আমাদেরকে স্বনির্ভর হতে হবে

বললেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমাদের কাছে এটা পরিষ্কার হতে হবে যে আমরা আর পরনির্ভর হতে চাই না। আমাদেরকে স্বনির্ভর হতে হবে। এখন যেহেতু পরনির্ভর হয়ে আছি। এর থেকে যত দ্রুত সম্ভব বের হওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এর বাইরে আর কোনো কথা নাই।’ গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বৈঠকের বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেন। স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষে প্রণীত মসৃণ উত্তরণ কৌশল বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে বলেন, ‘এজন্য আমাদের অভ্যাস পাল্টাতে হবে। আত্মনির্ভর হতে গেলে বুদ্ধি খাটাতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে, লড়াই করতে হবে। এটা কঠিন হলেও এ কাজে আনন্দ আছে। আমরা যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলি, নতুন বাংলাদেশ মানেই হলো স্বনির্ভর বাংলাদেশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই জাতির যথেষ্ট ক্ষমতা আছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। তারুণ্য ও সৃজনশীলতা আমাদের শক্তি। এই শক্তি আর সুযোগ আমাদের আছে। এটাকে কাজে লাগাতে হবে।

আত্মনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলে জাতিকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে হবে। আমরা আর দাসত্বের মধ্যে থাকতে চাইনা।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তুরস্কের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ : তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী রাষ্ট্রদূত বেরিস একিঞ্চি মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করা এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিখাতে নতুন অংশীদারত্বের সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত একিঞ্চি বলেন, ?‘এটি আমার বাংলাদেশের প্রথম সফর।” তিনি বাংলাদেশের আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা পৌঁছে দেন। একই সঙ্গে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানান। প্রধান উপদেষ্টা তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের সম্পর্ককে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও উচ্চতায় নিতে চাই। জুলাই বিপ্লবের পর এটি এক নতুন সূচনা—দুই দেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তিসহ বহু ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।’

তিনি জুলাই বিপ্লবে আহত সাতজন বাংলাদেশিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করায় তুরস্ক সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী একিঞ্চি বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তুরস্কের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘তুরস্ক সবসময় শিক্ষা উন্নয়নে উৎসাহ দেয় এবং বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বৃত্তি ও বিনিময় কর্মসূচি চালু রেখেছে।’

রাষ্ট্রদূত তালহাকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন : ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির সদস্যপদ লাভের ৫৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শীর্ষ পদে নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের ২২২তম অধিবেশনে ভোটের মাধ্যমে এ নির্বাচন হয়। বাংলাদেশের প্রার্থী ইউনেস্কোতে স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ফ্রান্স, মোনাকো ও আইভরি কোস্টে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা ৩০-২৭ ভোটে জাপানকে পরাজিত করে সভাপতি নির্বাচিত হন। শুরুতে বাংলাদেশ, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া– এই চারটি দেশ প্রার্থিতা ঘোষণা করলেও গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। ইউনেস্কোর ইতিহাসে এই প্রথম বাংলাদেশ সংস্থাটির সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত হয়েছে। খন্দকার এম তালহা আসন্ন সাধারণ সম্মেলনে (এই মাসের শেষে উজবেকিস্তানের সামারকন্দে অনুষ্ঠিত হবে) রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত সিমোনা মিরেলা মিকুলেস্কুর স্থলাভিষিক্ত হবেন। বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক অর্জনে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস একে ‘বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক অর্জন’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য এক গর্বের মুহূর্ত।’ তিনি সফল প্রচারণার নেতৃত্বে দেওয়ায় শিক্ষা এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা এবং স্থায়ী মিশনের ভূমিকার প্রশংসা করেন। শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, ইউনেস্কোর সর্বোচ্চ পদে এই নির্বাচন বাংলাদেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কলা ক্ষেত্রে অবদানের প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেবে– এটি এক বিরল সম্মান। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, সাম্প্রতিক ইউনেস্কো অধিবেশনগুলোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। এই নতুন দায়িত্ব বিশ্বমঞ্চে আমাদের শিল্প, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রাণচাঞ্চল্য তুলে ধরার সুযোগ এনে দেবে। ২০২১ সালে ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা নির্বাহী বোর্ড সদস্যদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এটি আমাদের দেশের জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন। আমি ইউনেস্কোর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।