিয়েছি, এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতানিয়াহু অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন পাবেন।

গাজা দখল অভিযান বন্ধের নির্দেশ পেল ইসরায়েলি বাহিনী : এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতি দিয়েছে। ‘এক্স’-এ দেওয়া পোস্টে তারা জানিয়েছেন, চিফ অফ দ্য জেনারেল স্টাফ ইয়াল জামির শুক্রবার রাতে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ পরিস্থিতি মূল্যায়ন সভা করেছেন। সামরিক বাহিনী বলেছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশ অনুসারে, চিফ অফ দ্য জেনারেল স্টাফ বন্দিদের মুক্তির জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী পরিচালিত রেডিও নেটওয়ার্ক ‘আর্মি রেডিও’ জানিয়েছে, ইসরায়েলের সরকার সামরিক বাহিনীকে গাজা দখলের অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। আর্মি রেডিওর সামরিক সংবাদদাতা ডরোন কাদোশ বলেছেন, ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সামরিক বাহিনীকে তাদের কার্যক্রম ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে এবং গাজায় শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছে। তিনি ‘এক্স’ পোস্টে বলেন, এর বাস্তবিক প্রভাব হলো, গাজা সিটি দখলের অভিযান আপাতত আটকে দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের প্রতিক্রিয়াকে স্বাগত জানাল পাকিস্তান : ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের ইতিবাচক সাড়াকে ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, এখনই যুদ্ধবিরতি হতে হবে, ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে হবে এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে মানবিক সহায়তা প্রবাহে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়। ইসরাইলকে অবশ্যই তার হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

এর আগের দিনই দার জানান, গাজায় যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে ট্রাম্পের তৈরি ২০-দফা পরিকল্পনা গত মাসে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের পাশাপাশি আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রস্তাবিত খসড়ার সঙ্গে এক নয়। মার্কিন ও ইসরাইলি নেতাদের ঘোষিত নতুন প্রস্তাবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অনুরোধে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশোধিত প্রস্তাবে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহারকে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে এবং ইসরাইলকে একটি বাফার জোনে ধাপে ধাপে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না ‘সন্ত্রাসী হুমকি’ পুরোপুরি নির্মূল হয়।

ট্রাম্পের আহ্বানের পরও ইসরায়েলি হামলায় ২০ ফিলিস্তিনি নিহত : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে নেতানিয়াহু সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর পর ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজায় যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনায় হামাস আংশিকভাবে সম্মতি জানানোর পর ট্রাম্প ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেছিলেন। কিন্তু এরপরও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও হুমকি বন্ধ নেই। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের গাজা নগরীতে ফিরে না আসতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। তারা এই অঞ্চলটিকে একটি ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’ বলে অভিহিত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র লিখেছেন, ‘গাজা উপত্যকার সব বাসিন্দার জন্য জরুরি ঘোষণা ও সতর্কবার্তা। ওয়াদি গাজার উত্তরের এলাকাটি এখনও একটি বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র। এই এলাকায় থাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দক্ষিণে যেতে হলে আপনাদের জন্য রশিদ স্ট্রিট খোলা রয়েছে। মুখপাত্র হুমকি দিয়ে আরও লিখেছেন, ‘আপনাদের নিরাপত্তার জন্য, উত্তরে ফেরা থেকে বিরত থাকুন। সেই সঙ্গে উপত্যকার কোনো স্থানে, এমনকি দক্ষিণেও, প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিযানের এলাকার কাছে আসবেন না।’