গুমের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল ন্যায়বিচারের পথে অগ্রগতি

বলল এইচআরডব্লিউ

প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

গুম করা, গোপনে বন্দি রাখা ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগে বাংলাদেশে ২৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একইসঙ্গে বহু প্রতীক্ষার পর ন্যায়বিচারের পথে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে বলেও মনে করে সংস্থাটি। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরপরই গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ প্রতিবেদনে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

প্রতিবেদনের শুরুতে ২০১৭ সালে এইচআরডব্লিউ প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়। বাংলাদেশে গোপনে আটক রাখা ও গুম করা নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছিল উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সেই প্রতিবেদনকে ‘অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বেশির ভাগ ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তি সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, তারা গ্রেপ্তারের হাত থেকে পালিয়ে বেড়ানো অপরাধী, ঋণখেলাপি কিংবা প্রতারক।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি জানান, ওই সময় তার জোর দাবির কারণে আসাদুজ্জামান তদন্তের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত কোনো তদন্ত হয়নি। এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকার ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা আরও শক্তিশালী হয়। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন আসাদুজ্জামান খান। বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও বাক্স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ সম্পর্কে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার সাধারণত সেগুলো অস্বীকার করত বা মিথ্যা আশ্বাস দিত।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, টানা তিন সপ্তাহ তীব্র বিক্ষোভের পর হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। আন্দোলনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন প্রাণ হারান। হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। সরকারের উদ্যোগে একটি গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। সেখানে কমপক্ষে ১ হাজার ৮৫০টি অভিযোগ জমা পড়ে।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলির লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতে অভিযোগগুলো ঘোষণা করার সময় সেখানে উপস্থিত থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমানও ছিলেন। যেসব ব্যক্তি গুম ও গোপনে আটকে রাখা ঘটনাগুলো এইচআরডব্লিউ নথিভুক্ত করেছিলেন, তাদেরই একজন তিনি। ২০১৬ সালে নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি একটি চিঠিতে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকার কথা জানিয়েছিলেন। পরে তাকে একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার গোপন বন্দিশালায় আট বছর আটকে রাখা হয়। হাসিনা সরকারের পতনের পরই তিনি মুক্তি পান।

প্রতিবেদনে মীনাক্ষী জানান, ২০১৬ সালে নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে মীর আহমেদ বিন কাসেম তাকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ‘শঙ্কিত’ থাকার কথা জানিয়েছিলেন। তাকে একটি গোপন সামরিক গোয়েন্দা আটক কেন্দ্রে আট বছর ধরে আটক রাখা হয়েছিল এবং হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি মুক্তি পান।

প্রতিবেদনের একেবারে শেষে এসে মীনাক্ষী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করা হবে। তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো এখনও থেকে গেছে।’