পাক-আফগান সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলি, নিহত ৩০০

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বেশ কিছু দিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই প্রতিবেশী পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে। অবশেষে সেটি সীমান্তে ভয়াবহ সংঘাতে রুপ নিয়েছে। গত শনিবার রাতের আকস্মিক হামলা-পাল্টা হামলায় দুই প্রতিবেশী দেশের মাঝে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দুই প্রতিবেশীর মাঝে এবারের এই সংঘাতকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন করে এই সংঘাতের জন্য উভয় দেশই পরস্পরকে দোষারোপ করছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখার (আইএসপিআর) বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, সীমান্তজুড়ে সংঘটিত সংঘর্ষে দুইশ জনেরও বেশি তালেবান এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে, পাকিস্তানের ২৩ জন সেনাসদস্য নিহত এবং আরও ২৯ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ইসলামাবাদ।

বিশ্বস্ত গোয়েন্দা এবং ক্ষয়ক্ষতি যাচাইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে আইএসপিআর জানিয়েছে, সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহতদের সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি। তারা আরও যোগ করেছে, সীমান্তের অঞ্চলজুড়েই তালেবানের চৌকি, ক্যাম্প, সদর দপ্তর এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এর আগে আফগানিস্তান দাবি করেছিল, তারা এই সংঘর্ষে পাকিস্তানের ৫৮ জন সেনাকে হত্যা করেছে। আইএসপিআর নিশ্চিত করেছে, আফগানিস্তান সীমান্তের সঙ্গে রাতের সংঘর্ষে তাদের ২৩ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, ২৯ জন সেনাসদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।

আফগান সীমান্তের ১৯ পোস্ট দখলের দাবি পাকিস্তানের : পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাতে বিনা উসকানিতেই আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। জবাবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সীমান্ত তল্লাশি চৌকি ও সন্ত্রাসীদের অবস্থান লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। দুই দেশের সীমান্তের আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, কুররম, দীর, চিত্রাল ও বাহরাম চাহ এলাকায় রাতভর ব্যাপক সংঘাত হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কামানের গোলা, ট্যাংক ও ড্রোন ব্যবহার করে আফগানিস্তানের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। একই সময়ে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর ১৯টি সীমান্ত চৌকি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।

সূত্রগুলো আরও জানায়, ‘এসব সীমান্ত পোস্টগুলোতে অবস্থান করা আফগান তালেবান সদস্যরা নিহত হয়েছে এবং বাকিরা পালিয়ে গেছে। কিছু পোস্টে আগুনও ধরে যায়।’ নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে রেডিও পাকিস্তান জানায়, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তালেবানের মানোজবা ক্যাম্প ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর, জান্দুসার পোস্ট, তুর্কমেনজাই ক্যাম্প ও খারচার ফোর্ট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে।’ এতে আরও বলা হয়, ‘আফগান তালেবানদের দিক থেকে গুলিবর্ষণের উদ্দেশ্য ছিল খারেজি গোষ্ঠীগুলোকে পাকিস্তান সীমান্তে প্রবেশ করানো। তবে পাকিস্তানি সেনারা সতর্ক ও প্রস্তুত থাকায় দ্রুত ও জোরালোভাবে জবাব দেওয়া হয়।’ তাদের ভাষ্য, অভিযানে ‘ডজনখানেক আফগান সেনা ও খারেজি’ নিহত হয়েছে এবং ‘তালেবান বেশ কিছু পোস্ট ছেড়ে এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে’।

এদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার (তিনি একইসঙ্গে উপ-প্রধানমন্ত্রীও) আফগান তালেবান সরকারের কাছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি তালেবান সরকার সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেবে, যারা পাক-আফগান সম্পর্ককে নষ্ট করতে চায়।’ ইশাক দার বলেন, পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষা মূলক প্রতিক্রিয়া ‘শান্তিকামী আফগান বেসামরিক জনগণের দিকে লক্ষ্য করে নয়।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান তার নিজস্ব ভূখণ্ড, সার্বভৌমত্ব এবং জনগণকে রক্ষা করার জন্য সব ধরনের সম্ভাব্য ব্যবস্থা নেবে।’

