পিআরসহ পাঁচ দাবিতে অনড় ইসলামি দলগুলো
* জাতির মতামত না নিয়ে পিআরকে পাশ কাটানোর সুযোগ নেই : গোলাম পরওয়ার * ইসলামি শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন জরুরি: চরমোনাই পীর
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী দলগুলো। গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকা, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও বরিশালসহ জেলায় জেলায় মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
রাজধানীতে গণমিছিল করে জামায়াতসহ বিভিন্ন ইসলামী দল। গণমিছিলে নেতারা বলেন, ‘পিআর নিয়ে জনগণকে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। অথচ দেশের অধিকাংশ মানুষ পিআরের পক্ষে। আর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে টালবাহানাও জনগণ মেনে নেবে না।’ তারা ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের শরিকদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে গণমিছিল করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মিছিলটি কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। তার আগে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন জুলাই সনদের ভিত্তিতেই হতে হবে। এটি বাস্তবায়নে গণভোট দিতে হবে। সেখানে পিআরের বিষয়টিও থাকবে। জাতির মতামত না নিয়ে পিআরকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’
সমাবেশ থেকে দলের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘জনগণ যদি পিআর- এর পক্ষে মত দেয় সব দলকে সেটা মানতে হবে। যদি অধিকাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতি না মানে আমরা জামায়াতে ইসলামী সেই প্রস্তাব মেনে নেবো। কিন্তু জাতির মতামত না নিয়ে পিআরকে উপেক্ষা করা যাবে না।’
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে, ঐকমত্য কমিশনের কাছে বলব জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে আপনারা পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে একমত হয়ে জাতির আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করুন।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘কোনো বিজ্ঞ-ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনীতিবিদের কোনো কর্মসূচি, কোনো পদ্ধতির ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার আছে। কিন্তু দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলের ঘোষিত কর্মসূচির এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার কোনো অধিকার নেই।’
গোলাম পরওয়ারের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে কোথাও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘ওসি, ডিসি, ইউএনও, সচিবালয়ের কর্মকর্তা এবং আমলা যারা আছেন, ইভেন আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে অনেকের ভূমিকা এখনো জাতির সামনে প্রশ্নবিদ্ধ। কোনো বিশেষ দলের প্রতি দুর্বল হয়ে, কারও চাপে মাথানত করে প্রশাসনে কোনো দলের পছন্দের লোককে বেছে বেছে পদায়ন করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। ‘এগুলো বন্ধ করে নির্বাচনের মাঠকে সমান সমতল করতে হবে। প্রত্যেকটি ছোটবড় দল যেন নির্বাচনের সমান রাজনৈতিক, সাংবিধানিক, নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত সকল সুযোগ অবাধে সমানভাবে ভোগ করতে পারে।’
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘একদিকে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেমন সরকারের প্রধান, অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেরও প্রধান। দুইটি প্রধান দায়িত্ব নিয়ে আপনি শক্ত থাকবেন। আপনার চারিদিকে কিছু উপদেষ্টাগণ আছেন (যারা) মাঝে মাঝে কোনোদিকে আপনাকে ঠেলে দিয়ে কোনো একটি বিশেষ দলের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা এই দৃশ্য আর দেখতে চাই না।’
একই দাবিতে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে গণমিছিল বের করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম ও মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। জুমার পর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের আমির মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা করবে, তারাই বাহাত্তরের বাকশালী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত হবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি আগামীর বাংলাদেশ বাঁচা-মরার এবং শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রশ্ন। এখন এ গণদাবি বাস্তবায়ন না করতে পারায় সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত।’ মামুনুল হক দাবি আদায়ে আগামী ১২ অক্টোবর সারা দেশের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই দাবিতে জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে গণমিছির বের করে খেলাফত মজলিস। এতে নেতৃত্ব দেন নায়েবে আমির আহমাদ আলী কাসেমী ও মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আব্দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।
এদিকে শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘শ্রমিকবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। বর্তমানে দেশে ইসলামকে ক্ষমতায় আনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন জরুরি।’
সমাবেশে ঢাকা ও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সুষ্ঠু প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই পদ্ধতিতে হতে হবে। কারণ বর্তমান নির্বাচনী পদ্ধতিতে জনগণের প্রকৃত মতামত সংসদে প্রতিফলিত হয় না। এতে জাতীয় রাজনীতিতে বৈষম্য, অস্থিরতা ও অন্যায় প্রভাব দেখা দেয়। শ্রমিকরাও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। আর মালিকরা আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হন।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটের অনুপাতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসন বণ্টনই গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতি। এতে ভোটের মূল্য সংরক্ষিত থাকবে, ছোট ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোও প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পাবে এবং জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি উল্লেখ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই পিআর পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এখন সময় এসেছে এই দাবিকে জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্মে রূপ দেওয়ার। তিনি অবিলম্বে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