পাকিস্তানের ৫৮ সেনা হত্যা ও ২৫ সীমান্ত পোস্ট দখলের দাবি তালেবানের : শনিবার রাতের সংঘাতে পাকিস্তান সেনবাহিনীর ২৫টি সীমান্ত পোস্ট দখল এবং ৫৮ জন সেনাকে হত্যার দাবি করেছে আফগানিস্তান। কাবুলে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এ তথ্য জানিয়েছেন। এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ২৫টি সীমান্ত পোস্ট থেকে পাক সেনাদের হটিয়ে দিয়েছে আফগান সেনাবাহিনী। সংঘাতের সময় আফগান সেনাদের বন্দুক ও গোলা হামলায় এসব সীমান্ত পোস্টের কমপক্ষে ৫৮ জন সেনা নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। পাকিস্তান যদি ফের আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে, তাহলে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।

এর আগে, পাকিস্তান গত বৃহস্পতিবার আফগান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে, তাদের সীমান্তের ভেতরে একটি বাজারে বোমা হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে তালেবান সরকার। পরে নিজেদের হামলাকে তারা ‘প্রতিশোধমূলক অভিযান’ বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেছেন, আফগান হামলাগুলো ‘বিনা উস্কানিতে’ করা হয়েছিল এবং বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি চালানো হয়েছিল। নাকভী সতর্ক করেছিলেন যে, তার দেশের বাহিনী ‘প্রতিটি ইটের বিনিময়ে একটি পাথর’ দিয়ে পাল্টা জবাব দেবে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, কাবুল তার মাটিতে পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে। যদিও এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে তালেবান সরকার। আফগান ও পাকিস্তান উভয় পক্ষই কুনার-কুররাম অঞ্চলে ছোট অস্ত্র ও কামান ব্যবহার করেছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে। তালেবানদের হামলার ‘তীব্র নিন্দা’ জানিয়ে নাকভি বলেন, বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর আফগান বাহিনীর গুলিবর্ষণ আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকভি বলেছেন, আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে। পাকিস্তানের মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের একজন সামরিক মুখপাত্র। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সেখানকার একটি নিরাপত্তা সূত্র বিবিসির কাছে দাবি করেছে, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের বেশ কয়েকটি স্থানে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। এসব স্থানের মধ্যে রয়েছে আঙ্গুর আড্ডা, বাজাউর, কুররাম, দির, চিত্রল এবং বারামচা। কুররাম জেলার জিরো পয়েন্টে কর্মরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় রাত বারোটা নাগাদ আফগানিস্তানের দিক থেকে ভারী অস্ত্রের মাধ্যমে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। সীমান্তের একাধিক স্থান থেকে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

সংঘর্ষের পর আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা পাকিস্তানের : পাকিস্তান ও আফগান বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের পর গতকাল রোববার সীমান্তপথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান। সীমান্ত বন্ধের বিষয়ে কাবুল তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই জানিয়েছে, তাদের সামরিক অভিযান স্থানীয় সময় শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধান দুই সীমান্তপথ- তোরখাম ও চামান আজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছোট তিনটি সীমান্ত পারাপারের পথ-খারলাচি, আঙ্গুর আড্ডা ও গুলাম খান বন্ধ করা হয়েছে।

রোববার তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘আফগানিস্তানের কোনো অংশেই এখন কোনো ধরনের নিরাপত্তাহুমকি নেই।’ স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রায় ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার (১ হাজার ৬০০ মাইল) দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে, যারা ভারতের সহায়তায় পাকিস্তানে হামলা চালান। তবে কাবুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কাবুলের তরফে পাকিস্তানের যে বিমান হামলার কথা বলা হচ্ছে, সেটি ইসলামাবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার কাবুলে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) এক নেতাকে লক্ষ্য করে ওই বিমান হামলা চালানো হয়। তিনি নিহত হয়েছেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। টিটিপি পাকিস্তানে সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি ইসলামপন্থী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সংগঠনটির সঙ্গে আফগান তালেবানের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

পাকিস্তান সীমান্তে ট্যাংক-অস্ত্র নিচ্ছে আফগানিস্তান : পাকিস্তান সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ট্যাংক ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করছে আফগানিস্তান। দেশটির সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর ভারী যুদ্ধাস্ত্র ও ট্যাংক পাকিস্তান সীমান্তের দিকে যাচ্ছে। পাকিস্তানের নিষিদ্ধ গোষ্ঠী সন্ত্রাসী দল তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তানের নেতাদের (টিটিপি) আশ্রয়-প্রশ্রয় ও সহায়তা প্রদানের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। ওই হামলায় টিটিপি প্রধান নূর ওয়ালি মেসুদ নিহত হয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে ক্বারী সাইফুল্লাহ মেসুদসহ তার কয়েকজন সহযোগীও প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাইফুল্লাহ মেসুদকে টিটিপির পরবর্তী প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার এই হামলায় নিহত ও আহতদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। তবে শুক্রবার দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।

সৌদি আরব ও কাতারের অনুরোধে হামলা বন্ধ করা হয়েছে- আফগানিস্তান : কাতার এবং সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংঘাত বন্ধ হয়েছে। আফগানিস্তানের ইসলামিক এমিরেটস-এর মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ নিশ্চিত করেছেন, এই দুই দেশের অনুরোধে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানটি স্থগিত করেছে। এর আগে, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার জবাবে ডুরান্ড লাইন বরাবর আফগান বাহিনী পাল্টা অভিযান চালায়। এই উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তান আফগানিস্তানে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসলামিক এমিরেটস সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় আইএসআইএস-কে এর উপস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, আফগানিস্তানে পরাজিত হওয়ার পর গোষ্ঠীটি সেখানে ঘাঁটি গেড়েছে এবং ইরান ও মস্কোর সাম্প্রতিক হামলাগুলো সেখান থেকেই পরিচালিত হয়েছে। তিনি পাকিস্তান সরকারের কাছে আইএসআইএস-কে এর প্রধান সদস্যদের হস্তান্তরেরও দাবি জানান। তবে, আপাতত দুই দেশের মধ্যস্থতায় সংঘাত বন্ধ হওয়ায় সীমান্ত এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে। যদিও জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বের যেকোনো লঙ্ঘন বিনা জবাবে পার পাবে না।

সৌদি আরব ও আফগানিস্তানকে কোনো ছাড় নয়, হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর : পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে আফগানিস্তানকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। একই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা থেকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। প্রত্যেক উস্কানি এবং আফগানিস্তানের আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে কঠোর এবং কার্যকর উপায়ে। তিনি আরও বলেছেন, আমাদের সেনাদের পেশাদারিত্ব নিয়ে আমরা গর্বিত। পাক সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শুধু কঠোর জবাবই দেয়নি, তারা ফিল্ডমার্শাল অসীম মুনিরের নেতৃত্বে তাদের কয়েকটি সামরিক পোস্টও ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

ভারতের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের আফগানিস্তান মদদ দিচ্ছে দাবি করে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আফগানিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের সহায়তা করছে। আফগান অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে তাদের মাটি ব্যবহার করে যেন কোনো সন্ত্রাসী হামলা না হয়।

আফগানিস্তানকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি : প্রতিবেশী আফগানিস্তানকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফ। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান যদি কট্টরপন্থি সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে মদত দেওয়া বন্ধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হবে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আফগানিস্তানের সঙ্গে কখনও আমাদের আদর্শ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক ছিল না এবং এর দায় আমাদের নয়। একজন ভালো প্রতিবেশীর মতো পাকিস্তান বরাবর আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছে; কিন্তু আফগানিস্তান সব সময় পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ উসকে দিতে চেয়েছে এবং নিজেদের ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গ করে তুলেছে। আমরা সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আফগানিস্তানের সহযোগিতা চাই। কাবুল যদি সহযোগিতা করে, তাহলে ভালো; যদি তা না করে- তাহলে বর্তমানে যা আছে, তার চেয়েও খারাপ হবে দুই দেশের সম্পর্ক।’

খাজা আসিফ এই বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত এলাকায় ব্যাপক সংঘাত হয় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অভিযোগ, আফগান সেনাবাহিনী ‘বিনা উসকানিতে’ সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তানের ওপর হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের বক্তব্য, গত বৃহস্পতিবার কাবুলে বিমান হামলা চালানোর মাধ্যমে আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। তার জবাব দিতেই সীমান্তে হামলা চালিয়েছে আফগান সেনাবাহিনী।